অগ্নিকাণ্ডে হত্যা মামলা : সজীব গ্রুপের চেয়ারম্যানসহ গ্রেফতার ৮
নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে সজীব গ্রুপের অঙ্গপ্রতিষ্ঠান হাসেম ফুডস অ্যান্ড বেভারেজ লিমিটেডের (সেজান জুস) কারখানায় অগ্নিকাণ্ডে অর্ধশতাধিক মানুষের প্রাণহানিতে হত্যা মামলা দায়ের হয়েছে। এ মামলায় সজীব গ্রুপের চেয়ারম্যান ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) আবুল হাসেম এবং প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) শাহেনশাহ আজাদসহ আটজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
শনিবার (১০ জুলাই) কারখানাটি পরিদর্শন শেষে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল ও নারায়ণগঞ্জ জেলা পুলিশ সুপার মোহাম্মদ জায়েদুল আলম সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান।
গ্রেফতার আটজনের মধ্যে সজীব গ্রুপের এমডি-সিইও ছাড়াও রয়েছেন আবুল হাসেমের চার ছেলে (গ্রুপের ডিএমডি) হাসিব বিন হাসেম ওরফে সজীব, (পরিচালক) তারেক ইব্রাহীম, তাওসীব ইব্রাহীম, তানজীম ইব্রাহীম; হাসেম ফুডসের উপ-মহাব্যবস্থাপক (ডিজিএম) মামুনুর রশিদ এবং সিভিল ইঞ্জনিয়ার ও প্রশাসনিক কর্মকর্তা মো. আলাউদ্দিন। এর আগে পুলিশ বাদী হয়ে আটজনের নাম উল্লেখ করে একটি হত্যা মামলা দায়ের করে।
দুপুরে কারখানাটি পরিদর্শন শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেন, সারাদেশ এ ঘটনায় স্তব্ধ। একসঙ্গে এতজনের প্রাণহানি খুবই দুঃখজনক। প্রথমে তিনজন, পরে ৪৯ জনের মরদেহ উদ্ধার হয়। ফায়ার সার্ভিস কিছু জীবিতকেও উদ্ধার করেছে। এখন পর্যন্ত আটজনকে আইনের আওতায় আনা হয়েছে।
তিনি বলেন, এ ঘটনায় পৃথক তদন্ত কমিটি করা হয়েছে। কারখানায় কতজন লোক কাজ করত, সবই তদন্তে বেরিয়ে আসবে। জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সরকারি সহযোগিতা করা হয়েছে। আরও সহযোগিতা প্রয়োজন হলে সরকারের পক্ষ থেকে করা হবে।
মামলা ও দোষীদের শাস্তির বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, অবশ্যই মামলা হবে, এর সঙ্গে সামান্যতম দোষীদেরও আইনের আওতায় এনে বিচার করা হবে। তদন্তের আগে বিস্তারিত কিছু বলতে চাচ্ছি না। তদন্ত শেষে অবশ্যই তাদের বিচার হবে।
কারখানায় শিশুশ্রমের বিষয়ে আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেন, কতজন শিশুশ্রমিক ছিল তা তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
অগ্নিকাণ্ডের সময় কারখানা ভবনের ছাদ আটকানো ছিল এবং সিঁড়িতে তালা দেয়া ছিল—এ বিষয়ে জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ১৭ জনকে ছাদ থেকে বড় একটি মই দিয়ে উদ্ধার করেছে ফায়ার সার্ভিস। সিঁড়িতে ও ছাদে তালা দেয়া ছিল কি-না তা তদন্তে বেরিয়ে আসবে।
পরে নারায়ণগঞ্জ জেলা পুলিশ সুপার মোহাম্মদ জায়েদুল আলম সাংবাদিকদের বলেন, ৩০২ ধারায় পুলিশ বাদী হয়ে আটজনের নাম উল্লেখ করে একটি হত্যা মামলা করেছে। সজীব গ্রুপের চেয়ারম্যান আবুল হাসেম, তার ছেলে সজীবসহ আটজন গ্রেফতার হয়েছেন। বাকিদের মধ্যে কোম্পানির সিইও, পরিচালকও রয়েছেন।
গত ৮ জুলাই বিকেলে ওই কারখানায় অগ্নিকাণ্ড ঘটে। ঘটনার প্রথম দিন তিনজনের মৃত্যু হয়। আহত হন অর্ধশত শ্রমিক। ফায়ার সার্ভিসের ঢাকা ও নারায়ণগঞ্জের ১৮টি ইউনিট ২০ ঘণ্টা চেষ্টা চালিয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। এরপর গত ৯ জুলাই সকালে ওই ভবনের চারতলা থেকে ২৬ নারীসহ ৪৯ জনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়। সব মিলিয়ে এ ঘটনায় মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়ায় ৫২ জনে। ২৯ ঘণ্টা পর ৯ জুলাই রাতে পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে আসে আগুন।
টিটি/জেএইচ/এইচএ/এমএস