হাতির খোরাক জোগাতে হিমশিম খাচ্ছেন মাহুত
সাত বছরের ছোট্ট শিশু আরিফ। ক্ষুদে এই শিশুটি আগে কখনো এত কাছে থেকে হাতি দেখেনি। গুলশান-বাড্ডা লিংক রোড সংলগ্ন লেকের পাড় দিয়ে সোমবার বিকেলে মাহুতের নির্দেশে হেলেদুলে চলা বিশাল আকৃতির হাতিটিকে বিস্ময়ভরা চোখে দেখছিল সে।
ঠিক পাশে দাঁড়ানো সমবয়সী কয়েকটি শিশুদের উদ্দেশ্য করে আরিফ বলছিলো, ‘জানস্, আমি এই হাতিডারে না টিভিতে দেখছি। এইডারে ঘাস দিলে খায়। চল্ দৌড় দিয়া লেকের পাড় থনে ঘাস লইয়া আহি,’- এ কথা বলেই হাতি হাতি বলে দৌড়াতে লাগলো শিশুরা।
বিশাল আকৃতির হাতিটির নাম গোলাপ বাহাদুর। উত্তরবঙ্গ এলাকার একটি সার্কাস দলের সদস্য। রংপুর এলাকার বুলবুল সার্কাস দলের সঙ্গে খেলা দেখাতে বনানীতে আনা হয়েছে তাকে। রাতের শো’য়ের আগে গোলাপ বাহাদুরকে নিয়ে গুলশান লেকে হাওয়া খেতে বের হয়েছিলেন সুজন নামের এক মাহুত।
সার্কাসের প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত এই হাতিটির হাঁটা-চলা, মাহুতের নির্দেশে লেকসংলগ্ন বাসা-বাড়ি ও দোকানপাটের সামনে দাঁড়িয়ে পড়া, লম্বা শুঁড় তুলে মানুষকে সালাম দেয়ার ভঙ্গিতে সম্বোধন করা, খুশি হয়ে কেউ বকশিশ দিলে শুঁড় দিয়ে সেটি টেনে তুলে মাহুতের হাতে তুলে দেয়া, রাজকীয় ভঙ্গিতে শুঁড় দিয়ে দুর্বাঘাস পেঁচিয়ে তা মুখের ভেতর দেয়া ইত্যাদি কসরত দেখতে বিকেল চারটার দিকে গুলশান-বাড্ডা লিংক রোডে বহু মানুষের ভিড় জমে যায়।
এ প্র্রতিবেদকের সঙ্গে আলাপকালে জামালপুরের বাসিন্দা বুলবুল সার্কাস দলের সদস্য সুজন মিয়া জানান, তারা গুলশান-বনানী এলাকায় সার্কাস দল নিয়ে এসেছেন। হাতির খোরাক জোগাতে হিমশিম খাচ্ছেন সার্কাস দলের মালিক। আর অতিরিক্ত আয়ের জন্য মালিকের নির্দেশে গোলাপ বাহাদুরকে হাঁটাতে বের হয়েছেন তিনি। হাঁটার ফাঁকে ফাঁকে মানুষের মনোরঞ্জন করে কিছু টাকা বকশিশ নিচ্ছেন।
কত টাকা আয় রোজগার হলো এমন প্রশ্নের জবাবে সুজন হতাশাগ্রস্ত চেহারা নিয়ে বললেন, হাতির খাবার পেছনে প্রতিদিন বহু টাকা খরচ হয় কিন্তু বকশিশ বাবদ পাঁচশ’ টাকাও পাননি।
তিনি জানান, হাতির খাবারের জন্য প্রতিদিন ভুসি, ঘাস, গুড় ও গ্লুকোজ ইত্যাদি বাবদ বিপুল টাকা খরচ হয়। কেবল সার্কাসে খেলা দেখিয়ে মালিকের পোষায়না। তাই হাতিকে রাজপথে নামিয়ে বাড়তি উপার্জনের চেষ্টা করছেন- এ কথা বলতে বলতে গোলাপ বাহাদুরকে নিয়ে পরবর্তী গন্তব্যের পথে ছুটলেন তিনি।
এমইউ/এসএইচএস/আরআইপি