সীমান্তরক্ষীদের চোখ ফাঁকি দিয়ে ইয়াবার সঙ্গে আসছে আইস

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ০১:৪৭ পিএম, ১৮ আগস্ট ২০২১

সীমান্তরক্ষীদের চোখ ফাঁকি দিয়ে ইয়াবার মতো মিয়ানমার থেকে ভয়াবহ মাদক আইস (ক্রিস্টাল মেথ) বাংলাদেশে প্রবেশ করছে। এটি অত্যন্ত ব্যয়বহুল। পাঁচ গ্রাম আইসের বাজারমূল্য প্রায় লাখ টাকা। মোংলা বন্দর অভিমুখী এলপিজি গ্যাস সিলিন্ডার বহন করা একটি বড় ট্রাকের মাধ্যমে চট্টগ্রাম থেকে উদ্ধার মাদক কুমিল্লায় নিয়ে আসে। এরপর প্রাইভেটকারে ঢাকায় আসে।

৫০০ গ্রাম আইস ও ৬৩ হাজার ইয়াবাসহ মিয়ানমার থেকে চট্টগ্রাম হয়ে ঢাকায় প্রবেশ করা এমন একটি চক্রকে বিশেষ অভিযান চালিয়ে গ্রেফতার করেছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের গোয়েন্দা গুলশান বিভাগ। পৃথক অভিযানে গোয়েন্দা মিরপুর বিভাগ ২৫ হাজার পিস ইয়াবাসহ দুজনকে গ্রেফতার করে।

গোয়েন্দা পুলিশ বলছে, আইস মাদকসেবীদের কাছে ক্রিস্টাল মেথ বা ডি মেথ নামে সর্বাধিক পরিচিত। এটি একটি স্নায়ু মাদক। আইস অত্যন্ত ভয়াবহ উত্তেজনাকর ও গুরুতর স্বাস্থ্য ঝুঁকিপূর্ণ ও ব্যয়বহুল। এটি গ্রহণে হরমোন উত্তেজনা স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে বহুগুণ বৃদ্ধি পায়। ফলে শারীরিক ও মানসিকভাবে মারাত্মক ক্ষতির সম্মুখীন হয় মাদকসেবী।

বুধবার (১৮ আগস্ট) দুপুরে ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন ডিবির অতিরিক্ত কমিশনার এ কে এম হাফিজ আক্তার।

গুলশান গোয়েন্দা বিভাগের অভিযানে আইস ও ইয়াবাসহ গ্রেফতার সাতজন হলেন- মো. নাজিম উদ্দিন, মো. আব্বাস উদ্দিন, মো. নাছির উদ্দিন, মোছা. শিউলি আক্তার, মোছা. কোহিনুর বেগম, সানজিত দাস ও মো. হোসেন আলী। এ সময় তাদের কাছ থেকে ৫০০ গ্রাম আইস, ৬৩ হাজার পিস ইয়াবা ও একটি প্রাইভেটকার উদ্ধার করা হয়।

jagonews24

আরেকটি অভিযানে মিরপুর গোয়েন্দা বিভাগের অভিযানে ইয়াবাসহ গ্রেফতার দুজন হলেন মোছা. রাশিদা বেগম ও মোছা. মৌসুমী আক্তার। এ সময় তাদের কাছ থেকে ২৫ হাজার পিস ইয়াবা জব্দ করা হয়।

সংবাদ সম্মেলনে ডিবির অতিরিক্ত কমিশনার এ কে এম হাফিজ আক্তার বলেন, মিয়ানমার থেকে ইয়াবার সঙ্গে অত্যাধুনিক মাদক আইসের (ক্রিস্টাল মেথ) মতো অত্যন্ত ব্যয়বহুল মাদকও চোরাচালান হচ্ছে। এই মাদকটি প্রথমে মিয়ানমার থেকে চট্টগ্রামে আসে। এরপর চট্টগ্রাম থেকে কুমিল্লায় একটি প্রাইভেটকারে আনলোড করে ঢাকায় প্রবেশ করে। ইয়াবার মতো মাদকটি সীমান্তরক্ষীদের চোখ ফাঁকি দিয়ে দেশে প্রবেশ করছে। সীমান্তরক্ষীদের সঙ্গে তথ্য বিনিময় করে গোয়েন্দা পুলিশ মাদকটি প্রবেশে কঠোর হবে।

তিনি বলেন, আইস বিত্তবান ও তাদের বখাটে সন্তানরা নিয়ে থাকে। মূলত সিসা লাউঞ্জে সিসা সেবনকারীরা এসব মাদক নিয়ে থাকেন। আইস অত্যন্ত মারাত্মক উত্তেজনাকর ও ব্যয়বহুল মাদক। এটি গ্রহণে হরমোন উত্তেজনা স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে বহুগুণ বৃদ্ধি পায়। ফলে শারীরিক ও মানসিকভাবে মারাত্মক ক্ষতির সম্মুখীন হয়।

গ্রেফতারদের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানায়, লকডাউনের কারণে অনেক দিন ধরে তাদের মাদক ব্যবসা মন্দা ছিল। লকডাউন শেষে তারা অত্যাধুনিক মাদক আইস ও ইয়াবা ট্যাবলেট কক্সবাজার থেকে কিনে চট্টগ্রাম নিয়ে আসে। মোংলা বন্দর অভিমুখী এলপিজি গ্যাস সিলিন্ডার বহন করা একটি বড় ট্রাকের মাধ্যমে চট্টগ্রাম থেকে উদ্ধার মাদক কুমিল্লায় নিয়ে আসে। এরপর প্রাইভেটকারযোগে এগুলো ঢাকায় প্রবেশ করে।

jagonews24

গ্রেফতার সবার বিরুদ্ধে রাজধানীর যাত্রাবাড়ী ও মোহাম্মদপুর থানায় মামলা হয়েছে। মামলার তদন্ত অব্যাহত রয়েছে বলে জানান তিনি।

এই চক্রটি কতদিন ধরে কাজ করছে এমন প্রশ্নের ডিবি প্রধান বলেন, ইতোমধ্যে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে অনেকবার এই উচ্চবিত্ত মানের মাদকসহ অনেকেই গ্রেফতার হয়েছে। আমরাও এই চক্রটিকে গ্রেফতার করেছি। জিজ্ঞাসাবাদে আমরা জানতে পারব- তারা কতদিন কাজ করে। আর যারা ইয়াবা ব্যবসা করে তারাই আইসের ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত বলে জানান তিনি।

আরেক প্রশ্নের জবাবে ডিবির এই কর্মকর্তা বলেন, আইস খুব অল্প পরিমাণ সেবন করলে অনেক নেশা হয়। তবে অনেক এক্সপেন্সিভ। তাই এটি বাংলাদেশে তেমন দেখা যায় না।

অভিজাত এলাকায় বিক্রির বিষয়ে তিনি বলেন, ধানমন্ডি, গুলশান, বনানী, বসুন্ধরা এসব অভিজাত এলাকায় এই মাদক সেবনের পরিমাণ বেশি। এই মাদকের বিরুদ্ধে আমাদের অভিযান চলমান রয়েছে।

ডিএমপির গোয়েন্দা গুলশান বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার (ডিসি) মশিউর রহমানের সার্বিক দিক-নির্দেশনায় অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার (এডিসি) মাহবুবুল হক সজীবের তত্ত্বাবধানে, গুলশান জোনাল টিমের টিম লিডার সহকারী পুলিশ কমিশনার (এসি) দেবাশীষ কর্মকারের নেতৃত্বে অভিযানটি পরিচালিত হয় বলেও জানান ডিবি প্রধান।

টিটি/এআরএ/জেআইএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।