রাতের ঢাকার চেনা সড়কও এখন যেন অচেনা
রোববার রাত সাড়ে ৮টা। রাজধানীর শাহবাগের অদূরে পাঁচ তারকা ইন্টারকন্টিনেন্টাল হোটেলের ঝলমলে আলোর বিপরীত দিকের রাস্তায় আধো ছায়া আধো অন্ধকারে মধ্যবয়সী এক ব্যক্তিকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায়। শাহবাগ থেকে বাংলা মোটর ও মিন্টু রোডগামী রাস্তার পুরোটাই ফাঁকা, সুনশান নীরবতা বিরাজ করছে চারদিকে।
এদিকে, হঠাৎ করেই সাইরেন বাজিয়ে ছুটে যায় একটি অ্যাম্বুলেন্স। আবার কিছুক্ষণ সুনশান নীরবতা। দু-একটি রিকশা চালকের কেউ যাত্রী নিয়ে কেউ বা যাত্রীছাড়া দ্রুত প্যাডেল হাঁকিয়ে ছুটে যাচ্ছেন গন্তব্যে। বয়স্ক দুই নারী-পুরুষকে জগিং স্যুট পরে দ্রুত পায়ে হাঁটতে দেখা যায়। বাংলা মোটরের সামনে দাঁড়িয়ে একজন পুলিশ সদস্যকে ভাড়ায়চালিত মোটরসাইকেল চালককে কারওয়ান বাজার মোড়ে নামিয়ে দিতে অনুরোধ করতে দেখা যায়। করোনা সংক্রমণ ও মৃত্যুরোধে চলমান দুই সপ্তাহব্যাপী লকডাউনের তৃতীয় দিনের রাতের এটি একটি খণ্ডচিত্র এটি।
যান্ত্রিক ঢাকা যেখানে মধ্যরাতেও জেগে থাকতো, এখন লকডাউনের কারণে সেই ঢাকা রাত ৯টা বাজার আগেই যেন ঘুমিয়ে পড়ে। লকডাউনের রাতে রাজধানীর চেনা সড়কগুলোকে যেন বড় বেশি অচেনা মনে হয়।
রোববার (২৫ জুলাই) রাতে জাগো নিউজের এ প্রতিবেদক রাজধানীতে রাতের লকডাউন পরিস্থিতি দেখতে ধানমন্ডি, লালবাগ, নিউমার্কেট, শাহবাগ, রমনা এবং তেজগাঁও থানা এলাকার বিভিন্ন সড়ক ঘুরে দেখেন। সরেজমিন এলাকাগুলোতে দেখা গেছে, রাস্তাঘাটে যানবাহনের সংখ্যা খুবই কম। বেশিরভাগ রাস্তাই জনশূন্য। রাস্তায় বাতি জ্বললেও ফাঁকা রাস্তা অনেকটা অন্ধকারাচ্ছন্ন মনে হয়।
শাহবাগ এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, দিনের বেলায় চেকপোস্ট বসিয়ে যানবাহনে তল্লাশি চালানো হলেও সেখানে রাতে কেউ নেই। বিএসএমএমইউ ও বারডেম হাসপাতালের সামনে যেখানে আগে ২৪ ঘণ্টা রোগীর স্বজনদের আনাগোনা চলতে থাকত আজ সেখানে তেমন কাউকে দেখা গেল না। শাহবাগ থেকে কারওয়ান বাজার পর্যন্ত রাস্তায় হাতে গোনা জন পাঁচেক মানুষও চোখে পড়ল না। এ সময় রাস্তার মোড়ে মোড়ে কয়েকজন রিকশা চালককে যাত্রীর জন্য অপেক্ষা করতে দেখা যায়।
কারওয়ান বাজার ঘুরে দেখা যায়, গোটা কারওয়ান বাজার জুড়ে থমথমে পরিবেশ। স্বাভাবিক সময়ে রাত যত গভীর হতো এখানে মানুষের উপস্থিতি তত বেশি হলেও আজ ৯টা না বাজতেই কারওয়ান বাজার জুড়ে সুনশান নীরবতা বিরাজ করছে।
এছাড়া হাতিরপুল, এলিফ্যান্ট রোড, সায়েন্স ল্যাবরেটরি, কলাবাগান এলাকার রাস্তাঘাটেও জনমানবশূন্য নীরবতা দেখা যায়। মাঝে মাঝে সাইরেন বাজিয়ে অ্যাম্বুলেন্স, পণ্যবাহী ট্রাক, হাতে গোনো দু-চারটি প্রাইভেটকার, মোটরসাইকেল দ্রুত বেগে ছুটে যায়। অন্য সময় রাতের ঢাকায় সবচেয়ে বেশি চোখে পড়ে রিকশা। তবে আজ সে সংখ্যাটা খুবই কম; আর যাত্রীও নেই বললেই চলে।
এমইউ/এমআরআর/জেআইএম