স্বাধীনতা স্তম্ভ রক্ষণাবেক্ষণে বিশেষ কর্তৃপক্ষ থাকবে
সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে স্বাধীনতা স্তম্ভ প্রকল্পটি রক্ষণাবেক্ষণের জন্য বিশেষ একটি কর্তৃপক্ষ তৈরি করা হবে বলে জানিয়েছেন মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক। তিনি বলেন, ‘আমাদের লক্ষ্য প্রতিদিন ১০ হাজার মানুষ এ প্রকল্প দেখতে আসবেন। প্রাথমিকভাবে আমরা আশা করছি, পাঁচ হাজার দর্শনার্থী আসবেন। যাদের মধ্য থেকে দুই হাজার দর্শনার্থীকে মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে আনা হবে। এই বিশালসংখ্যক মানুষের জন্যই স্বাধীনতা স্তম্ভ তৈরি করা হচ্ছে।’
বৃহস্পতিবার (২৪ জুন) দুপুরে গণপূর্ত ভবনের সম্মেলন কক্ষে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয় আয়োজিত এক কর্মশালায় তিনি এসব কথা বলেন। মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব খাজা মিয়ার সভাপতিত্বে সোহ্রাওয়ার্দী উদ্যানে স্বাধীনতা স্তম্ভ নির্মাণ (তৃতীয় পর্যায়) প্রকল্পের আওতায় চলমান কার্যক্রম অবহিতকরণ ও উদ্যানকে সবুজায়নের বিষয়ে উদ্ভিদবিদ, পরিবেশবিদ, স্থপতি, প্রকৌশলী ও সুশীল সমাজের প্রতিনিধিদের সমন্বয়ে এ মতবিনিময় কর্মশালা অনুষ্ঠিত হয়৷
আ ক ম মোজাম্মেল হক বলেন, ‘এ বিশাল প্রকল্পে খুব সহজেই পাঁচ থেকে ছয় ঘণ্টা সময় কাটাতে পারবেন। যার জন্য টয়লেট ফ্যাসিলিটিসহ ফুড কিয়স্ক নির্মাণ করা হচ্ছে। এখানে কোনো খাবার তৈরি করা হবে না। সুতরাং পরিবেশ নষ্ট হওয়ার সুযোগ নেই। এটা রেইন শেড হিসেবেও ব্যবহার করা হবে। স্বাধীনতা স্তম্ভ প্রকল্পটি রক্ষণাবেক্ষণের জন্য বিশেষ একটি কর্তৃপক্ষ তৈরি করা হবে। যার আওতায় আমরা রমনা পার্ককেও এনরিচ করা হবে।’
গাছ কাটার প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘সর্বমোট ১০০টি গাছ কাটার কথা ছিল। ৬০ থেকে ৭০টি গাছ কাটা হয়েছে। আর বৃক্ষ নিধন হবে না। হলেও আরও হয়ত ৫ থেকে ১০টি গাছ কাটার প্রয়োজন হতে পারে। তবে প্রচুর বৃক্ষ লাগানো হবে।’
সভায় ন্যাশনাল হারবেরিয়ামের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা মো. নাসির উদ্দিন বলেন, ‘উদ্যানে আরও কীভাবে গাছপালা বাড়ানো যায় এবং সেখানে যাতে বিদেশি কোনো গাছ লাগানো না হয় সেদিক খেয়াল রাখতে হবে। বিশেষ করে বিলুপ্ত প্রজাতির দেশীয় গাছ লাগাতে যেতে পারে।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক হারুনুর রশিদ বলেন, ‘নকশায় বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণসহ মুক্তিযুদ্ধের স্থাপনাগুলো ফুটে ওঠেনি। আর রেস্টুরেন্টসহ এ ধরনের যা কিছু মাটির নিচেই হওয়া উচিত।’
অধ্যাপক জসীম উদ্দিন বলেন, ‘প্রকল্প হওয়ার বিষয়ে আমাদের কোনো আপত্তি নেই। কিন্তু স্থাপনা যাতে কম থাকে সেদিকে ও পরিবেশের দিকে নজর দিতে হবে।’
অধ্যাপক ড. মো. আজমল হোসেন ভূঁইয়া বলেন, ‘নকশা দেখে মনে হচ্ছে এটি পার্কেরই পরিবর্তিত রূপ। এটি বিনোদন কেন্দ্র হওয়া উচিত নয়। মুক্তিযুদ্ধের চেতনার আলোকে পরিবেশ ঠিক রেখে নকশা সংশোধন করা প্রয়োজন। আমরা স্বাধীনতা স্তম্ভ চাই তবে সেটা পরিবেশ এবং প্রতিবেশ ধ্বংস করে নয়।’
জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক মনজুরুল আহসান বুলবুল বলেন, ‘প্রকল্পের বিষয়ে প্রকৃত তথ্য না থাকায় গুজব ছড়িয়ে পড়েছে। মন্ত্রণালয়ের উচিৎ পরিষ্কার করে বলা ঠিক কতগুলো গাছ কাটা হবে। পরিবেশ-জীবন ও ইতিহাস সমন্বয় করে দ্রুত প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করতে হবে।’
একাত্তর টেলিভিশনের প্রধান নির্বাহী ও প্রধান সম্পাদক মোজাম্মেল হক বাবু বলেন, ‘একটি ফুল ছিঁড়লেও পরিবেশ ধ্বংস। এটা খেয়াল রেখে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে প্রকল্প বাস্তবায়নে দেশ সেরা স্থপতিদের নিয়ে নকশা সংশোধন করা উচিত। ফুড কিয়স্ক, টয়লেটের মতো এ ধরনের যেসব স্থাপনা করার কথা বলা হয়েছে এগুলো কেন মাটির ওপরে করা হবে? এগুলো তো মাটির নিচে করা যায়। ৫০ ফুট ওয়াকওয়ে কেন করা হচ্ছে এটির কেন প্রয়োজন? এখানে কোনো গাড়ি চলবে না।’
সভায় ২০২১ সালের এপ্রিল মাস পর্যন্ত কাজের অগ্রগতি জানানো হয়। বলা হয়, ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৭ মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণের স্থানে ভাস্কর্য নির্মাণের জন্য দ্বিতীয় দফায় দরপত্র আহ্বানের মাধ্যমে পাওয়া ভাস্কর্য মডেলগুলো থেকে চূড়ান্ত বাছাই সম্পন্ন হয়েছে। ১৬ ডিসেম্বরে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর আত্মসমর্পণের স্থানে ভাস্কর্য নির্মাণের জন্য দ্বিতীয় দফায় দরপত্র আহ্বানের মাধ্যমে পাওয়া ভাস্কর্য মডেলগুলো থেকে চূড়ান্ত বাছাই সম্পন্ন হয়েছে। ৫০০ গাড়ির ধারণক্ষমতাসম্পন্ন ভূগর্ভস্থ কার পার্কিংয়ের ভৌত অগ্রগতি ৮০%, ওয়াটার ফাউন্টেন নির্মাণের ভৌত অগ্রগতি ৮০%, ৭টি ফুড কিয়স্ক নারী, পুরুষ ও প্রতিবন্ধীদের জন্য আলাদা টয়লেট ফ্যাসিলিটিসহ নির্মাণের ভৌত অগ্রগতি ৭৫%, ওয়াকওয়ে নির্মাণের ভৌত অগ্রগতি ২৫% এবং মসজিদ নির্মাণের ভৌত অগ্রগতি ৮০%।
আইএইচআর/এসএস/জিকেএস