নওগাঁয় পতিত জমিতে খয়ের চাষ
বিলুপ্ত প্রজাতি রক্ষা এবং জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ প্রকল্পে নওগাঁর ধামইরহাট সামাজিক বন বিভাগের বনবিটের আওতায় ৫০ একর পতিত জমিতে বিলুপ্ত খয়ের গাছ রোপণ করা হয়েছে। খয়ের গাছের পাশাপাশি লাগানো হয়েছে বাঁশ। আগামী ১০/১২ বছরের মধ্যে দেশের চাহিদা মিটিয়ে রফতানি করা যাবে বলে জানা গেছে।
একদিকে যেমন বিলুপ্তের হাত থেকে খয়ের গাছ রক্ষা পাবে অন্যদিকে এলাকাবাসীর আর্থিক উন্নয়ন হবে। পাশাপাশি সরকারের রাজস্ব আয়ের পাশাপাশি অনেকের কর্মসংস্থানের সৃষ্টি হবে। এলাকাবাসীর দাবি সরকারের বৃক্ষরোপণ কার্যক্রম যেন অব্যাহত থাকে।
ধামইরহাট বনবিট অফিস সূত্রে জানা গেছে, বনবিট কর্মকর্তা লক্ষণ চন্দ্র ভৌমিক তার অফিসে বিশেষ পদ্ধিতে ২০০৯ সাল থেকে ২০১১-১২ অর্থবছরে প্রায় ৫০ একর জমিতে ৫০ হাজার পানের সঙ্গে খাওয়া খয়ের গাছ তৈরি করেন। তার পরামর্শে উপজেলার বৈদ্যবাটী, ধুরইল, সিলিমপুর, রসুল বিল, চকভট্ট, ভগবানপুর, পশ্চিম চানপুর, উদয়শ্রী, চকনটি, চক-শিমুলতলি গ্রামে সরকারি বে-দখলে থাকা পতিত জমিতে খয়ের গাছের বাগান করা হয়েছে। এসব বাগান সরকারি খরচে লাগানো হয়। মাঝে মধ্যে উপকৃতরা পরিচর্যা করে আসছেন।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, খয়ের গাছ দেখতে কিছুটা বাবলা গাছের মত। ১৫ বছর বয়সি গাছ খয়ের উৎপাদনের জন্য উপযোগী হয়। ভোজন প্রিয় বাঙালির খাবারের সীমাবদ্ধতা নেই। দৈনন্দিন তিন বেলা খাবারের পরে অনেকেই অভ্যাসগত কারণে কিংবা শখের বসে পান খেয়ে থাকেন। আর এ পানকে সুস্বাদু করতে নানান ধরনের মশলার সংমিশ্রণ করা হয়। এর মধ্যে খয়ের হল অন্যতম উপাদান। খয়ের কেবল ঠোঁট লাল করার কাজই ব্যবহার হয় না এর ব্যবহার বহুবিদ। ওষধ হিসেবেও রং তৈরিতে খয়ের ব্যবহার করা হয়ে থাকে।
উপজেলার বৈদ্যবাটী গ্রামের সুবিধাভোগী উলফান বেগম জানান, খয়ের বাগানের শুরু থেকেই দেখাশোনা করছেন। তবে এখন পর্যন্ত কোনো সুফল পাননি। তবে আগামীতে সুফল পাবেন বলে আশা করছেন। এর থেকে যে টাকা পাবেন তা দিয়ে সংসারের উন্নয়ন হবে এবং আর্থিকভাবে স্বচ্ছল হবেন।
সুবিধাভোগী সখি মরমু জানান, সংসারের কাজের পাশাপাশি খয়ের বাগান পরিচর্যার জন্য সময় দেন। এতে পরিবার থেকে কোনো অসুবিধা হয় না। খয়ের বাগান পরিচর্যায় বনবিট কর্মকর্তা বিভিন্নভাবে সহযোগিতা ও পরামর্শ দিয়ে থাকেন।
এছাড়া সুবিধাভোগী বাবলু হোসেন, ধনি মারান্ডি, রমন, আব্দুল খালেক, মোসেব মারান্ডি, লতিকার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, খয়ের গাছ আজ বিলুপ্তির পথে। বিলুপ্তি প্রজাতি রক্ষা এবং জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণে খয়ের গাছ লাগানো হয়েছে। খয়ের গাছের পাশাপাশি দুই বছর আগে বাঁশ লাগানো হয়েছে। খয়ের গাছ থেকে দীর্ঘ সময় হলেও বাঁশ থেকে আগামী দুই বছরের মধ্যে বেশ কিছু অর্থ আয় হবে।
সদস্য আরশাব আলী জানান, জমিগুলো পানি সমস্যার কারণে পতিত অবস্থায় পড়ে ছিল। বনবিট কর্মকর্তা লক্ষণ চন্দ্র ভৌমিক তিন বছর আগে আমাদের ডেকে সহযোগিতা চেয়েছিলেন এখানে খয়ের বাগান করবেন বলে। আগামীতে এর সুফল ভোগ করবো। দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে খয়ের বাগান দেখার জন্য লোকজন আসেন। তারাও খয়ের গাছ লাগাতে চান।
স্থানীয় এলাকাবাসী আব্দুল মালেক জানান, ১০-১২ আগে সরকারি এই জমিগুলো অন্যরা ভোগদখল করত। বন বিভাগের কর্মকর্তারা প্রশাসনের সহযোগিতায় তা দখলমুক্ত করে। পরে সরকারের অর্থায়নে বন বিভাগ থেকে জমিতে খয়ের গাছ রোপণ করা হয়। খয়ের গাছ শতকরা ৯৯ ভাগই বেঁচে আছে।
বৃক্ষরোপণে চারবার প্রধানমন্ত্রীর হাত থেকে প্রথম পুরষ্কার গ্রহণ করেন বনবিট কর্মকর্তা লক্ষণ চন্দ্র ভৌমিক। তিনি জানান, ধামইরহাট বিটের আওতায় ২০০৯ সাল থেকে ২০১১-১২ অর্থবছরে ব্লক বাগান পদ্ধতিতে প্রায় ৫০ একর পতিত জমিতে বিলুপ্ত প্রজাতির প্রায় ৫০ হাজার খয়ের গাছ রোপণ করেন। এতে ৪৫০ জনের মতো উপকারভোগী আছেন। এটি একটি সফল বাগান।
তিনি জানান, আগামী ৫-৬ বছর পর গাছের ডালপালা ছাঁটাই করে বিশেষ পদ্ধতিতে যে খয়ের উৎপাদন করা হবে এবং তা বিক্রি করে যে আয় হবে তা উপকারভোগীরা পাবেন। দেশে খয়ের যে চাহিদা এখান থেকে যোগান দেয়া সম্ভব হবে। খয়ের উৎপাদন হলে বাইরের দেশ থেকে আর আমদানি করতে হবে না। তিনি আশা করছেন, দেশের চাহিদা মিটিয়ে রফতানিও করা যাবে। এছাড়া ১৫-২০ বছর পর জনপ্রতি সুবিধাভোগী প্রায় ৭-৮ লাখ করে টাকা পাবেন বলে আশা করছেন। এতে সুবিধাভোগীদের আর্থিক উন্নতি হবে।
তিনি আরও জানান, খয়ের বাগান থেকে যে আয় হবে সুবিধাভোগীরা পাবেন ৪৫ শতাংশ, ৪৫ শতাংশ সরকারের রাজস্ব খাতে জমা হবে এবং ১০ শতাংশ বৃক্ষ রোপণের কাজে খরচ করা হবে।
আব্বাস আলী/এসএস/এআরএস/পিআর