স্কয়ারের আইসিইউ-সিসিইউ অনুমোদনহীন


প্রকাশিত: ১২:৩৩ পিএম, ০৯ ডিসেম্বর ২০১৫

দেশের প্রথম সারির হাসপাতালগুলোর মধ্যে প্রথমে নাম আসে স্কয়ার, অ্যাপোলো, ইউনাইটেড আর ল্যাবএইডের। এসব হাসপাতালের প্রতি মানুষের আস্থাটাও অনেক বেশি। তবে ল্যাবএইডের পর এবার অনিয়মের তালিকায় যুক্ত হল স্কয়ার হাসপাতালের নামও। গত ৯ বছর ধরে লাইসেন্স ছাড়াই মোটা অংকের টাকা নিয়ে আইসিইউ, সিসিইউ পরিচালনা করছিলো স্কয়ার হাসপাতাল।
 
এ অভিযোগের দায়ে বুধবার র‌্যাবের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট হেলাল উদ্দিন স্কয়ার হাসপাতালকে ২ লাখ ৬৫ হাজার টাকা জরিমানা করেন।
 
‘অ্যাট স্কয়ার উই কেয়ার’ স্লোগান নিয়ে ২০০৬ সালে রাজধানীতে যাত্রা শুরু করে স্কয়ার হাসপাতাল। যাত্রার শুরু থেকেই মোটা অংকের বিল ধরিয়ে দেয়াসহ বিচ্ছিন্নভাবে নানা অভিযোগ আসতে থাকে হাসপাতালটির বিরুদ্ধে। তবে বুধবার নির্দিষ্ট তথ্য নিয়েই সেখানে অভিযান চালায় র‌্যাব।
 
অভিযানে গিয়ে র‌্যাব দেখতে পায়, হাসপাতালটির ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিট (আইসিইউ), হৃদরোগে আক্রান্ত রোগীদের বিশেষ পর্যবেক্ষণ কেন্দ্র-সিসিইউ, নবজাতকদের পর্যবেক্ষণ কেন্দ্র- এনআইসিইউ, হাই ডিপেন্ডেন্সি ইউনিট (এইচডিইউ), এবং ডায়ালসিস করার কোনো লাইসেন্স নেই। ৯ দীর্ঘ বছর ধরে রোগীদের থেকে মোটা অংকের টাকা হাতিয়ে নিলেও অবৈধভাবে এসব ইউনিট পরিচালনা করছিল তারা। অথচ এই পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রগুলোতে প্রতিদিন একজন রোগীর খরচ হয় কমপক্ষে ২০ হাজার টাকা।
 
এদিকে লাইসেন্স না থাকায় আইসিইউ, সিসিইউয়ের মান নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছেন রোগীরা। জাকারিয়া নামে স্কয়ার হাসপাতালের এক রোগী জাগো নিউজকে বলেন, এসব বিশেষায়িত বিভাগের লাইসেন্সের জন্য আবেদনের পর স্বাস্থ্য অধিদফতর থেকে বিশেষজ্ঞরা এখানকার সুযোগ সুবিধা এবং চিকিৎসার মানদণ্ড পরিমাপ করেন। তবে যেহেতু তাদের লাইসেন্স নেই তার মানে কর্তৃপক্ষ নিজের ইচ্ছামতো হাসপাতাল চালাচ্ছে।
 
এ বিষয়ে জানতে চাইলে স্কয়ার হাসপাতালের মেডিকেল সার্ভিসেস বিভাগের ডেপুটি ডিরেক্টর ডা. মির্জা নাজীম উদ্দিন অকপটে নিজেদের দোষ স্বীকার করে নেন। তিনি জাগো নিউজকে বলেন, ‘আমরা র‌্যাবের অভিযানের বিরুদ্ধে কোনো কথা বলতে চাচ্ছি না।’
 
স্কয়ার হাসপাতালের আরেক কর্মকর্তা বড় গলায় বললেন, ‘শুধু পেপারের সমস্যা। আর কিছু পায়নি।’
 
হাসপাতালটির ব্লাড ব্যাংকের মান নিয়েও প্রশ্ন তোলা হয়েছে র‌্যাবের এই অভিযানটিতে। ৯ বছর আগের এই ব্লাড ব্যাংকের লাইসেন্স শেষ হয়েছে ২০১৪ সালের জুন মাসে। নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট হেলাল উদ্দিন বলেন, তাদের ব্লাড ব্যাংকটি অনেক পুরনো। দেড় বছর আগে এর মেয়াদ শেষ। নিরাপদ রক্ত সঞ্চালন আইনে তাদের ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে।
 
স্বাস্থ্য অধিদফতরকে দেয়া তথ্য অনুযায়ী, স্কয়ার হাসপাতালে ৩শ’ বেড থাকার কথা। তবে র‌্যাবের অভিযানে দেখা গেল মোট ৩৬৫টি বেড। জানতে চাইলে স্কয়ার কর্তৃপক্ষ জানায়, ৬৫টি মোবাইল বেড রয়েছে। তবে এসব বেডের কাগজ দেখাতে পারেন নি তারা।
 
হাসপাতালটির একমাত্র ক্যাফেটেরিয়া থেকে খাবার খান রোগী ও তার স্বজনরা। অথচ বাংলাদেশ স্ট্যান্ডার্ড ও টেস্টিং ইন্সটিটিউটের (বিএসটিআই) অনুমোদন না নিয়ে কেকসহ নানা খাদ্যদ্রব্য তৈরি করছিল তারা। খাবার তৈরির পরিবেশও স্বাস্থ্য সম্মত ছিল না। এ কারণে ক্যাফেটেরিয়াটিকে সর্বমোট ১ লাখ ৫ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়।
 
অভিযানে আরো উপস্থিত ছিলেন- স্বাস্থ্য অধিদফতরের পরিদর্শক ডা. মো. শাহজাহান, ড্রাগ অ্যাডমিনিস্ট্রেশনের পরিদর্শক মো. মাহবুব হোসেন, বিএসটিআই এর ফিল্ড অফিসার শাহিদুল ইসলাম এবং ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের পরিদর্শক মো. খালেক মজুমদার।
 
এআর/এসকেডি/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।