ডিবি পরিচয়ে চেকপোস্ট বসিয়ে ডাকাতি করতেন তারা

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ০৩:১৯ পিএম, ১৪ জুলাই ২০২১

নির্জন সড়কে ভুয়া ডিবির চেকপোস্ট বসিয়ে ছিনতাই ও ডাকাতি করত একটি চক্র। তাদের গায়ে থাকত ডিবি পুলিশের জ্যাকেট, ওয়াকিটকি, অস্ত্র ও হ্যান্ডকাফ। মোটা অঙ্কের টাকা নিয়ে যাচ্ছে এমন লোকজনকে টার্গেট করে ডাকাতি করতেন তারা। এ চক্রের চার সদস্যকে গ্রেফতার করেছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) তেজগাঁও বিভাগ।

গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে মঙ্গলবার (১৩ জুলাই) সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় রাজধানীর বসিলা এলাকা থেকে এই চারজনকে গ্রেফতার করা হয়। তারা হলেন- জাহিদ হাসান রেজাউল, মানিক ব্যাপারি ওরফে দারোগা মানিক, ফারুক হোসেন ওরফে নাসির উদ্দিন ও রুবেল সিকদার রুস্তম।

পুলিশ বলছে, গ্রেফতার চারজন ডিবির ভুয়া পরিচয় দিয়ে ডাকাতি করে বেড়াতেন। কোরবানির ঈদকে টার্গেট করে বড় বড় পাইকারদের পিছু নিতের তারা। এরপর সুবিধাজনক নির্জনস্থানে চেকপোস্ট বসিয়ে গাড়ি থামিয়ে ব্যবসায়ীদের সঙ্গে থাকা সব লুট করে নিতেন তারা।

বুধবার (১৪ জুলাই) দুপুরে ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা জানান ডিবির যুগ্ম কমিশনার (উত্তর) হারুন অর রশীদ।

jagonews24

কারও কাছে ডিবির জ্যাকেট ও অন্যান্য সরঞ্জাম থাকলেই সবকিছু না দেয়ার অনুরোধ জানিয়ে তিনি বলেন, ‘ডিবি পুলিশ সব সময় বা সব জায়গায় টেকপোস্ট বসায় না। সুতরাং পুলিশ পরিচয়ে কেউ সবকিছু নিতে চাইলে ভেরিফাই করুন, আশপাশে পোশাকে অন ডিউটিতে থাকা অন্য পুলিশ সদস্যদের মাধ্যমে পরিচয় নিশ্চিত হোন।’

ভুয়া ডিবি পুলিশের অপতৎপরতা রোধে সবারই সচেতন হওয়া দরকার বলে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘ডিবি পুলিশের বেশ ধারণ করে রাতে রাজধানী ও আশেপাশের বিভিন্ন জেলার সড়কে স্বল্প সময়ের জন্য চেকপোস্ট বসিয়ে ডাকাতি করছিল একটি সংঘবদ্ধ চক্র। ঈদুল আজহা উপলক্ষ্যে পশুর হাটের পাইকার ও ক্রেতাদের ক্যাশ টাকা ডাকাতি করার পরিকল্পনাও ছিল তাদের।’

ডিবির এই যুগ্ম কমিশনার বলেন, ‘গ্রেফতাররা সংঘবদ্ধ আন্তঃনগর ডাকাত দলের সদস্য। তারা ঈদুল আজহা উপলক্ষ্যে পশুর হাটে আগত ব্যাপারি ও ক্রেতাদের ডাকাতি করার পরিকল্পনা করছিল। গ্রেফতাররা তাদের অন্যান্য সহযোগীদের নিয়ে ডিবি পুলিশের ছদ্মবেশ ধারণ করে রাতে রাজধানী ও আশেপাশের বিভিন্ন জেলার সড়কে স্বল্প সময়ের জন্য পুলিশের চেকপোস্ট বসিয়ে ডাকাতি করে।’

তিনি বলেন, ‘এছাড়া তারা বিভিন্ন ব্যাংকের আশেপাশে ওঁৎ পেতে বিপুল পরিমাণ টাকা উত্তোলন ও পরিবহনকারী ব্যক্তিকে অনুসরণ করে। পরবর্তীতে ডিবি পুলিশ পরিচয়ে ওই টাকা পরিবহনকারী ব্যক্তিকে গাড়িতে তুলে নিয়ে ডাকাতি করে এবং ভিকটিমের হাত পা বেঁধে দূরবর্তী স্থানে ফেলে দেয়। ’

jagonews24

এক প্রশ্নের জবাবে হারুন অর রশীদ বলেন, ‘ঈদকে কেন্দ্র করে গরুর পাইকার, গার্মেন্টস ব্যবসায়ী কিংবা যে কেউ যদি মোটা অঙ্কের টাকা লেনদেন করেন তাহলে পুলিশকে জানান, পুলিশের সহযোগিতা নিয়ে মানিস্কট সেবা নিন। মোটা অঙ্কের টাকার লেনদেনে গলিপথ এড়িয়ে চলুন, যেখানে সিসি ক্যামেরা আছে সেখানে বসে লেনদেন করুন। গরু বহন করা গাড়ি, গরু কিংবা পশুর হাটে পাইকার ও ক্রেতার টাকা যেন কেউ ছিনতাই করতে না পারে সেজন্য ডিবি পুলিশসহ ডিএমপির অন্যান্য ইউনিট সক্রিয় রয়েছে।’

কার কাছে টাকা আছে তা কী করে এই চক্রের সদস্যরা জানতে পারে? এমন প্রশ্নের জবাবে হারুন বলেন, ‘ব্যাংকে বা ব্যাংকের সামনে, যেখানে মোটা অঙ্কের লেনদেন হয় সেখানে তাদের সোর্স আছে। আবার গার্মেন্টেসে বেতন দেয়ার সময় গাড়িতে করে টাকা আনা হয়। এটাই তারা সোর্সের মাধ্যমে নজরদারি করে ডাকাতির চেষ্টা করে।’

ডিবির এই কর্মকর্তা আরও বলেন, ‘গ্রেফতারদের নামে ডিএমপিসহ বিভিন্ন জেলায় একাধিক মামলা রয়েছে এবং তারা সবাই বিভিন্ন মেয়াদে জেল খেটেছে বলে জানা যায়। গ্রেফতারদের বিরুদ্ধে মোহাম্মদপুর থানায় ডাকাতির প্রস্তুতি এবং অস্ত্র আইনে পৃথক দুটি মামলা দায়ের করা হয়েছে।’

টিটি/এমআরআর/এএসএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।