সাড়া মেলেনি দূরপাল্লার লঞ্চ চলার খবরে
সকাল সাড়ে ৬টায় সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনালে সস্ত্রীক দাঁড়িয়ে ছিলেন পটুয়াখালীর বাসিন্দা ষাটোর্ধ্ব আফসারুল আমিন। করোনা আক্রান্ত ছেলেকে দেখতে ঢাকায় এসে লকডাউনে আটকা পড়েছিলেন। রাতে লঞ্চ চলাচলের খবর শুনে বাড়ি ফিরে যেতে আজ ভোরেই সদরঘাটে ছুটে আসেন। কিন্তু এসে দেখেন, পটুয়াখালীর কোনো লঞ্চ ছাড়ছে না।
টার্মিনালে বিআইডব্লিউটিএ’র একজন কর্মকর্তা তাকে জানিয়েছেন, গত রাতে মাত্র কয়েকঘণ্টার জন্য লঞ্চ চলাচলের অনুমতি দেয়া হলেও যাত্রী না পাওয়ায় পটুয়াখালী থেকে ঢাকার উদ্দেশ্যে লঞ্চ ছেড়ে আসেনি।
এ প্রতিবেদকের সঙ্গে আলাপকালে আফসারুল আামিন বলেন, ‘বুঝতে পারছি না, লঞ্চ আদৌ আসবে কি না। ঘাটে প্রবেশ করার পরই দেখি টার্মিনাল ফাঁকা। এ অবস্থা দেখে অবাক হয়েছি। এমন সময় টার্মিনালে হাজার হাজার যাত্রী থাকে। কিন্তু আজ খুবই কম মানুষ।’
আফসারুল আমিন একা নন, তার মতো অনেকেই আজ ভোরে ঢাকার বাইরের বিভিন্ন গন্তব্যে যাওয়ার জন্য সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনালে এসে দেখেন, তারা নিয়মিত যেসব লঞ্চে যাতায়াত করেন সেগুলোর কোনোটিই ঘাটে নেই। হাতেগোনা কয়েকটি লঞ্চ বিকল্প উপায়ে বিভিন্ন গন্তব্যে যাওয়ার জন্য যাত্রীদের ডাকাডাকি করছে।
লকডাউনের ১০ম দিন আজ রোববার (১ আগষ্ট) সরেজমিন সদরঘাট টার্মিনাল পরিদর্শনে গিয়ে এমন চিত্র দেখা গেছে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিআইডব্লিউটিএ’র একজন কর্মকর্তা জানান, তার জানা মতে ঢাকার বাইরে চাঁদপুর থেকে সকাল ৬টায় একটি লঞ্চ ছেড়েছে। এছাড়া আর কোনো জেলা থেকে লঞ্চ ছেড়ে আসেনি। তবে ঢাকা থেকে চাঁদপুরসহ কয়েকটি গন্তব্যে লঞ্চ ছেড়ে যাবে।
টার্মিনালে অবস্থানরত কয়েকটি লঞ্চের প্রতিনিধিরা জানান, সরকারের হঠাৎ সিদ্ধান্তের কারণে লঞ্চ মালিকরা ঢাকার বাইরে থেকে লঞ্চ ছাড়েননি। চলমান লকডাউনের কারণে কর্মচারীরাও ছুটিতে রয়েছেন। এছাড়া লঞ্চ ছাড়ার জন্য প্রস্তুতি প্রয়োজন ছিল। আবার স্বল্প সংখ্যক যাত্রী পেলেও খরচ পোষাবে না, এ কারণে লঞ্চ ছাড়েনি।
রফতানিমুখী শিল্পের কর্মীদের রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে যাতায়াত নির্বিঘ্ন করতে চলমান লকডাউনেও মাত্র কয়েকঘণ্টার জন্য খুলে দেয়া হয় গণপরিবহন। এর আগে গতকাল দিনভর স্বল্প আয়ের মানুষ অবর্ণনীয় দুভোর্গ সহ্য করে দ্বিগুণ-তিনগুণ ভাড়া খরচ করে ঢাকা আসেন। এরপর সরকার আজ দুপুর ১২টা পর্যন্ত লঞ্চ ও গণপরিবহন চলাচলের অনুমতি দেয়।
আজ সকাল ৬টা থেকে সাড়ে ৮টা পর্যন্ত রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা সরেজমিন ঘুরে দেখে গেছে, রাস্তাঘাটে বাসসহ বিভিন্ন গণপরিবহন থাকলেও যাত্রী ছিল কম। দুপুর ১২টায় গণপরিবহন ও লঞ্চ চলাচল ফের বন্ধ হবে, এ কারণে বিশেষ প্রয়োজন ছাড়া কেউ বাইরে বের হননি।
এমইউ/এমএইচআর/এমকেএইচ