চিকিৎসা সেবা নিতে প্রতিবছর দরিদ্র হচ্ছে ৬৪ লাখ মানুষ
চিকিৎসাসেবা নিতে গিয়ে বাংলাদেশে প্রতিবছর প্রায় ৬৪ লাখ মানুষ দরিদ্র হয়ে পড়ছে এবং বহু মানুষ ক্যান্সার ও কিডনি বিকল হওয়ার মতো রোগের চিকিৎসা-ব্যয় মেটাতে পারছে না। সোমবার রাজধানীর আইসিডিডিআর,বি-তে শুরু হওয়া স্বাস্থ্যবিষয়ক এক সম্মেলনে এ তথ্য জানানো হয়।
প্রথম দিনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে পাবলিক হেলথ ফাউন্ডেশন অব বাংলাদেশের চেয়ারম্যান অধ্যাপক এম মুজাহেরুল হক বলেন, বাংলাদেশে যথেষ্ট সংখ্যক স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠান, চিকিৎসক ও অন্যান্য কর্মী থাকলেও নাগরিকরা প্রয়োজনীয় স্বাস্থ্যসেবা পাচ্ছে না।
মূল নিবন্ধ উপস্থাপনকালে স্বাস্থ্য অধিদফতরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল কালাম আজাদ বলেন, দেশে বর্তমানে যতটুকু স্বাস্থ্যসেবা সুবিধা রয়েছে, সেটুক কাজে লাগিয়ে সবার জন্য স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে হবে।
অনুষ্ঠানে বক্তরা বলেন, ডায়াবেটিস ও উচ্চ রক্তচাপের মতো রোগের চিকিৎসা গ্রহণের জন্যও বাংলাদেশের মানুষের আর্থিক সক্ষমতা যথেষ্ট নয় এবং সে কারণে রোগ প্রতিরোধের ওপর অধিক গুরুত্ব দেয়া উচিত।
সম্মেলনের প্রথম দিন বাংলাদেশে স্বাস্থ্যসেবা পরিস্থিতি, শিশুস্বাস্থ্য, সংক্রামক ও অসংক্রামক ব্যাধি এবং পরিবেশগত স্বাস্থ্যসহ বিভিন্ন বিষয়ে আরও ২৫টি গবেষণা প্রতিবেদন ও নিবন্ধ উপস্থাপন করা হয়।
এর মধ্যে একটি গবেষণা প্রতিবেদনে দেখা যায়, ইঞ্জেকশনের মাধ্যমে মাদকগ্রহণকারীদের মধ্যে ২৭ দশমিক ৬ শতাংশ অন্যের ব্যবহৃত সূঁচের সাহায্যে মাদক নেন। এর ফলে তারা এইচআইভি/এইডস ও হেপাটাইটিস বি-এর মতো সংক্রামক ব্যাধিতে আক্রান্ত হওয়ার উচ্চ মাত্রার ঝুঁকির মধ্যে পড়েন।
হেপাটাইটিস বি বিষয়ে মানুষের জ্ঞান, দৃষ্টিভঙ্গি ও চর্চা মূল্যায়নের লক্ষ্যে নর্দার্ন ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশ ঢাকার একটি চিকিৎসাকেন্দ্রে দেড়শ’ রোগীর ওপর চলতি বছর এ গবেষণা চালায়।
বিশ্ববিদ্যালয়ের জনস্বাস্থ্য বিভাগের শিক্ষক ডা. সাজিয়া হক গবেষণা প্রতিবেদন তুলে ধরেন। এতে দেখা যায়, গবেষণায় অংশগ্রহণকারীদের ৪৪ দশমিক ৭ শতাংশ বহুগামী যৌনাচারে অভ্যস্ত যাদের মধ্যে ৬১ দশমিক ২ শতাংশ শারীরিক সম্পর্কের সময় সুরক্ষামূলক ব্যবস্থা নেন না।
প্রতিবেদনে দেখা যায়, গবেষণায় অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে যারা অন্যের রক্ত গ্রহণ করেছেন, তাদের ১ দশমিক ৩ শতাংশ পরীক্ষাহীন রক্ত নিয়েছেন। ৭০ দশমিক ৭ শতাংশ উত্তরপ্রদানকারী জানিয়েছেন, তারা কখনো হেপাটাইটিস বি ভাইরাসের টিকা নেননি।
সম্মেলনে অংশগ্রহণকারী বিশেষজ্ঞরা এসব প্রাণঘাতী সংক্রামক রোগ প্রতিরোধে পূর্ণবয়স্ক মানুষের মধ্যে সচেতনতা সৃষ্টির আহ্বান জানান।
তৃতীয় পাবলিক হেলথ ফাউন্ডেশন দিবস উপলক্ষে পাবলিক হেলথ ফাউন্ডেশন অব বাংলাদেশ এবং ফেইথ বাংলাদেশ এ সম্মেলনের আয়োজন করে।
আনোয়ার খান মডার্ন মেডিকেল কলেজ পরিচালিত আরেকটি গবেষণায় দেখা যায়, ডায়ারিয়া, জ্বর ও নিউমোনিয়া এখন শিশু মৃত্যুর প্রধান তিনটি কারণ। চলতি বছরের জুনে ধামরাই উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি ২০৮টি পাঁচ বছরের কম বয়সী শিশুর ওপর ওই গবেষণা চালানো হয়।
ওইসব শিশুর ২৬ শতাংশ ডায়রিয়া, ২১ শতাংশ জ্বর, ১৬ শতাংশ নিউমোনিয়া, ১৩ শতাংশ সাধারণ ঠান্ডা ও ১১ শতাংশ পুষ্টিহীনতায় ভুগছিল।
অন্য একটি গবেষণায় দেখা যায়, ধূমপান, হতাশা, চাকরি-সম্পর্কিত মানসিক চাপ, উচ্চ রক্তচাপ ও ডায়াবেটিসের সঙ্গে সন্তান জন্মদানে অক্ষমতার সম্পর্ক রয়েছে। নর্দার্ন ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশ সন্তান জন্মদানে অক্ষমতা-সম্পর্কিত ১৬০টি ঘটনা নিয়ে ওই গবেষণা চালায় এবং সংশ্লিষ্ট ৪৫ শতাংশ উত্তরদাতা জানান তারা ধূমপায়ী।
এছাড়া ৩৮ দশকিম ৫ শতাংশ উত্তরপ্রদানকারী তাদের মধ্যে হতাশা, ৩৭ দশমিক ৭ শতাংশ চাকরি নিয়ে মানসিক চাপ, ৩৬ দশমিক ৫ শতাংশ উচ্চ রক্তচাপ, ২৬ দশমিক ৯ শতাংশ ডায়াবেটিস এবং ২৪ দশমিক ৪ শতাংশ পারিবারিক সমস্যার কথা জানান।
বিশ্ববিদ্যালয়ের জনস্বাস্থ্য বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডা. সর্দার মাহমুদ হোসেন এ গবেষণা প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন।
অন্য একটি নিবন্ধে ব্র্যাক ইউনিভার্সিটির ডা. রজত দাশগুপ্ত জানান, নবজাতকের মৃত্যুহার কমানোর ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ‘সঙ্গত ও ইতিবাচক’ ফল অর্জন করেছে, তবে আরও ভাল ফল পাওয়ার জন্য উদ্যোগ গ্রহণের সুযোগ আছে।
এমইউ/এসকেডি/আরআইপি