উন্নয়নের নামে গাছ কাটা-পাখি হত্যা দূরদর্শিতার অভাব

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক
জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ০৪:১৬ পিএম, ০৯ সেপ্টেম্বর ২০২১

শামুকখোল পাখি। নদী-বিলেই তাদের খাবার মেলে। খাবার শেষে গাছ-গাছালিতে আশ্রয় নেয়। আশ্রয় থেকে সে গাছেই বাসা বাঁধে, বাচ্চা ফোটায়। প্রাণ-প্রকৃতির ছন্দ ঠিক এমনিই। অথচ এ ছন্দে পতন ঘটাতে যেন মরিয়া মানুষ।

উন্নয়নের নামে অত্যন্ত নির্মমভাবে ধ্বংস করা হচ্ছে প্রকৃতি। নদী-খাল, বন-পাহাড় কিছুই রক্ষা পাচ্ছে না কথিত মানবের উন্নয়নে। সভ্যতার এ সময়ে এমনই এক ধ্বংসলীলা দেখলো রাজশাহীবাসী।

গত ৪ সেপ্টেম্বর রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ড্রেনেজ প্রকল্পের জন্য গাছ কাটা হয়। ওই গাছে থাকা শতাধিক শামুকখোল পাখির বাচ্চা মারা যায়। এ ঘটনা পরিবেশবাদীদের রীতিমতো অবাক করেছে। আন্দোলনও হচ্ছে রাজশাহীতে। পাখি হত্যার প্রসঙ্গ নিয়ে প্রতিক্রিয়া জানতে চাওয়া হয় বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতির (বেলা) প্রধান নির্বাহী সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান এবং বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) রাজশাহী শাখার সভাপতি ও রাজশাহী রক্ষা সংগ্রাম পরিষদের সাধারণ সম্পাদক জামাত খানের কাছে।

সৈয়দা রিজওয়না হাসান বলেন, ‘এটি কি আজকের পৃথিবীতে হওয়া উচিত ছিল! আমরা সভ্যতার যে পর্যায়ে আছি, সেখানে কী এমন ঘটনা মেনে নেয়া যায়! আমি পত্রিকায় দেখেছি, যে প্রতিষ্ঠান গাছ কাটার নামে এতগুলো পাখি হত্যা করলো, সেই প্রতিষ্ঠানের পরিচালক দুঃখ প্রকাশ করেছেন। কিন্তু তার এই দুঃখ প্রকাশের মধ্য দিয়ে তো পাখিগুলোর জীবন ফিরিয়ে আনতে পারবো না।’

এই পরিবেশবাদী নেত্রী বলেন, ‘যে কাজের জন্য গাছগুলো কাটা হয়েছে, সেই কাজ কি পাখিগুলোকে বাঁচিয়ে করা যেত না? আধুনিক স্থাপত্যশৈলীর প্রধানতম নিদর্শন হচ্ছে পরিবেশ-প্রতিবেশ বাঁচিয়ে উন্নয়ন করা।’

‘উন্নয়ন করতে হবে, অতএব গাছ কেটে ফেল! তাতে কী হয়, হোক। কোনো প্রকার সংবেদনশীলতা কাজ করে না। আজ পাখিগুলো মারা গেছে বলে পত্রিকায় খবর হয়েছে। পাখিগুলো মারা না গেলে শুধু গাছ কাটার প্রসঙ্গ নিয়ে হয়তো খবর হতো না।’

তিনি বলেন, ‘যখন কোনো প্রকল্পের অনুমোদন দেয়া হয়, তখন কেন এমনটি বলা হয় না বা প্রস্তাবনা দেয়া হয় না যে, যতটা সম্ভব প্রকৃতিকে রক্ষা করে করতে হবে। উন্নয়নের নামে গাছ কাটা-পাখি হত্যা দূরদর্শিতার অভাব বলে মনে করি।’

বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) রাজশাহী শাখার সভাপতি জামাত খান প্রতিক্রিয়ায় বলেন, ‘যে উন্নয়ন জীব-জানোয়ারদের হত্যা করে, তা মানুষের কাজে আসে না। এই উন্নয়ন কোনো পরিকল্পিত উন্নয়ন নয়। উন্নয়ন মানেই মানুষের জন্য। আপনি প্রকৃতি বাদ রেখে মানুষের বেঁচে থাকা কল্পনা করতে পারেন না।’

জামাত খান বলেন, রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ড্রেনেজ প্রকল্পের নামে অর্জুন গাছ কেটে ফেলা হলো। এ অর্জুন গাছ প্রাণ-প্রকৃতির জন্য অত্যন্ত দামি বলে প্রমাণিত। অথচ নির্বিচারে সেই গাছ কাটা হলো। শামুকখোল পাখি হত্যা করা হলো। এ পাখি রক্ষায় পরিবেশবাদীরা আন্দোলন করে আসছেন।’

তিনি আরও বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী বারবার বলছেন, প্রকৃতির ক্ষতি করে, গাছ কেটে উন্নয়ন করা যাবে না। অথচ গাছ তো কাটাই হলো, সঙ্গে শতাধিক পাখিও হত্যা করা হলো। এটি আমরা পরিকল্পি হত্যাকাণ্ড বলবো। আমরা এর নিন্দা জানিয়ে বিচার দাবি করেছি। সুষ্ঠু তদন্ত সাপেক্ষে এ অপরাধের বিচার না হলে আমরা বৃহত্তর আন্দোলনে নামবো।’

এএসএস/ইএ/জেআইএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।