বেগম রোকেয়া দিবস বুধবার


প্রকাশিত: ০১:৪০ পিএম, ০৮ ডিসেম্বর ২০১৫

বুধবার (৯ ডিসেম্বর) বেগম রোকেয়া দিবস। বাংলার নারী জাগরণের অগ্রদূত বেগম রোকেয়ার জন্ম ও মৃত্যুবার্র্ষিকী উপলক্ষে প্রতিবছর এই দিনে দেশে সরকারিভাবে রোকেয়া দিবস পালন করা হয়। এবছর বেগম রোকেয়ার ১৩৫তম জন্ম ও ৮৩তম মৃত্যুবার্ষিকী পালন করা হচ্ছে।

বেগম রোকেয়া ১৮৮০ সালের ৯ ডিসেম্বর রংপুর জেলার পায়রাবন্দ গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। রক্ষণশীল মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করে তিনি নারী জাগরণের অগ্রদূতের ভূমিকায় অবতীর্ণ হন। তিনি উনবিংশ শতাব্দীর একজন খ্যাতিমান বাঙালি সাহিত্যিক ও সমাজ সংস্কারক। ১৯৩২ সালের ৯ ডিসেম্বর তিনি মৃত্যুবরণ করেন।

রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এই দিবস উপলক্ষে পৃথক বাণী দিয়েছেন। এ উপলক্ষে বুধবার সরকারি ও বেসরকারি পর্যায়ে দেশব্যাপী বিস্তারিত কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে।

মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয় রোকেয়া দিবস উপলক্ষে রাজধানীতে ‘বেগম রোকেয়া পদক ২০১৫’ প্রদান ও আলোচনা অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বুধবার সকালে ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে আয়োজিত এই রোকেয়া পদক প্রদান অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে পদক প্রাপ্তদের হাতে সম্মাননা তুলে দেবেন। অনুষ্ঠানে সভাপ্রধানের দায়িত্ব পালন করবেন মহিলা ও শিশু বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী মেহের আফরোজ চুমকি।

এবছর রোকেয়া পদক-২০১৫ এর জন্য মনোনীত হয়েছেন মুক্তিযোদ্ধা ড. তাইবুন নাহার রশীদ এবং ফ্যাশন ডিজাইনার বিবি রাসেল। বুধবার রাজধানীর ওসমানী মিলনায়তনে এই দুই জন বিশিষ্ট ব্যক্তির হাতে পুরস্কার তুলে দেয়া হবে। পুরস্কার হিসাবে তারা পাবেন এককালীন এক লাখ টাকা, স্বর্ণ পদক এবং সম্মাননাপত্র।

ড. তাইবুন নাহার রশীদ (কবিরত্ন, ডি.লিট) ১৯১৯ সালের ৫ মে ঢাকা জেলার এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি দেশ বিদেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতকোত্তর ও উচ্চতর ডিগ্রি অর্জন করেন। ড. তাইবুন নাহার রশীদ ১৯৫২ এর ভাষা আন্দোলন, ৬৯ এর গণঅভ্যুত্থান ও ৯০ এর স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনে স্বক্রিয়ভাবে অংশ নেন। তিনি সমাজসেবায় নিবেদিত ছিলেন। তার রচিত কবিতা, ছোটগল্প ও উপন্যাসের জন্য দেশে ও বিদেশে পুরস্কারে ভূষিত হন।

নারীর উন্নয়ন ও ক্ষমতায়নসহ দরিদ্র ও অসহায় নারী সমাজের উন্নয়নে গুরত্বপূর্ণ অবদানের জন্য বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক ড. তাইবুন নাহার রশীদকে ‘বেগম রোকেয়া পদক-২০১৫’ তে ভূষিত করেছে।

বিবি রাসেল ১৯৫০ সালে চট্টগ্রামের এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবা মোখলেসুর রহমান সিধু এবং মাতা শামসুন নাহার রহমান রোজ। বিবি রাসেল বাংলাদেশের পোশাক শিল্পের উন্নয়ন, ঐতিহ্যবাহী তাঁতশিল্প ও তাঁতীদের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে কাজ করছেন। তিনিই প্রথম বাংলাদেশি নারী যিনি লন্ডন কলেজ অব ফ্যাশন এ পড়ালেখা করেন। দরিদ্র মানুষের সৃজনশীলতাকে কাজে লাগিয়ে দেশের ভাবমূর্তি বিশ্বের সামনে উজ্জ্বল করার লক্ষ্যে তিনি নিয়োজিত আছেন। দেশীয় উপাদানে নান্দনিক পোশাক ডিজাইনের বিশেষ অবদানের স্বীকৃতি স্বরূপ বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক বিবি রাসেলকে ‘বেগম রোকেয়া পদক-২০১৫’ এ ভূষিত করা হয়েছে।

রোকেয়া দিবস উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর প্রদত্ত বাণীতে পদক প্রাপ্ত এই দুই মহিয়সী নারীকে অভিনন্দন জানানো হয়। তারা বেগম রোকেয়ার আদর্শে উজ্জীবিত হয়ে নারী সমাজকে আত্মোন্নয়নে ব্রতি হওয়ার আহ্বান জানান।

অপর এক লিখিত বার্তায় জাতীয় সংসদের বিরোধীদলীয় নেতা রওশন এরশাদ এমপি নারী শিক্ষা বিস্তার এবং নারী অধিকার প্রতিষ্ঠা ও সমাজে দরিদ্র ও অসহায় নারীদের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে বিশেষ অবদান রাখার জন্য সরকারের পাশাপাশি বিত্তশালীদের এগিয়ে আসার আহ্বান জানান।

জানা যায়, রোকেয়া দিবস উপলক্ষে বুধবার থেকে রংপুরের পায়রাবন্দ গ্রামে তিন দিনব্যাপী রোকেয়া দিবস-২০১৫ উদযাপন শুরু হতে যাচ্ছে। দিবসটি উপলক্ষে জেলা ও মিঠাপুকুর উপজেলা প্রশাসন যৌথভাবে আলোচনা সভাসহ বিস্তারিত কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। সকাল ৯টায় বেগম রোকেয়া স্মৃতিস্তম্ভে পুষ্পস্তবক অর্পণের মধ্য দিয়ে কর্মসূচির উদ্বোধন করা হবে। এছাড়াও মিলাদ মাহফিল, স্বেচ্ছা রক্তদান কর্মসূচি, বিতর্ক প্রতিযোগিতা, ঐতিহ্যবাহী রোকেয়া মেলা, বেগম রোকেয়ার ওপর মুক্ত আলোচনা ও বর্ণাঢ্য সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান আয়োজন করা হয়েছে।

এদিকে বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের জেলা শাখাসমূহ দিবসটি উপলক্ষে জেলা সদরে আলোচনা সভা, সমাবেশ ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করছে। সারাদেশে ছড়িয়ে থাকা মহিলা পরিষদের ২৩০০ তৃণমূল সংগঠন এসব আয়োজনে অংশ নেবেন। তবে সরকারি পর্যায়ে রোকেয়া দিবসের জাতীয় দিবস পালন করায় মহিলা পরিষদ রাজধানীতে বড় কোনো অনুষ্ঠানের আয়োজন করে না। তবে প্রতিবছরের মতো ঢাকা মহানগর কমিটি এ উপলক্ষে শাখা কার্যালয়ে আলোচনা সভা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করছে।

রোকেয়া দিবস উপলক্ষে বাংলা একাডেমি বুধবার বিকেল ৪টায় একাডেমির কবি শামসুর রাহমান সেমিনার কক্ষে বেগম রোকেয়া স্মরণে প্রবন্ধ পাঠ ও আলোচনা অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে। অনুষ্ঠানে স্বাগত ভাষন প্রদান করবেন একাডেমির মহাপরিচালক অধ্যাপক শামসুজ্জামান খান। প্রবন্ধ উপস্থাপন করবেন লেখক-সাংবাদিক আবুল মোমেন। আলোচনায় অংশ নেবেন গবেষক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের অধ্যাপক ড. সোনিয়া নিশাত আমিন। সভাপতিত্ব করবেন বাংলা একাডেমির সভাপতি ইমেরিটাস অধ্যাপক আনিসুজ্জামান।

একে/আরআইপি

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।