লকডাউনে ছুটির দিনেও পতেঙ্গা সৈকতে সুনসান নীরবতা
ঘড়ির কাঁটায় বিকেল সাড়ে ৪টা। পতেঙ্গা সৈকতে আছড়ে পড়ছে সাগরের ঢেউ। সৈকতজুড়ে বাতাসে দুলছে সৌন্দর্যবর্ধনে লাগানো সবুজ ঘাস। প্রতিদিন সাগরের ঢেউয়ের গর্জন আর প্রকৃতির মনোমুগ্ধকর এমন দৃশ্য দেখতে এখানে ছুটে আসেন হাজার হাজার পর্যটক। নিজেকে বিলিয়ে দেন প্রকৃতির মাঝে। কিন্তু সরকার ঘোষিত কঠোর লকডাউনে শুক্রবার ছুটির দিনেও ব্যস্ততম এ বিনোদন কেন্দ্রে ছিল সুনসান নীরবতা।
শুক্রবার (২ জুলাই) বিকেলে সরেজমিন চট্টগ্রাম নগরের পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকতে এমন দৃশ্য দেখা গেছে।
সৈকতের কয়েক কিলোমিটার এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, মূল সৈকতের তিন প্রবেশমুখে বসানো হয়েছে ব্যারিকেড। সেখানে দায়িত্বরত টুরিস্ট পুলিশের সদস্যরা কাউকে সৈকতে প্রবেশ করতে দিচ্ছেন না। সৈকত এলাকায় বন্ধ রয়েছে দোকানপাট।
এছাড়া সৈকতের আশপাশের এলাকায় কিছুক্ষণ পরপর দু’টি মোটরসাইকেলযোগে টহল দিয়ে লোকজন সরিয়ে দিচ্ছেন টুরিস্ট পুলিশের সদস্যরা। একই সময়ে কর্ণফুলী সার্কেলের সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার মাসুদ রানার নেতৃত্বে পতেঙ্গা থানা ও টুরিস্ট পুলিশের যৌথ একটি টিম সৈকত থেকে খেজুরতলা এলাকা পর্যন্ত অভিযান পরিচালনা করেন।
তবে মূল পতেঙ্গা সৈকতের প্রায় এক কিলোমিটার এলাকা ফাঁকা থাকলেও আউটার রিং রোড ধরে সীতাকুণ্ডের দিকে যতই সামনে যাওয়া ততই ভিন্ন চিত্র দেখা যায়। সেখানে প্রায় অর্ধশতাধিক টিমকে ফুটবল খেলতে দেখা গেছে। আবার কোথাও কোথাও গাড়ি থামিয়ে লোকজনকে আড্ডা দিতেও দেখা গেছে।
জানতে চাইলে পতেঙ্গা সাব-জোন টুরিস্ট পুলিশের ইনচার্জ (পরিদর্শক) এনামুল হক শিমুল জাগো নিউজকে বলেন, ‘আমাদের জোনের প্রায় ১৪ জন পুলিশ সদস্য সৈকত এলাকায় পালাক্রমে ২৪ ঘণ্টা ডিউটি করছেন। মূল সৈকতে আমরা কাউকেই প্রবেশ করতে দিচ্ছি না। আশপাশের এলাকায় মোটরসাইকেল দিয়ে কিছুক্ষণ পরপর টহল দেয়া হচ্ছে। এছাড়াও সৈকতের আশপাশের দোকানপাট বন্ধ করে দেয়া হয়েছে।’
কর্ণফুলী সার্কেলের সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার মাসুদ রানা জাগো নিউজকে বলেন, ‘আমি আজকে বিকেলে টুরিস্ট ও থানা পুলিশ নিয়ে সৈকতের পশ্চিম পয়েন্ট থেকে প্রায় ৭ কিলোমিটার সামনে খেজুরতলা পর্যন্ত অভিযান পরিচালনা করেছি। এসময় বিচ্ছিন্নভাবে থাকা কিছু মানুষ ও বিচে খেলাধুলা করা লোকজনকে সরিয়ে দিয়েছি।’
জানা গেছে, করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাতে বৃহস্পতিবার (১ জুলাই) থেকে আগামী ৭ জুলাই মধ্যরাত পর্যন্ত কঠোর বিধিনিষেধ আরোপ করেছে সরকার। এ সময় জরুরিসেবা দেয়া দফতর-সংস্থা ছাড়া সরকারি-বেসরকারি অফিস, যন্ত্রচালিত যানবাহন, শপিংমল-দোকানপাট বন্ধ থাকবে।
বুধবার (৩০ জুন) মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে জারি করা প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, জরুরি অত্যাবশ্যকীয় পণ্য ও সেবার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট অফিসসমূহের কর্মচারী ও যানবাহন প্রাতিষ্ঠানিক পরিচয়পত্র প্রদর্শন সাপেক্ষে যাতায়াত করতে পারবেন।
প্রজ্ঞাপন অনুসারে যারা চলাচল করতে পারবেন তারা হলেন—আইন-শৃঙ্খলা এবং জরুরি পরিষেবা, যেমন- কৃষি পণ্য ও উপকরণ (সার, বীজ, কীটনাশক, কৃষি যন্ত্রপাতি ইত্যাদি), খাদ্যশস্য ও খাদ্যদ্রব্য পরিবহন, ত্রাণ বিতরণ, স্বাস্থ্যসেবা, কোভিড-১৯ টিকা প্রদান, রাজস্ব আদায় সম্পর্কিত কার্যাবলি, বিদ্যুৎ, পানি, গ্যাস/জ্বালানি, ফায়ার সার্ভিস, টেলিফোন ও ইন্টারনেট (সরকারি-বেসরকারি), গণমাধ্যম, বেসরকারি নিরাপত্তা ব্যবস্থা, ডাকসেবা, ব্যাংক, ফার্মেসি ও ফার্মাসিউটিক্যালসসহ অন্যান্য জরুরি অত্যাবশ্যকীয় পণ্য ও সেবার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট অফিসসমূহের কর্মচারী ও যানবাহন।
মিজানুর রহমান/এএএইচ/এএসএম