আদর্শলিপিতে জীবন চলে না
ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মূল ফটকের অদূরে রেলিংয়ে প্রতিদিন আদর্শলিপি ঝুলিয়ে রেখে ক্রেতার অপেক্ষায় দাঁড়িয়ে থাকেন পুরান ঢাকার লালবাগের নবাবগঞ্জ এলাকার মধ্যবয়সী যুবক আবদুল লতিফ। তার শারিরিক গঠন, পরিহিত শার্ট প্যান্ট ও পায়ে চামড়ার সেন্ডেল দেখলে তাকে ফুটপাতের বই বিক্রেতা বলে মনে হয় না। আর দশটা ফুটপাতের হকারের মতো তাকে চিৎকার চেঁচামেচি করে ক্রেতাদের ডাকতেও দেখা যায় না।
নিছক কৌতুহলের বশে জাগো নিউজের এ প্রতিবেদক তার সম্পর্কে জানতে চাইলে প্রথমে কিছুটা ইতস্ততবোধ করলেও পরিচয় পেয়ে লতিফ জানান, তিনি আজিমপুর নতুন পল্টন লাইন স্কুল অ্যান্ড কলেজ থেকে এসএসসি পাস করেছেন। এইচএসসি পর্যন্ত পড়াশুনা করলেও সংসারের টানাপোড়েনে আর লেখাপড়া করা হয়ে উঠেনি।
আবদুল লতিফ জানান, মাস কয়েক আগেও এলিফ্যান্ট রোড এলাকার একটি টেইলার্স দোকানে অভ্যর্থনাকারী হিসেবে চাকরি করতেন। মাসিক বেতন ও অন্যান্য সুযোগ সুবিধাসহ ১২হাজার টাকা পেতেন। এখন নিতান্ত পেটের দায়ে ফুটপাতে আদর্শলিপি বই বিক্রি করেন। মন্দার কারণে হঠাৎ করেই টেইলার দোকান মালিক ব্যবসা গুটিয়ে ফেললে চাকরি চলে যায়। এরপর সদরঘাট থেকে আদর্শলিপিসহ ছোটদের বই কিনে ফুটপাতে বিক্রি করছেন।
কিন্তু দৈনিক আট থেকে দশটি আদর্শলিপি বিক্রি করলে প্রতিটিতে ১০ টাকা লাভ থাকে। এত অল্পলাভে তার জীবন চলে না। এ প্রতিবেদকের সঙ্গে আলাপকালে লতিফ জানান, অল্প কয়টা টাকা বেশি লাভের জন্য নবাবগঞ্জ থেকে পায়ে হেটে সদরঘাট গিয়ে আদর্শলিপি, বাল্যশিক্ষা, একের ভিতর দশ, শৈশবে শিক্ষা ইত্যাদি নামের বই কিনেন।
ঢামেক হাসপাতালের সামনের ফুটপাতে প্রতিদিন পাঁচ থেকে দশটি বই বিক্রি করতে বই প্রতি ১০ টাকা মুনাফা পান। বই বেচার ফাঁকে ফাঁকে পরিচিতজনদের কাছে চাকরির সন্ধ্যান করেন। বছর চারেক আগে বিয়ে করেছেন। এখন থাকেন পৈত্রিক বাড়িতে। ভাল একটি চাকরি পেলে আদর্শলিপির বিক্রির এ পেশাটি ছেড়ে দিবেন বলে জানান। কিন্তু লাতিফ কি সহসায় পারবেন পেশাটি ছেড়ে দিতে?
এমইউ/এসকেডি/এএইচ/এমএস