‘অধিকাংশ লঞ্চ মালিকের বাজার করারও টাকা নেই’
করোনা (কোভিড-১৯) সংক্রমণ রোধে কঠোর বিধিনিষেধে লঞ্চ বন্ধ থাকায় অধিকাংশ মালিকের বাজার করার টাকা নেই বলে দাবি করেছে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-চলাচল (যাত্রী পরিবহন-যাপ) সংস্থা। এ পরিস্থিতিতে যাত্রীবাহী লঞ্চ চলাচলে সরকারের অনুমতি চেয়েছে সংস্থাটি।
বৃহস্পতিবার (৮ জুলাই) সংস্থার প্রেসিডেন্ট মাহবুব উদ্দিন আহমদ স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ কথা জানানো হয়। শ্রমিকদের বেতন-বোনাসে দেয়ার জন্য ৪০ কোটি টাকা প্রণোদনাও চেয়েছেন লঞ্চ মালিকরা।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘বিশ্বব্যাপী করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের কারণে দেশের মানুষের জীবন রক্ষাকল্পে কঠোর লকডাউন কার্যকর করেছে সরকার। পৃথিবীর অন্যান্য দেশের তুলনায় বাংলাদেশের করোনা পরিস্থিতি এখনও নিয়ন্ত্রণের মধ্যে রয়েছে। সেটা সম্ভব হয়েছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সময়োপযোগী ও দূরদর্শী পদক্ষেপের কারণে।’
আরও বলা হয়, ‘মহামারির কারণে হাজার হাজার মানুষ হোম কোয়ারেন্টাইন ও হাসপাতালে দুঃসহ যন্ত্রণা নিয়ে কাতরাচ্ছে। আমরা পরিবার-পরিজন ও কোটি কোটি টাকার সম্পদ বিভিন্ন নদী বন্দরে অলস বসিয়ে রেখে নীরবে কাতরাচ্ছি। বাসায় আমাদের অধিকাংশ লঞ্চ মালিকের বাজার করার টাকা নেই, বাচ্চাদের টিউশন ফি দিতে পারছে না। শ্রমিকদের ছয় মাসের বেতন ও বোনাস দেয়া সম্ভব হচ্ছে না। ব্যাংক ঋণ ও ব্যাংকঋণের সুদ পরিশোধ করতে পারছি না।’
বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, ‘যদিও জাতীয় রাজস্ব বোর্ড, বিআইডব্লিউটিএ ও ডিজি শিপিংকে কোটি কোটি টাকা অগ্রিম প্রদান করা হয়েছে। আমরা জাহাজ মালিকরা অদ্যাবধি সরকারের পক্ষ থেকে কোনো সহায়তা কিংবা প্রণোদনা পাইনি। লাখ লাখ শ্রমিক-কর্মচারী বেকার জীবন-যাপন করছে। কোটি কোটি টাকার সম্পদ আজ অযত্নে-অবহেলায় নষ্ট হতে চলছে।’
লঞ্চ চলাচল বন্ধ থাকায় অনেক শ্রমিক চাকরি ছেড়ে দিয়ে অন্যত্র চলে যাচ্ছে জানিয়ে বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘ফলে ভবিষ্যতে লঞ্চ পরিচালনার জন্য মাস্টার-ড্রাইভারের সংকট দেখা দেয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। ঢাকা নদী বন্দর থেকে চাঁদপুরসহ দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে ৪১টি নৌপথে প্রায় ২২০টি লঞ্চ চলাচল করছে। এই ২২০টি লঞ্চ দিয়ে আমরা ঈদের সময় দেশের দক্ষিণ-পশ্চিম অঞ্চলের ২১টি জেলার যাত্রীদের পারাপার করতে যেখানে হিমশিম খাচ্ছি, সেখানে লঞ্চ বন্ধ রেখে মাওয়া-আরিচা দিয়ে মাত্র গুটি কয়েক ফেরি চালু রেখে যাত্রী পারাপারের অপচেষ্টা করা হচ্ছে।’
বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-চলাচল (যাত্রী পরিবহন-যাপ) আরও বলছে, ‘সরকারের পক্ষ থেকে মানুষের চলাচল বন্ধ রাখার জন্য বলা হলেও মানুষ নাড়ির টানে গ্রামে বাড়ি যাওয়া বন্ধ করেনি। ফলে আমরা জনস্রোত দেখেছি। ফেরিতে বন্ধ করা যায়নি মানুষের যাতায়াত। সদরঘাট থেকে লঞ্চ চলাচল বন্ধ থাকায় গাদাগাদি করে লাখ লাখ মানুষ পদ্মা পাড়ি দিয়ে দক্ষিণাঞ্চলে যাতায়াত করছে। ফলে করোনা প্রকোপ সর্বত্রই ছড়িয়ে পড়ছে। কিন্তু সদরঘাট দিয়ে লঞ্চ চলাচল অব্যাহত থাকলে পদ্মা নদী তথা মাওয়া অঞ্চলে চাপ কমে যেত। তাছাড়া লঞ্চে আমরা স্বাস্থ্যবিধি মেনে যাত্রী বহন করি।’
সংস্থার প্রেসিডেন্ট মাহবুব উদ্দিন আহমদ বলেন, ‘সাধারণ মানুষ যেখানে ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা দিয়ে গন্তব্য স্থলে যেতে পারতেন সেখানে বিভিন্ন যানবাহনে ২-৩ হাজার টাকা দিয়ে ভেঙে ভেঙে অনেক ভোগান্তি ও বিড়ম্বনার শিকার হয়ে বাড়ি যেতে হয়েছে।’
সংস্থার পক্ষ থেকে আরও বলা হয়, ‘২০২০ সালে করোনায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে আমরা ২১০ কোটি টাকা সরকারের কাছে প্রণোদনা চেয়েছিলাম। একটি টাকাও দেয়া হয়নি। গত ৪ এপ্রিল থেকে প্রায় দুই মাস লঞ্চ বন্ধ রাখা হয়েছে। শ্রমিক কর্মচারীদের বেতন-বোনাস দেয়ার জন্য আমরা মাত্র প্রায় ২০ কোটি টাকা প্রণোদনা চেয়েছিলাম। একটি পয়সাও দেয়া হয়নি। গত জুন থেকে আবার লঞ্চ বন্ধের কারণে আমরা শ্রমিকদের বেতন বোনাস দেয়ার জন্য চার মাসের বেতন ও দুই মাসের বোনাস দেয়ার জন্য মোট প্রায় ৪০ কোটি টাকা প্রণোদনা চেয়েছি। কিন্তু সরকারের পক্ষ থেকে এ পর্যন্ত কোনো কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়নি। এই পরিস্থিতিতে যাত্রী সাধারণের যাতায়াতের সুবিধার্থে এবং শ্রমিক কর্মচারীদের বেতন-বোনাস পরিশোধ ও জাহাজ মালিকদের বেঁচে থাকা ও জীবিকা নির্বাহে যাত্রীবাহী লঞ্চ চলাচলে অনুমতি চাওয়া হয়েছে।’
আরএমএম/জেডএইচ/জেআইএম