‘হেঁটে হেঁটে চা বেচি, শরীর-মন দুটোই ভালো থাকে’

সাইফুল ইসলাম রাজ
সাইফুল ইসলাম রাজ সাইফুল ইসলাম রাজ , সহ-সম্পাদক
প্রকাশিত: ০৯:০৮ পিএম, ১০ সেপ্টেম্বর ২০২১

‘মামা, চা লাগবো? এক কাপ দেই? খেয়ে মজা পাবেন। দেবো মামা, এক কাপ চা’—এভাবেই কথাগুলো বলছিলেন চান মিয়া। অনিচ্ছা সত্ত্বেও বারবার অনুরোধে এক কাপ চা নিতে হলো। স্বাদটা মন্দ না। চায়ে চুমুক দিতে দিতেই জমছিল আলাপ। জানা গেলো ভ্রাম্যমাণ চা-বিক্রেতা চান মিয়ার জীবনের গল্প।

রাজধানীর ভাটারার নূরেরচালা বোটঘাট এলাকায় চা বেচেন চান মিয়া। মধ্যবয়সী এই জীবনসংগ্রামী থাকেন পাশেই বড়ইতলা এলাকায়। গ্রামের বাড়ি ময়মনসিংহে। ছয় বছর আগে ঢাকায় এসেছেন।

সংসারে স্ত্রীসহ তিন ছেলে রয়েছে। তিন ছেলের একজনের মুরগির দোকান রয়েছে। আরেকজন বসেন মুদি দোকানে। ছোট ছেলে লেখাপড়া করছেন। তিনিও মাঝেমধ্যে দোকানে বসেন। তবে চান মিয়ার বেশিরভাগ সময় কাটে হেঁটে হেঁটে চা বিক্রি করে।

jagonews24

চান মিয়া জাগো নিউজকে বলেন, দোকানে বসে থাকতে ভালো লাগে না। তাই হেঁটে হেঁটে চা বেচি। এতে আমার শরীর-মন দুটোই ভালো থাকে।

তিনি বলেন, আমার চায়ের কদর আছে। পুলিশ থেকে শুরু করে সবাই আমার চা পছন্দ করেন। এজন্য বেচাবিক্রিও ভালো।

প্রতিদিন ২০০ কাপ চা বিক্রি করেন ভ্রাম্যমাণ এ বিক্রেতা। ফ্লাক্সে ৫০ কাপ ধরে। প্রতিদিন চার ফ্লাক্স চা বিক্রি হয় তার। আর প্রতি কাপ চা রাখেন পাঁচ টাকায়। সে হিসাবে প্রতিদিন বিক্রি হয় ১০০০ টাকার। এতে সামান্য খরচ বাদে বেশিরভাগ অংশই পকেটে থেকে যায়।

jagonews24

চান মিয়া জানান, একসঙ্গে ১০০০ পিস ওয়ান-টাইম কাপ কিনতে খরচ হয় ৪০০ টাকা। আর ১০০ পিস নিলে ৬০ টাকা গুনতে হয়। অর্থাৎ প্রতি কাপের গড়পড়তা দাম পড়ে ৪০ থেকে ৬০ পয়সা। এক ফ্লাক্স চা তৈরিতে লাগে আধাকেজি চিনি। এর সঙ্গে দেন লবঙ্গ, আদা, লেবু। এসব খরচ বাদে ৫০০-৬০০ টাকা পকেটে (লাভ) থেকে যায়।

চান মিয়ার সঙ্গে যখন আলাপ হচ্ছিল তখন দুপুর প্রায় ১টা। সেসময় পর্যন্ত তিনি এক ফ্লাক্স চা বিক্রি শেষে আরেকটি ফ্লাক্স নিয়ে বসেছেন। তিনি যে জায়গায় চা বিক্রি করছিলেন ওই জায়গাটা অনেকটা ফাঁকা। কিছু উঁচু ভবনের মাঝের জায়গাটা শিশু-কিশোরদের আড্ডাস্থল। মাঝে মধ্যে খেলাধুলাও করে তারা। চান মিয়া বলেন, জায়গাটা জমজমাট থাকে, তাই এখানে প্রায়ই আসি। দ্রুত চা শেষ হয়ে যায়।

চান মিয়ার সঙ্গে আলাপ শেষে আরও এক কাপ চা নিতে ইচ্ছে হলো, ‘মামা, আরও এক কাপ দেন।’ পাশে তিন বছরের ফাহিম আবরার সামিনকে দেখে চান মিয়া হাসেন। যেন বুঝে ফেলেন, এই কাপ চা ওর জন্যই।

এসআর/এইচএ/এএসএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।