সংগ্রামী নারীর আখ্যান রাত্রির যাত্রী চলচ্চিত্র

বিনোদন ডেস্ক
বিনোদন ডেস্ক বিনোদন ডেস্ক
প্রকাশিত: ০৭:৩৬ এএম, ১৪ ডিসেম্বর ২০১৫

ঢাকাই ছবিতে নতুন এক মাত্রা যোগ করতে যাচ্ছে নির্মিতব্য চলচ্চিত্র ‌‘রাত্রির যাত্রী’। হাবিবুল ইসলাম হাবিব পরিচালিত এই ছবিতে নায়িকা আছেন, নায়ক আছেন। প্রেম আছে, সে প্রেম ভাঙনের গল্পও আছে। অবশ্য ছবিটার মূল কাহিনি অসম প্রেমে বিচ্ছেদের শিকার এক নারীর শহর ভ্রমণের তিক্ত এবং বৈচিত্রময় অভিজ্ঞতা নিয়েই।

গল্পের মূল চরিত্র এই নারীর নাম ফাতেমা পারভিন ময়না। এ চরিত্রে অভিনয় করছেন প্রিয়দর্শিনী চিত্রনায়িকা মৌসুমী। তিনি গ্রামের এক গরীব ঘরের সহজ-সরল শিক্ষিতা নারী। বাবা নেই, অসুস্থ মাকে নিয়ে তার সংসার। নিজেই উপার্জন করেন। এভাবে তার নিত্যদিনের সংগ্রাম জীবন ও জীবীকার তাগিদে নানা প্রতিকূলতাকে পাশ কাটিয়ে।

মৌসুমী প্রেমে পড়েন প্রতিবেশি এক যুবকের। যার বাবা অর্থ-বিত্ত, সম্মান ও কৌশলে সমাজের মাথা। অভাবী এক মেয়েকে ছেলের পছন্দের বিষয়টি তিনি ভালোভাবে গ্রহণ করেননি। কিন্তু তিনি সরাসরি ছেলের বিরুদ্ধে সমনও জারি করতে পারেননি। চিরাচরিত ক্ষমতার দম্ভে মোহিত প্রেমিকের বাবা আঁটলেন মেয়েকে গ্রাম ছাড়া করার কৌশল।

Ratrir Zatri
সেই কৌশলে বশ হয়েই শহরের উদ্দেশ্যে পাড়ি দেন মৌসুমী। পিছনে পড়ে রইল তার গ্রাম, শৈশব, কৈশোর, যৌবনের হজারো স্মৃতি। সঙ্গী হলো মা আর প্রাণের মানুষ প্রেমিকের বিয়োগ বেদনা।

ঢাকা শহরে আসতে গিয়ে নানা অভিজ্ঞতার মুখোমুখি হন মৌসুমী। আর শহরে পৌঁছে তিনি দেখলেন এ সম্পূর্ণ অচেনা এক স্থান। যেখানে একজন নারী সামান্যতম সহানুভূতিটুকুও আশা করতে পারে না। মৌসুমী তার এক ভাইয়ের বাসায় উঠবেন বলে শহরে এসেছিলেন। কথা ছিলো ভাই তাকে আনতে কমলাপুর যাবেন। কিন্তু মৌসুমীকে নামিয়ে তার ট্রেনটি ফিরে গেলেও দেখা মিলেনা ভাইয়ের। এরইমধ্যে নিজের সঙ্গে থাকা ব্যাগটিও হারিয়ে বসেন তিনি।

মানসিকভাবে বিপর্যস্ত মৌসুমী এবার নিজেকে আবিষ্কার করলেন শতভাগ অসহায় এবং বিপদের শিকার হিসেবে। তিনি অজানাহীন গন্তব্যে পা রাখলেন শহরের বুকে। দিন গিয়ে জ্বলে উঠে রাতের আলো। ঝলমলে সেই আলোয় বেশ রঙিন মনে হয় এই সভ্য নগরীকে। কিন্তু সমস্ত রাতের নানা অভিজ্ঞতায় ক্ষত-বিক্ষত মৌসুমীর উপলব্ধি- এই শহর রঙিন নয়; হতেও পারে না। এখানে মানুষগুলো সব অন্যরকম, অন্যভুবনের। এখানে নারীর জন্য বাঁকে বাঁকে সমস্যা।

Ratrir Zatree 1
কী ছিলো মৌসুমীর রাতে অভিজ্ঞতাগুলো? এ প্রশ্নের জবাবে পরিচালক হাবিবুল ইসলাম হাবিব মুচকি হেসে জাগো নিউজকে বলেন, ‘এটুক সারপ্রাইজ থাকুক দর্শকদের জন্য। তারা এটুকু দেখতেই হলে আসুন। আমি শুধু বলবো গল্প ও চরিত্রের এই নান্দনিক উপস্থাপন আমাদের দর্শকরা খুব কমই দেখেছেন ঢাকার ছবিতে। আমি একজন নারীকে দিয়ে কোটি নারীর কথা বলতে চেয়েছি। নারীর সুখ, দুঃখ, প্রেম, বিরহ আর টিকে থাকার অদম্য লড়াইয়ের আখ্যান এই ‘রাত্রির যাত্রী’। আমি এই আধুনিক সময়টাতে নারীর ক্ষমতায়নের প্রতিবন্ধকতা তুলে ধরেছি। বলতে চেয়েছি যুগ হারালেও আজও থেকে গেছে প্রেম-ভালোবাসায় গরীব-বনেদি যুদ্ধ। আজও রয়ে গেছে নারীর উন্নয়ন ও প্রতিষ্ঠার পথে অনেক বাঁধাই।’

‘রাত্রির যাত্রী’ ছবিটিতে মৌসুমীর প্রেমিক হিসেবে অভিনয় করতে দেখা যাবে আনিসুর রহমান মিলনকে। তার বাবা হিসেবে থাকছেন চলচ্চিত্রের নন্দিত অভিনেতা এটিএম শামসুজ্জামান। শহরে থাকা মৌসুমীর ভাই ও তার স্ত্রীর চরিত্রে অভিনয় করেছেন মারজুক রাসেল ও সোনিয়া হোসেন। আরো রয়েছেন বরেণ্য নির্মাতা সালাউদ্দিন লাভলু, শহিদুল আলম সাচ্চু, অরুণা বিশ্বাস, রেবেকা, শিমুল খান, জিয়া তালুকদার, শিমুল আহমেদ, আনান জামান প্রমুখ।

পরিচালক জানালেন, ছবিটির একটি আইটেম গানে দেখা যাবে সময়ের আলোচিত মডেল ও আইটেম কন্যা নায়লা নাঈমকে। তিনি বলেন, ‘আমার ছবিতে নায়লাকে দর্শকরা সম্পূর্ণ নতুন আঙ্গিকে আবিষ্কার করবেন। তাকে এখানে বাস্তব নায়লার একেবারেই বিপরীত শাড়িতে আটপৌরে বাঙালি নারীর চরিত্রে উপস্থাপন করা হয়েছে।’

সুর-সংগীতে ‘আমি সুন্দরী নারী’ শিরোনামের এই আইটেম গানে কণ্ঠ দিয়েছেন লন্ডন প্রবাসী রুবাইয়াত জাহান। এর সুর করেছেন মুম্বাইয়ের রাজা কাশিফ। গানটি লিখেছেন ছবির পরিচালক হাবিবুল ইসলাম নিজেই। এই প্রথম কোনো বাংলাদেশের চলচ্চিত্রের গান লন্ডনের স্টুডিও থেকে করা হয়েছে বলে জানান পরিচালক। 

Ratrir Zatree 2
ছবির নির্মাতা হাবিব আরো জানান, এরইমধ্যে রাজধানীর ধানমন্ডি ২৭ নম্বর, ধানমন্ডি ৯/এ, মানিক মিয়া এভিনিউ, এফডিসিতে ছবিটির প্রায় নব্বই ভাগ দৃশ্যধারনের কাজ শেষ হয়েছে। বিশেষ করে রাতের দৃশ্য প্রধান এই ছবির সকল রাতের শুটিং সম্পন্ন হয়েছে। আর মাত্র চার থেকে পাঁচ দিন শুটিং হলেই শেষ হবে রাত্রির যাত্রীর শুটিং যাত্রা।

আরো একটি আইটেম গানের মধ্য দিয়ে নতুন করে চলতি মাসেই শুটিং শুরু হবে ছবিটির। গায়িকা লেমিসের কণ্ঠে এই গানে নাচবেন সাদিয়া আফরিন।

নতুন বছরের শুরুতেই ছবিটিকে সেন্সরে জমা দিতে চান পরিচালক। আর এটি মুক্তি দিতে চান কোনো বিশেষ দিন বা উৎসবকে সামনে রেখে। এ প্রসঙ্গে হাবিব জাগো নিউজকে আরো বলেন, ‘ ছবি বানিয়ে পুরস্কার বা কোনো ঘরানার ট্যাগ পেতে চাই না। আমি চাই ছবিটি বিশ্বের সকল বাঙালি হলে গিয়ে দেখুন। এতে আমার ব্যবসায়িক সাফল্য আসবে, নতুন ছবির অনুপ্রেরণা বাড়বে, সামগ্রিক চলচ্চিত্রের মন্দা বাজারে একটু স্বস্তির বৃষ্টি নামবে। কোনোভাবেই আমরা চলচ্চিত্র দিয়ে ব্যবসা করতে পারছি না- এটা মোটেও ভালো খবর নয়। এভাবে চলতে থাকলে এই শিল্পটা টিকিয়ে রাখা কষ্টসাধ্য হয়ে যাবে। সে ভাবনা থেকেই অনেক শ্রম আর সময় নিয়ে এই ছবিটির কাজ করছি। সব শ্রেণির মানুষের বিনোদন এখানে যোগ করার চেষ্টা করেছি। সবাই পাশাপাশি বসে ছবিটা দেখে যেন আনন্দ পান। আর তাই কোনো একটা উপলক্ষকে কেন্দ্র করে ছবিটা মুক্তি দিতে চাই। হতে পারে সেটি ভালোবাসা দিবস, ভাষা দিবস কিংবা ঈদ।’

Ratrir Zatree 3
হাবিব জানালেন, ব্যাংক অব অডিও ভিজ্যুয়াল আর্টসের প্রযোজনায় নির্মিত এই ছবিটির প্রচারণার জন্য মহরতের পর থেকেই দেশব্যাপী অনেক তরুণ-তরুণীরা ‘রাত্রির যাত্রীর সহযাত্রী’ হিসেবে কাজ করে যাচ্ছেন। তারা ফেসবুকসহ নানা মাধ্যমে নানাভাবে ছবির প্রচার করছেন। সবাই মিলে চেষ্টা করছেন একটা ভালো ছবি দিয়ে ঢাকাই ছবির বাজারটাকে কিছুটা হলেও যেন প্রাণ ফিরিয়ে দেয়া যায়।

মৌসুমীর সুনামে ভর করে হাবিবুল ইসলাম হাবিবের রাত্রির যাত্রী তার গন্তব্য খুঁজে নিক সাফল্যের আঙিনায়- শুভকামনা রইল।

এলএ

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।