করোনায় ধুঁকছে আবাসন
অডিও শুনুন
বৈশ্বিক মহামারি করোনাভাইরাসের (কোভিড-১৯) প্রভাব পড়েছে দেশের প্রায় প্রতিটি খাতে। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে পোশাক শিল্পসহ অন্যান্য ব্যবসাখাত। মহামারির ক্ষতি এড়াতে পারেনি আবাসন শিল্পও। করোনার কারণে এ খাতে দেখা দিয়েছে সংকট। একদিকে অর্থনৈতিক মন্দা, অন্যদিকে কার্যক্রম বন্ধ, নতুন গ্যাস সংযোগ প্রাপ্তিতে সাময়িক স্থগিতাদেশ এবং নির্মাণসামগ্রীর মূল্যবৃদ্ধি এ সংকট বাড়িয়ে দিয়েছে বহুগুণ।
এসব দিক বিবেচনায় অপ্রদর্শিত আয়কে এ খাতে বিনিয়োগের দাবি জানিয়ে আসছে আবাসন খাতের সংগঠন রিয়েল এস্টেট অ্যান্ড হাউজিং অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (রিহ্যাব)। অ্যাসোসিয়েশন সংশ্লিষ্টরা যুক্তি তুলে ধরে বলছেন, সংকট থাকলেও গত বছর অপ্রদর্শিত অর্থের বিনিয়োগ থাকায় এ খাত কিছুটা ঘুরে দাঁড়িয়েছিল। আগের ফল বিবেচনায় এবারও এমন পদক্ষেপ নেয়া যেতে পারে।
সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, করোনার প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় ঢেউয়ে বারবার ব্যাঘাত ঘটেছে আবাসন ব্যবসায়। সরকারি দফতরগুলো খোলা থাকলেও অনেক জায়গায় লোকবল থেকেছে অর্ধেক। বিশেষ করে মহামারির মধ্যে একটা বড় সময় ধরে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক) অর্ধেক লোকবল নিয়ে কাজ করছে, যে কারণে সংকট আরও ভয়াবহ হয়ে দেখা দিয়েছে। করোনার এসব বাধায় বর্তমানে রাজউক কার্যালয়ে যেমন ফাইল আটকে আছে, তেমনি জনবল সংকট তৈরি করছে ফাইলজট। তাতে শুধু ব্যবসাই বাধাগ্রস্ত হচ্ছে না, কমছে সরকারের রাজস্ব আদায়ও।
২০২১-২২ অর্থবছরের বাজেটে শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ, নগদ টাকা, ব্যাংক ডিপোজিটের মাধ্যমে কালো টাকা সাদা করতে ২৫ শতাংশ হারে কর এবং মোট করের ওপর ৫ শতাংশ জরিমানার বিধান রাখা হয়েছে। পাশাপাশি অঞ্চলভেদে জায়গা অনুপাতে নির্দিষ্ট পরিমাণ কর ও জরিমানা দিয়ে জমি, ভবন, অ্যাপার্টমেন্ট কিনেও কালো টাকা সাদা করার সুযোগ রয়েছে। এ সুযোগে আবাসন ব্যবসা ঘুরে দাঁড়ানোর আশা দেখছিলেন উদ্যোক্তারা।
কিন্তু সংক্রমণ রোধে চলমান বিধিনিষেধে অনেক জায়গায় যেমন কাজ বন্ধ রয়েছে, অনেক জায়গায় কাজ চললেও শ্রমিকরা তাতে যোগ দিতে পারছেন না। ফলে আবাসনের অবকাঠামোগত কার্যক্রমও থমকে আছে। তাতে বিভিন্ন ব্যাংক ও অর্থলগ্নিকারী প্রতিষ্ঠানের ঋণপ্রবাহও কমছে, কমছে ফ্ল্যাট-প্লট বিক্রিও, সব মিলিয়ে এক জটিল পরিস্থিতির উদ্ভব হয়েছে।
রিহ্যাবের সহ-সভাপতি কামাল মাহমুদ
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এ ব্যবসা মানুষের জন্য বাসস্থান নির্মাণের মাধ্যমে দেশের আবাসন সমস্যার সমাধান যেমন করছে, তেমনি কর্মসংস্থানসহ উদ্যোক্তা সৃষ্টি করছে এবং লিংকেজ শিল্প বিকাশে ফলপ্রসূ ভূমিকা রাখছে। পাশাপাশি এর মাধ্যমে পরিবেশবান্ধব ও ঝুঁকিমুক্ত অবকাঠামো বিনির্মাণ হচ্ছে এবং সরকারের রাজস্ব বাড়ছে। কিন্তু করোনার কারণে গত ৬-৭ মাসে আবাসন খাতে বিক্রির পরিমাণ ৬০ শতাংশের মতো কমে গেছে। উদ্যোক্তাদের নতুন প্রকল্প গ্রহণের হারও কমেছে ৭৫ শতাংশের মতো।
চলমান বিধিনিষেধে আবাসন খাতের ক্ষতির বিষয়ে কথা হয় রিহ্যাবের সহ-সভাপতি কামাল মাহমুদের সঙ্গে। তিনি জাগো নিউজকে বলেন, ‘অপ্রদর্শিত অর্থ বিনিয়োগের কারণে ভালো সেল হয়ে গেছে গত বছর। কিন্তু লকডাউনের কারণে সাধারণ মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। এতে তারা ফ্ল্যাট কিনতে পারছেন না। করোনাভাইরাসের কারণে আবাসন খাতে বিক্রি কমে গেছে।’
কামাল মাহমুদ আরও বলেন, ‘রাজউকে অর্ধেক জনবল দিয়ে কাজ চলায় ভয়ঙ্কর সমস্যা হচ্ছে। তাদের কাজ প্ল্যান পাস সংক্রান্ত। সেখানে অনেক সময় ফাইল আটকে থাকছে। এতে কাজ এগিয়ে নেয়া যাচ্ছে না। রাজউকে নানা অজুহাতে ফাইল এক টেবিল থেকে অন্য টেবিলে ঘুরপাক খাচ্ছে। এ সমস্যার কারণে হাজার হাজার ফ্ল্যাট অবিক্রীত থাকছে। করোনার মধ্যে ৫ হাজার কোটি টাকার ফ্ল্যাট অবিক্রীত রয়েছে, নতুন করে এ পাল্লা আরও ভারী হচ্ছে। এতে সরকার কোটি কোটি টাকার রাজস্ব হারাচ্ছে।’
এ সমস্যার সমাধানে রাজউকের জনবল বাড়ানোর পরামর্শ দেন রিহ্যাব নেতা কামাল মাহমুদ।
নির্মাণসামগ্রীর দামও আবাসন ব্যবসায় সংকটের জন্য দায়ী উল্লেখ করে কামাল মাহমুদ বলেন, ‘মহামারিকালে নির্মাণসামগ্রীর দাম বেড়েছে অনেক। ৬০ গ্রেডের রড বিক্রি হচ্ছে প্রতি টন ৬৬-৬৮ হাজার টাকা করে, ৪০ গ্রেডের রড প্রতি টন বিক্রি হচ্ছে ৫৫-৫৮ হাজার টাকায়। ৫০ কেজি ওজনের প্রতি বস্তা সিমেন্টের দাম ৪৫০ থেকে বেড়ে ৫৮০ টাকায় ঠেকেছে, যা দুই-তিন মাস আগেও ছিল ৩৭০ থেকে ৪০০ টাকার মধ্যে। এভাবে প্রতিটি নির্মাণসামগ্রীর দাম বেড়েছে ৩০ শতাংশ পর্যন্ত। আবার আয় কমায় কিস্তিও দিতে পারছেন না ক্রেতা। সব মিলিয়ে মহামারি এ খাতে সংকট নামিয়েছে।’
ইএআর/এসএস/এইচএ/এমএস