চট্টগ্রামে করোনার নতুন ভ্যারিয়েন্ট আসার সম্ভাবনা কম: গবেষণা
স্পাইক প্রোটিনের মিউটেশনের কারণে করোনাভাইরাস (কোভিড-১৯) বারবার রূপ পরিবর্তন করে। চীনের উহানে প্রথম শনাক্তের পর এ পর্যন্ত ভাইরাসটি বেশ কয়েকবার রূপ পরিবর্তন করেছে। এতে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে করোনা সংক্রমণের ঊর্ধ্বগতি দেখা যায়। তবে চট্টগ্রাম অঞ্চলে ভাইরাসটির মাত্র তিনটি ভ্যারিয়েন্ট পরিলক্ষিত হয়েছে। এগুলো হলো- আলফা, বিটা ও ডেল্টা ভ্যারিয়েন্ট। এই তিন ভ্যারিয়েন্টের বাইরে চট্টগ্রাম অঞ্চলে নতুন কিছু আসার সম্ভাবনা কম।
চট্টগ্রাম ভেটেরিনারি ও অ্যানিমেল সাইন্সেস বিশ্ববিদ্যালয়ের (সিভাসু) উপাচার্য ড. গৌতম বুদ্ধ দাশের নেতৃত্বে পরিচালিত এক গবেষণায় এ তথ্য উঠে এসেছে।
বুধবার (১ সেপ্টেম্বর) তিনি জাগো নিউজকে বলেন, গত বছরের জুন থেকে এ বছরের জুলাই পর্যন্ত ৩০০টি নমুনা গবেষণার আওতায় আনা হয়। ঢাকার ‘ডিএনএ সল্যুশন লিমিটেডে’ এসব নমুনার স্পাইক প্রোটিনের জিনোম সিকোয়েন্স সম্পন্ন করা হয়।
এতে দেখা যায়, ৩০০টি নমুনার মধ্যে ৬৭টির স্পাইক প্রোটিনে মিউটেশন হয়েছে। যার মধ্যে নিউক্লিওটাইডের সিঙ্গেল মিউটেশন হয়েছে ৪৩টি নমুনায় এবং একের অধিক নিউক্লিওটাইডের মিউটেশন হয়েছে ২৪টি নমুনায়।
এসব মিউটেশনের কারণে স্পাইক প্রোটিনের ৪৯টির বিভিন্ন স্থানে এমাইনো এসিডের পরিবর্তন হয়েছে। তবে এর মাধ্যমে স্পাইক প্রোটিনের গঠনের উল্লেখযোগ্য কোনো পরিবর্তন হয়নি। এসব মিউটেশনের স্থান ছিল স্পাইক প্রোটিনের S1 ডোমেইন এবং S1-S2 সাব-ইউনিট লিঙ্কার। এমাইনো এসিডসগুলোর মিউটেশনের উল্লেখযোগ্য স্থানসমূহ হচ্ছে, D614G, D138H, V213L এবং Q506H।
ড. গৌতম বুদ্ধ দাশ বলেন, গবেষণা শেষে বলা যায় নিউক্লিক এসিডের মিউটেশনের কারণে স্পাইক প্রোটিনের গঠনে উল্লেখযোগ্য কোনো পরিবর্তন হয়নি। তাই চট্টগ্রাম অঞ্চলে করোনাভাইরাসের নতুন কোনো ভ্যারিয়েন্টের উপস্থিতি পরিলক্ষিত হয়নি। এ ধরনের মিউটেশন ভ্যাকসিন এবং ভাইরাল ওষুধের কার্যকারিতায় কোনো প্রভাব ফেলবে না।
তিনি আরও বলেন, ভাইরাসের স্পাইক প্রোটিন ও মানব দেহের নির্দিষ্ট রিসেপ্টরের (ACE-2) সংযোগস্থলগুলো শনাক্তের মাধ্যমে এন্টিভাইরাল ড্রাগ ডিজাইন করতে সহায়তা করে। এছাড়াও ভাইরাসের প্রোটিনের নির্দিষ্ট এপিটোপ (ভাইরাসের সংরক্ষিত অংশ যা মানব শরীরে নির্দিষ্ট এন্টিবডির সঙ্গে ক্রিয়া করে) শনাক্তকরণের মাধ্যমে অধিক কার্যকরী ভ্যাকসিন উদ্ভাবনে সহায়তা করতে বিশেষ ভূমিকা রাখে। তাই নিয়মিত স্পাইক প্রোটিনের মিউটেশন বিশ্লেষণ করে অধিক কার্যকরী ভ্যাকসিন এবং এন্টিভাইরাল ড্রাগ উৎপাদন করা সম্ভব যা কোভিড-১৯ প্রতিরোধে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখবে।
গবেষণায় আরও অংশ নেন- অধ্যাপক ড. শারমিন চৌধুরী, সহকারী অধ্যাপক ডা. ইফতেখার আহমেদ রানা, বৈজ্ঞানিক কর্মকতা ডা. ত্রিদীপ দাশ, মলিকুলার বায়োলজিস্ট ডা. প্রনেশ দত্ত, ডা. মো. সিরাজুল ইসলাম ও ডা. তানভীর আহমদ নিজামী।
মিজানুর রহমান/ইউএইচ/এমআরএম/এএসএম