ছবি হাতে স্ত্রী ফিরোজাকে খুঁজে ফিরছেন স্বামী জাহিদ
অসুস্থ স্বামী কাজ করতে পারেন না। এ কারণে সংসারের হাল ধরতে তিন মাস আগে নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে সজীব গ্রুপের হাশেম ফুড অ্যান্ড বেভারেজ লিমিটেডের কারখানায় চাকরি নেন ফিরোজা বেগম।
এই কারখানাতেই বৃহস্পতিবার (৮ জুলাই) ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। অগ্নিকাণ্ডের প্রায় ২৩ ঘণ্টা পরও স্ত্রী ফিরোজার সন্ধান পাননি স্বামী মো. জাহিদ।
স্ত্রীর সন্ধান না পেয়ে তার ছবি ও জাতীয় পরিচয়পত্র নিয়ে ঢাকা মেডিকেল কলেজে (ঢামেক) ঘুরছেন জাহিদ। সেখানে তিনি সাংবাদিকদের স্ত্রীকে খুঁজে না পাওয়ার কথা জানান।
জাহিদ বলেন, ‘আমি আগে গার্মেন্টসে কাজ করতাম। শারীরিক অসুস্থতার কারণে ৬ মাস ধরে বেকার। আমি বেকার হয়ে যাওয়ায় তিনমাস আগে ৬ হাজার টাকা বেতনে আমার স্ত্রী এ কারখানায় চাকরি নেয়। ওভারটাইম দিয়ে মাসে আয় হতো ৯ হাজার টাকার মতো।’
তিনি বলেন, ‘আমার স্ত্রীর সঙ্গে শেষ কথা হয়েছে বৃহস্পতিবার সকালে। কারখানার চারতলায় আমার স্ত্রী কাজ করত। বৃহস্পতিবার সকাল ৮টায় দিকে সে অফিসে যায়। এরপর আর ফিরে আসেনি। আমার স্ত্রী এখন কোথায়, কী অবস্থায় আছে কিছুই জানি না। আমাদের একটা মেয়ে আছে। মেয়ে ওর মায়ের জন্য কান্না করছে। আমি আমার স্ত্রীর খোঁজে এখানে এসেছি।’
নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে সজীব গ্রুপের হাশেম ফুড অ্যান্ড বেভারেজ লিমিটেডের কারখানায় ভয়াবহ আগুনের ঘটনায় পুড়ে যাওয়া ৪৯টি মরদেহ ঢাকা মেডিকেলের মর্গে নিয়ে আসা হয়েছে।
মরদেহগুলো এমনভাবে পুড়ে গেছে যে পরিচয় শনাক্তের জন্য ডিএনএ পরীক্ষা করতে হবে বলে জানিয়েছেন নারায়ণগঞ্জের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক শামীম বেপারী।
শুক্রবার (৯ জুলাই) ঢাকা মেডিকেলের মর্গে সামনে অবস্থানকালে তিনি বলেন, ‘মৃতদেহগুলো এমনভাবে পুড়ে গেছে যে পরিচয় শনাক্ত জন্য ডিএনএ পরীক্ষা করতে হবে। আমাদের পক্ষ থেকে স্বজনদের ডিএনএ নমুনা দেয়ার জন্য ঢাকা মেডিকেলের মর্গে আসতে বলা হয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘নারায়ণগঞ্জে ডিএনএর নমুনা রাখা বা মরদেহের পরিচয় শনাক্ত কোনো ব্যবস্থা রাখা হয়নি। ফলে এখান (ঢামেক) থেকেই মরদেহের পরিচয় শনাক্ত করা হবে। স্বজনদের ঢাকা মেডিকেলের মর্গে এসে ডিএনএ নমুনা দিতে হবে।’
এর আগে শুক্রবার বিকেল ৩টার দিকে ৫টি অ্যাম্বুলেন্সে করে কারখানার ধ্বংসস্তুপ থেকে উদ্ধার করা মরদেহগুলো ঢাকা মেডিকেলের মর্গে নিয়ে আসা হয়। প্যাকেটে ভরা মৃতদেহগুলো এক এক করে বের করে মর্গে হিমঘরে নিয়ে যাওয়া হয়।
নারায়ণগঞ্জ জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সুভাষ চন্দ্র সাহা বলেন, ‘এখন পর্যন্ত ধ্বংসস্তুপ থেকে ৪৯ জনের মরদেহ উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে আনা হয়েছে। আমাদের প্রথম কাজটি হবে মরদেহগুলোর যথাযথ প্রক্রিয়ায় ডিএনএ স্যাম্পল সংগ্রহ করা। সবগুলো মরদেহ আগুনে পুড়ে ঝলসে গেছে। প্রয়োজনে তাদের মরদেহ ফ্রিজিং করা হবে। আত্মীয়দের সঙ্গে ডিএনএ স্যাম্পল মিলিয়ে পরবর্তীতে মরদেহ হস্তান্তর করা হবে।
এর আগে নারায়ণগঞ্জে ঘটনাস্থলে সাংবাদিকদের ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্স নারায়ণগঞ্জ অফিসের উপ-সহকারী পরিচালক আব্দুল্লাহ আল আরেফীন ৪৯ মৃতদেহ উদ্ধার তথ্য জানান।
এমএএস/এএএইচ/এএসএম