অফিস খোলায় বেড়েছে মানুষের চলাচল
চলমান কঠোর বিধিনিষেধের তৃতীয় দিনে এসে ব্যাংক, বীমা ও শেয়ারবাজার খুলেছে। এতে রাজধানীতে বেড়েছে মানুষের চলাচল। অবশ্য কেউ কেউ বিনা কারণে বাইরে বের হয়ে ঘোরাঘুরি করছেন।
রোববার (২৫ জুলাই) সকালে রাজধানীর রামপুরা ঘুরে দেখা যায়, যাত্রীবাহী কোনো ধরনের গণপরিবহন চলছে না। ব্যক্তিগত গাড়ি, রিকশা, মোটরসাইকেল, বাইসাইকেল চেপে এবং কেউ কেউ পায়ে হেঁটে অফিস ছুটছেন।
এর মধ্যে আবার বাংলাদেশ টেলিভিশন ভবনের পাশে স্থাপন করা পুলিশ চেকপোস্টে দেখা গেল অনেকটা ঢিলেঢালা ভাব। বেশিরভাগ গাড়ি তল্লাশি না করে চেকপোস্ট থেকে ছেড়ে দেয়া হচ্ছে।
পায়ে হেঁটে অফিসে রওনা করা একটি বীমা প্রতিষ্ঠানের কর্মী রহমান বলেন, ‘বাস বন্ধ। তবে অফিস খোলা। যে বেতন পাই তা দিয়ে রিকশায় চেপে যাতায়াত করা সম্ভব না। তাই বাধ্য হয়ে চাকরি বাঁচাতে পায়ে হেঁটে অফিসে যাচ্ছি।’
রিকশায় মতিঝিলের অফিসের উদ্দেশে রওনা করা আরুফা আক্তার নামের এক ব্যাংককর্মী বলেন, ‘লকডাউন মানে আমাদের হয়রানি। প্রতিবার লকডাউন আসে, আর আমাদের অফিস খোলা থাকে। চাকরি বাঁচাতে বাধ্য হয়ে বাড়তি ভাড়া দিয়ে অফিস যেতে হয়। রামপুরা থেকে মতিঝিলের রিকশা ভাড়া ২০০ টাকা। এভাবে চললে বেতনের সব টাকা রিকশা ভাড়ার পেছনে চলে যাবে।’
এদিকে প্রয়োজন ছাড়াই কাউকে কাউকে প্রধান সড়ক ও আশপাশের গলির রাস্তায় চলাচল করতে দেখা গেছে।
রামপুরার প্রধান সড়কে ঘোরাঘুরি করা হৃদয় নামের একজন বলেন, ‘ঘরে বসে থেকে বোর হয়ে গেছি। তাই বাইরে একটু হাওয়া খেতে এসেছি। এছাড়া কেমন লকডাউন চলছে তা দেখতে এসেছি।’
করোনাভাইরাসের সংক্রমণ উদ্বেগজনক হারে বেড়ে যাওয়ায় গত শুক্রবার (২৩ জুলাই) সকাল ৬টা থেকে ৫ আগস্ট রাত ১২টা পর্যন্ত ১৪ দিনের কঠোর বিধিনিষেধ আরোপ করেছে সরকার।
এই বিধিনিষেধের মধ্যে প্রয়োজন ছাড়া ঘরের বাইরে বের না হওয়ার নির্দেশ দিয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করে সরকার। তবে ব্যাংক খোলা রাখার সিদ্ধান্ত দেয়া হয়। এরপর একে একে আসে শেয়ারবাজার ও বীমা কোম্পানির কার্যালয় খোলার সিদ্ধান্ত।
ব্যাংক, বীমা ও শেয়ারবাজার খোলার সিদ্ধান্ত আসলে ২১ জুলাই পবিত্র ঈদুল আজহা উদযাপন হওয়ায় ২০, ২১ ও ২২ জুলাই ছুটি ভোগ করেন এই তিন খাতের কর্মীরা। এর সঙ্গে সাপ্তাহিক ছুটির দিন হওয়ায় ২৩ জুলাই (শুক্রবার) ও ২৪ জুলাই (শনিবার) ছুটি কাটানোর সুযোগ পান তারা। ফলে টানা পাঁচদিন বন্ধ থাকে ব্যাংক, বীমা ও শেয়ারবাজার।
পাঁচদিনের ছুটি শেষে রোববার থেকে আবার ব্যাংক, বীমা ও শেয়ারবাজারের কার্যক্রম শুরু হয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, ৫ আগস্ট পর্যন্ত ব্যাংকের লেনদেন হবে সকাল ১০টা থেকে দুপুর ১টা ৩০ মিনিট পর্যন্ত। সাপ্তাহিক ছুটির দিন শুক্রবার ও শনিবার ব্যাংক বন্ধ থাকবে।
ব্যাংক লেনদেনের সঙ্গে সমন্বয় রেখে ৫ আগস্ট পর্যন্ত শেয়ারবাজারে লেনদেন হবে সকাল ১০টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত। এই লেনদেনে স্বাভাবিক সময়ের মতো ১৫ মিনিট প্রি-ওপেনিং সেশন থাকবে এবং লেনদেন শেষে ১৫ মিনিটের পোস্ট ক্লোজিং সেশন চালু থাকবে।
ব্যাংক ও শেয়ারবাজার খোলার সিদ্ধান্ত আসার পর ঈদের আগেই অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ ২৩ জুলাই থেকে ৫ আগস্ট বীমা প্রতিষ্ঠানের সেবা নিশ্চিত করার প্রয়োজনীয় নির্দেশনা জারি করার জন্য বীমা খাতের নিয়ন্ত্রক সংস্থা বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষকে (আইডিআরএ) নির্দেশ দেয়।
অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে এমন নির্দেশনা আসার পর কঠোর বিধিনিষেধের মধ্যে বীমা কোম্পানির অফিস খোলার সিদ্ধান্ত জানায় আইডিআরএ। আইডিআরএ’র সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, কঠোর বিধিনিষেধের মধ্যে বীমা কোম্পানির প্রধান কার্যালয় ও গুরুত্বপূর্ণ শাখা অফিস সকাল ১০টা থেকে বিকেল ৩টা পর্যন্ত খোলা থাকবে।
এমএএস/জেডএইচ/জিকেএস