গণপিটুনিতে হত্যার বিপদজ্জনক প্রবণতা


প্রকাশিত: ০২:১৭ এএম, ১১ ডিসেম্বর ২০১৫

দেশে ইদানীং গণপিটুনিতে হত্যার প্রবণতা বেড়ে গেছে। গণমাধ্যমে মাঝেমধ্যেই গণপিটুনিতে হতাহতের খবর আসছে। সর্বশেষ গতকাল ১০ ডিসেম্বর বৃহস্পতিবার নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজার উপজেলায় ডাকাত সন্দেহে গণপিটুনিতে আটজন নিহত হয়েছে। গুরুতর আহত পাঁচ জন হাসপাতালে পুলিশ হেফাজতে চিকিৎসাধীন আছে। উপজেলার পুরিন্দা বাজারে গফুর মিয়ার চালের দোকানে বৃহস্পতিবার ভোর ৪ টায় একদল ডাকাত হানা দেয়। বিষয়টি আশেপাশের মানুষ টের পেয়ে মসজিদের মাইকে ঘোষণা দিলে চারপাশ থেকে শত শত লোকজন ডাকাতদের ঘিরে ফেলে। ওই সময় বিক্ষুব্ধ লোকজন ডাকাতদের গণপিটুনি দিতে শুরু করে। এতে এই হতাহতের ঘটনা ঘটে। গণপিটুনিতে মৃত্যুর ঘটনা অত্যন্ত দুঃখজনক। বিনা বিচারে কাউকে হত্যা করা সমর্থনযোগ্য নয়। এটি আইনসম্মতও নয়। অনেক সময় নিরপরাধ ব্যক্তিও ঘটনাচক্রে গণপিটুনির শিকার হয়ে থাকে। এ ছাড়া উদ্দেশ্যমূলকভাবেও গণপিটুনির ঘটনা ঘটানো হয়। অনেক সময় প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করতেও ব্যবহার করা হয় গণপিটুনি নামক অস্ত্র।  

অপরাধের বিরুদ্ধে সম্মিলিত প্রতিরোধ অবশ্যই প্রশংসাযোগ্য। তবে অপরাধ বন্ধ করতে গিয়ে আইন নিজের হাতে তুলে নেয়াটাও কার্যত আরেক অপরাধ। এতে আসলে বিপত্তি আরো বাড়ে। গণহত্যার দায়ে মামলা হয়। এতে পুলিশি হয়রানির আশঙ্কা থাকে। এ অবস্থায় সমাজে দেখা দেয় অস্থিরতা। সমাজতাত্ত্বিকরা বলে থাকেন- মানুষের ভেতর জমে থাকা নানা ক্ষোভ, বঞ্চনা এবং জিঘাংসার প্রতিফলনের কারণেই ঘটে গণপিটুনির মতো ঘটনা। এছাড়া অপরাধের বিচার না হওয়া, বিচার ব্যবস্থায় দীর্ঘসূত্রিতার কারণেও মানুষজন আইন নিজের হাতে তুলে নেয়। অকুস্থলেই অপরাধীর শাস্তি দিয়ে সান্ত্বনা খোঁজার চেষ্টা করে। তারা জানে না যে, এতে করে নিজেরাই আরেক অপরাধে জড়িয়ে যাচ্ছে। মানুষের ভেতরের পাশবিকতাও প্রকাশ পায় এর মধ্য দিয়ে।

এ জন্য জনসচেতনতা সৃষ্টি করা অত্যাবশ্যক। গণপিটুনিনামক বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড বন্ধ করতে হলে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করা অত্যন্ত জরুরি। মানুষ যদি ন্যায় বিচার পায়, সমাজে যদি ন্যায্যতা প্রতিষ্ঠিত হয় তাহলে আইন নিজের হাতে তুলে নিতে উৎসাহিত হবে না।  তাছাড়া গণপিটুনি যে একটি অপরাধ সে বিষয়েও অজ্ঞতাবশত অনেকেই এ ধরনের কর্মকাণ্ডে অংশ নিয়ে থাকে। এ সংক্রান্ত আইনের ধারা-উপধারাগুলোও সাধারণের মধ্যে প্রচারের ব্যবস্থা করতে হবে। অনেকে আবার জেনেশেুনেও গণপিটুনির মত আইনবিরোধী কাজে অংশ নিয়ে থাকে। এসব কারণে গণপিটুনির মাধ্যমে হত্যার সুষ্ঠু তদন্ত করে অপরাধীর শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে। মানবিকতারও উন্মেষ ঘটাতে হবে গণপিটুনি বন্ধে।

এইচআর/পিআর

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।