ধান আবাদটাই যেন মূল্যহীন!
আমন আবাদে এবারে বিপাকে পড়েছেন পাবনাসহ চলনবিল অঞ্চলের কৃষকরা। এক বুক আশা নিয়ে ধান চাষ করে আশানুরূপ ফলন পেয়েও খুশি হতে পারছেন না তারা। কেননা, ফলনের পর ধানের দাম কম হওয়ায় লাভতো দূরের কথা উৎপাদন খরচই উঠছেনা তাদের।
এ অবস্থায় চরম হতাশায় নিমজ্জিত তারা। এদিকে কৃষক ধানের ন্যায্য মূল্য না পেলেও মিলাররা মুনাফা অর্জন করছেন। ধানের তুষ এবং গুড়া বিক্রি করেও তারা অতিরিক্ত লাভবান হচ্ছেন। এখানে একটি মধ্যসত্বভোগী সিন্ডিকেট সক্রিয় রয়েছেন বলে কৃষকদের দীর্ঘদিনের অভিযোগ। কাজেই ধান আবাদ করে কৃষক লাভবান না হলেও আঙুল ফুলে কলা গাছ হচ্ছে মধ্য স্বত্বভোগী সিন্ডিকেটরা।
পাবনা কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের উপ-পরিচালক বিভুতি ভুষন সরকার জাগো নিউজকে জানান, এ বছর পাবনা জেলায় রোপা আমন আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৫১ হাজার ৩`শ হেক্টর এবং উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ছিল এক লাখ ৩৮ হাজার ৩২২ মেট্রিকটন। কিন্ত আবাদ হয়েছে ৫১ হাজার ৩৫০ হেক্টর এবং উৎপাদন হয়েছে এক লাখ ৬৫ হাজার ৫২২ মেট্রিকটন। যা লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি। এদিকে বোনা আমনের আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৪৩ হাজার ১৯৩ হেক্টর এবং উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৫১ হাজার ৩৮৪ মেট্রিকটন। তবে এখনো বোনা আমন কাটা শেষ না হওয়ায় কর্মকর্তারা ধারণা করছেন, উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ৫৬ হাজার ৩৮৫ মেট্রিকটনের মতো হতে পারে।
উপ-পরিচালক আরও জানান, গত বছর (২০১৪) রোপা আমনের লক্ষ্যমাত্রা ৪৮ হাজার ৯১০ হেক্টর হলেও অর্জিত হয়েছিল ৫০ হাজার ৪৪৬ হেক্টর এবং উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ছিল এক লাখ ৩২ হাজার ৩৯২ মেট্রিকটন। কিন্ত উৎপাদন অর্জিত হয়েছিল এক লাখ ৬১ হাজার ৪৪১ মেট্রিকটন।
অন্যদিকে, গত বছর বোনা আমন আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ৪২ হাজার ৬৮২ হেক্টর হলেও অর্জিত হয় ৪২ হাজার ৭১৫ হেক্টর এবং উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৫০ হাজার ৭৯৬ মেট্রিকটন কিন্ত উৎপাদন হয়েছিল ৬৩ হাজার ১৭৫ মেট্রিকটন।
এদিকে, এবারে এ অঞ্চলে আশানুরূপ আমনের ফলন হলেও ভালো দাম না পাওয়ায় হতাশায় নিমজ্জিত কৃষক। তারা জানান, এক বুক আশা নিয়ে ধান চাষ করে আশানুরূপ ফলন পেয়েও খুশি হতে পারছেন না কৃষকরা।
পাবনার চাটমোহর উপজেলার বিলকুরালিয়ার কৃষক আব্দুল মমিন, ময়েজ উদ্দিন, আব্দুর রাজ্জাক, আব্দুর রহিম জাগো নিউজকে জানান, এবারে আমন ধানের ভালো ফলন পেয়েছেন তারা। কিন্ত সার বীজ, কীটনাশক, সেচ এবং শ্রমিক মূল্যসহ উৎপাদন খরচ এত বেশি যে, ধান বেচে উৎপাদন খরচই উঠছে না।
বিলপাড়ের কৃষক আব্দুর রহিম জাগো নিউজকে জানান, প্রতি মণ ধানে দেড়`শ থেকে ২`শ টাকা করে তাদের লোকসান হচ্ছে। কিন্ত পেটের তাগিদে চাষ করা ছাড়া আর কোনো উপায় নাই তাদের। এই কৃষক জানান, গত বছর প্রতি মণ ধানের দাম ছিল সাড়ে ৭`শ থেকে ৮`শ টাকা। এতে তারা উৎপাদন খরচ কিছুটা হলেও ঘরে তুলতে পেরেছেন। কিন্তু এবারে তারা চরমভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন।
উত্তরাঞ্চলের অন্যতম বৃহত্তম হাট পাবনার আরিফপুর হাটে গিয়ে দেখা যায় নতুন আমন ধান প্রতিমণ ৫`শ থেকে সাড়ে ৫`শ এবং পুরাতন ধান প্রতি মণ ৬`শ থেকে সাড়ে ৬`শ টাকা করে বেচা কেনা হচ্ছে। হাটে আগত কৃষকরা জানান, ধানের দাম এত কম হলেও সে অনুপাতে চালের দাম বেশি। মিলাররা যে দামে চাল বিক্রি করছেন, তা ধানের দামের চেয়ে অনেক বেশি। এতে লাভবান হচ্ছেন মধ্যস্বত্বভোগীরা। এতে কৃষকের কোনো লাভই হচ্ছে না।
কৃষকরা ধানের দাম উৎপাদন খরচের চেয়ে কম পাচ্ছেন-এমন কথা স্বীকার করে পাবনা কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের উপ-পরিচালক বিভুতি ভুষন সরকার জাগো নিউজকে বলেন, ধান আবাদ, কাটা এবং মাড়াইতে আধুনিক বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি অনুসরণ বা আধুনিক যন্ত্রপাতি ব্যবহার করে কৃষকরা কিছুটা উৎপাদন খরচ সাশ্রয় করতে পারেন। তিনি আরও বলেন, সরকারিভাবে কৃষকের ধানের দাম নির্ধারণের ব্যাপারে খাদ্য বিভাগের সমন্বয় থাকলে ভালো হয়।
এ ব্যাপারে পাবনা-৩ আসনের সংসদ সদস্য এবং কৃষি মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি আলহাজ্ব মকবুল হোসেন জাগো নিউজকে একইভাবে বলেন, সরকার কৃষকের সঠিক মূল্য প্রদান এবং শ্রমিক খরচ কমানোর ব্যাপারে চিন্তা-ভাবনা করছেন। তিনি বলেন, কৃষকরা কৃষি বিভাগের সঙ্গে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ করে বা পরামর্শ গ্রহণ করে কিভাবে আধুনিক উপায়ে উৎপাদন খরচ কমানো যায় তা নিশ্চিত করতে পারেন।
একে জামান/এমজেড/পিআর