এখনও স্বাভাবিক হয়নি উপকূলীয় অঞ্চল


প্রকাশিত: ০৩:২০ এএম, ১৫ নভেম্বর ২০১৪

আজ ১৫ নভেম্বর। ২০০৭ সালের এই দিনে প্রলয়ঙ্করী ঘূর্ণিঝড় সিডরে লণ্ডভণ্ড হয়ে যায় উপকূলীয় ৯টি জেলা। সিডরের তাণ্ডবে সেদিন প্রাণ হারায় ৩ সহস্রাধিক মানুষ। ১৪ লাখ ৪৪ হাজার ৬৭৪ জনের কাঁচা ও আধাপাকা ঘরবাড়ি লণ্ডভণ্ড হয়ে যায়। নষ্ট হয় ১৬ লাখ একর জমির ফসল। তাৎক্ষণিক ক্ষতিগ্রস্ত হয় অর্ধকোটি মানুষ। স্বজন হারানোর বেদনায় আজও এ অঞ্চলের মানুষ ডুকরে কেঁদে ওঠে। সিডর আক্রান্ত এলাকা এখনও স্বাভাবিক হয়নি। এখনও অনেক স্থানে ভাঙা ব্রিজ, কালভার্ট নির্মাণ করা হয়নি। বহু স্থানে বিধ্বস্ত সড়ক ও বেড়িবাঁধ সংস্কার বা নির্মাণ করা হয়নি।

খুলনা : সিডরের তাণ্ডবের ৭ বছরেও উপকূলীয় তিন জেলা খুলনা, বাগেরহাট ও সাতক্ষীরায় প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবেলার জন্য প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি নেই। দুর্যোগ-পূর্ব, দুর্যোগকালীন এবং দুর্যোগ-পরবর্তী প্রস্তুতি ও কার্যক্রম খুবই নাজুক এ তিন জেলায়। উপকূলীয় এ তিন জেলায় নেই প্রয়োজনীয়সংখ্যক সাইক্লোন শেল্টার। তাছাড়া সিডর-পরবর্তী পুনর্বাসন কার্যক্রমও চলে অপ্রতুল বরাদ্দে।

বরগুনা : বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ সংস্কার বা নির্মাণ করে বরগুনার মানুষের জান-মালের নিরাপত্তা দেবে সরকার_ এমনটাই দাবি করেছেন উপকূলের বাসিন্দারা। বৃহস্পতিবার সদর উপজেলার গুলিশাখালী এবং পালের বালিয়াতলী এলাকার স্থানীয়রা বলেন, ২০০৭ সালের ১৫ নভেম্বর ঘূর্ণিঝড় সিডরে বেড়িবাঁধ ভেঙে শত শত লোক নিহত হয়। লণ্ডভণ্ড হয়ে যায় হাজার হাজার ঘরবাড়ি। এর পর কোনোভাবে বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ সংস্কার করা হলেও তা আবার বিলীন হয়ে গেছে। কোথাও কোথাও সংস্কারই হয়নি। প্রাকৃতিক দুর্যোগের সময় বাঁধ উপচে পানি ভেতরে ঢুকে লোকালয় তলিয়ে যায়। এতে করে নষ্ট হয়ে যায় হাজার হাজার একর জমির ফসল। তা ছাড়া এখানে নেই প্রয়োজনীয় সাইক্লোন শেল্টার, যার কারণে প্রতিনিয়ত আতঙ্কে থাকে বরগুনার ১০ লাখ মানুষ। তাই এ অঞ্চলের মানুষের দাবি, ত্রাণ বা ভিক্ষা দিয়ে মানুষের ভাগ্যের পরিবর্তন করা যাবে না, এ মুহূর্তে প্রয়োজন বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ সংস্কার করা।

কাঁঠালিয়া (ঝালকাঠি) : সিডরের কথা আজও ভুলতে পারেনি এ উপজেলাবাসী। এখানে সিডরের আঘাতে ২১ জন মারা যায়। বিধ্বস্ত হয় ঘরবাড়ি, স্কুল-কলেজ, মসজিদ, মন্দির, মাদ্রাসাসহ বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, অফিস-আদালত, গাছপালা, রাস্তাঘাট, ব্রিজ-কালভার্ট ও বিদ্যুতের খুঁটি। ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়। উপজেলার সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয় আমুয়া বন্দর। উপজেলার বিধ্বস্ত অসংখ্য ব্রিজ-কালভার্ট, রাস্তাঘাট আজও মেরামত হয়নি। সিডরে কাঁঠালিয়া উপজেলার সদর ইউনিয়নের বড় কাঁঠালিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সামনে খালের ওপর ৭০ মিটার দীর্ঘ সেতুটির সিমেন্টের স্লিপার ধসে যায়। ভাঙা সেতুর ওপর গাছ ফেলে সেখান দিয়ে লোকজন ঝুঁকি নিয়ে কোনোরকমে চলাচল করছে আজও।

শরণখোলা (বাগেরহাট) : সিডরে মৃত্যুপুরীতে পরিণত হয় শরণখোলা। সরকারি হিসাবে সেদিন শরণখোলায় প্রাণহানির সংখ্যা ৭০৯ জন। সেই বিভীষিকাময় দিনটির কথা মনে করে এখনও গুমরে কেঁদে ওঠে শরণখোলার বলেশ্বর পাড়ের স্বজন হারানো মানুষ। পর্যাপ্ত সাইক্লোন শেল্টার আর টেকসই বেড়িবাঁধ না থাকায় এত প্রাণহানি ঘটেছে সেদিন। সিডরের ৭ বছর অতিবাহিত হলেও সে সংকট আজও পূরন হয়নি। জরুরি ভিত্তিতে বেড়িবাঁধের ঢাল রক্ষার জন্য ব্লক বসানো হলেও সেই টেকসই বাঁধ আজও নির্মাণ হয়নি।

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।