পায়ে হেঁটে টঙ্গীব্রিজ পার হচ্ছেন হাজারো যাত্রী
কঠোর বিধিনিষেধের মধ্যেই তৈরি পোশাকসহ সব রফতানিমুখী শিল্পকারখানা খোলার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। আগামীকাল রোববার (১ আগস্ট) থেকে চলমান বিধিনিষেধের বাইরে থাকবে রফতানিমুখী শিল্পকারখানা। শুক্রবার (৩০ জুলাই) বিকেলে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে এ বিষয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে।
এমন ঘোষণার পর থেকেই চলমান বিধিনিষেধের মধ্যে শ্রমিকরা দূর-দূরান্ত থেকে কর্মস্থলে ফিরতে শুরু করেছেন। প্রচুর চাপ পড়েছে ঢাকাসহ আশেপাশের এলাকার প্রবেশপথগুলোতে।
শনিবার (৩১ জুলাই) সকাল থেকেই উত্তরবঙ্গসহ ময়মনসিংহ অঞ্চল থেকে পায়ে হেঁটে টঙ্গী সেতু পার হয়ে অসংখ্য মানুষকে রাজধানীতে প্রবেশ করতে দেখা গেছে। এ প্রবেশপথের আগ পর্যন্ত বিভিন্ন এলাকার মানুষ এসেছেন নানা উপায়ে। ভ্যান, অটোরিকশা, মাইক্রোবাস, পণ্যবাহী ট্রাকসহ নানা উপায়ে তারা ফিরছেন কর্মস্থলে।
এদিকে যাত্রী নিয়ে আসা পরিবহনগুলোকে টঙ্গী-জয়দেবপুর-গাজীপুরের চেকপোস্ট থেকে ঘুরিয়ে দিচ্ছে পুলিশ। বেশিরভাগ যাত্রী সেখানে নেমে সপরিবারে ব্যাগ ও অন্যান্য মালামাল নিয়ে কয়েক কিলোমিটার হেঁটে টঙ্গী সেতু পার হচ্ছেন। এরপর আবদুল্লাহপুর, উত্তরা থেকে আবারও নানা যানবাহনে গন্তব্যে যাচ্ছেন তারা।
সরেজমিনে দেখা যায়, এমন দুর্ভোগে কর্মস্থলে ফেরা মানুসগুলো অত্যন্ত ক্লান্ত, বিধ্বস্ত। চলমান বিধিনিষেধে শ্রমিকরা দূর-দূরান্ত থেকে কীভাবে কর্মস্থলে ফিরবেন তার কোনো নির্দেশনা বা সুযোগ না থাকায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।
সিরাজগঞ্জ থেকে আসা শাহাজাহান বলেন, ‘সবসময় সরকার শ্রমিকদের নিয়ে খেলে। প্রতিষ্ঠান খুলে দেয়, কিন্তু শ্রমিকরা কীভাবে আসবে সেই চিন্তা করে না। আমাদের মূল্য নেই। আমরা ফুটবল, শট (লাথি) খাই সবসময়।’
বগুড়ার শিবগঞ্জ থেকে আসা গার্মেন্টসকর্মী মোজাফফর হোসেন বলেন, ‘গার্মেন্টস খুলে দেয়ার সিদ্ধান্ত নিলো, কেন পরিবহন খুলে দেয়া হলো না? আমরা এত কষ্ট করে ঢাকায় ফিরছি, তার মধ্যে ভাড়া দিতে হচ্ছে তিনগুণ। তাও গাজীপুর চৌরাস্তা থেকে হেটে এলাম।’
বেশ কয়েকজন যাত্রী জানান, ঢাকা পর্যন্ত ভাড়া নিলেও বিধিনিষেধ অমান্য করে যাত্রী পরিবহন করা ট্রাক ও পিকআপ চালকরা পুলিশের চেকপোস্টের আগেই যাত্রীদের নামিয়ে দিচ্ছেন। যাত্রীরা চেকপোস্ট ও সেতু পেরিয়ে আবারও অন্য পরিবহনে নতুন করে ভাড়া দিয়ে আবার ট্রাকে, পিকআপে উঠে যে যার গন্তব্যে যাচ্ছেন।
এ ছাড়াও অনেককে প্রাইভেটকার ভাড়া করে ঢাকায় ফিরতে দেখা গেছে। পুলিশি বাধার সম্মুখীন হতে হয়নি তাদের। বেশ স্বাচ্ছন্দ্যে ফিরেছেন তারা। এদিকে, আজ রাজধানীর সড়কে বিভিন্ন অফিসের গাড়িতে কর্মীদের পরিবহন করতে দেখা গেছে।
দিনাজপুর থেকে আসা একটি প্রাইভেটকারের চালক জানান, রাত ১০টায় রওনা দিয়ে ভোর নাগাদ তিনি ঢাকায় পৌঁছেছেন।
তবে এভাবে ঢাকা ফেরা মানুষের সংখ্যা কম। দূরপাল্লার যান বন্ধ থাকায় অধিকাংশই মাইক্রোবাস, প্রাইভেটকার, ট্রাক, পিকআপ, অটোরিকশায় গাদাগাদি করে যে ফিরছেন। কিছু স্থানে গাড়ি ঘুরিয়ে দেয়ায় যাত্রীরা পড়েন বিপাকে। গাড়ি থেকে নেমে ঢাকার দিকে হাঁটা ধরেন তারা। পরে আবার অন্য পরিবহনে গন্তব্যে যাচ্ছেন।
পরিবার নিয়ে নওগাঁ থেকে আসা সুজন বলেন, ‘কাল থেকে অফিস খোলা। তাই চলে আসতে হয়েছে। জনপ্রতি ৮০০ টাকা ভাড়া দিয়ে টাঙ্গাইল পর্যন্ত এসেছি। এরপর ৩০০ টাকা করে জয়দেবপুর চৌরাস্তা পর্যন্ত। সেখান থেকে অটোরিকশা এসেছি টঙ্গী। এর মধ্যে এক জায়গায় পুলিশ গাড়ি আটকে নামিয়ে দিয়েছে।’
এদিকে টঙ্গী সেতুতে যাত্রীবহনকারী কোনো যানবাহন ঢুকতে না দেয়ায় হাজার হাজার মানুষ হেঁটে সেতুর পার হচ্ছেন। তাদের কয়েকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, তাদের কর্মস্থল গাজীপুর। দক্ষিণবঙ্গের বিভিন্ন জেলা থেকে ঢাকা হয়ে গাজীপুর ফিরছেন। আবার উত্তরবঙ্গের অনেকেই যাচ্ছেন ঢাকা হয়ে নারায়ণগঞ্জের দিকে।
আবদুল্লাহপুরে খন্দকার সিএনজি ফিলিং স্টেশনের সামনে অপেক্ষমাণ একটি হলুদ পিকআপে হুড়োহুড়ি করে যাত্রী উঠতে দেখা যায়। পিকআপটি যাবে বনশ্রী হয়ে ডেমরার দিকে। কীভাবে যাবে তার কোনো কিছু না বুঝেই তাড়াহুড়ো করে কিছুক্ষণের মধ্যে যাত্রীতে ভরে যায় পিকআপটি। সঙে সঙ্গে রওনা দেয় পিকাপটি।
এমন অনেক যাত্রী হেঁটে সেতু পার হয়ে আবার অন্য পরিবহনে চড়েন। আবার চেকপোস্টের আগে যাত্রীদের নামিয়ে দিয়ে খালি অবস্থায় কিছুদূর গিয়ে দাঁড়িয়ে থাকে। যাত্রীরা হেঁটে আবার গিয়ে পিকআপে উঠছেন। এ যেন চোর-পুলিশ খেলা!
যাত্রীরা বলছেন, যেহেতু কারখানা খুলছে, তাই পরিবহনের ব্যবস্থা করলে এভাবে গাদাগাদি করে আসতে হতো না তাদের। পরিবার, ব্যাগপত্র নিয়ে বারবার দুর্ভোগে পড়তে হতো না। ভিড়ও এড়ানো যেতো। তাতে করোনা সংক্রমণের ঝুঁকি কমতো।
এনএইচ/ইএ/জিকেএস