বিটকয়েন দিয়ে পর্নোগ্রাফি কিনে বেশি দামে বিক্রি করত তারা

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ০৩:১৮ পিএম, ২০ জুন ২০২১

রাজধানীর দারুস সালাম এলাকা থেকে অবৈধ বিটকয়েন ক্রয়-বিক্রয় চক্রের অন্যতম হোতা হামিমসহ চার সদস্যকে গ্রেফতার করেছে র‌্যাব-৪। হামিম ২০১৩ সালে একটি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র থেকে কম্পিউটারের ওপর দক্ষতা লাভ করে। এরপর সে নিজেই একটি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র খুলে ৫০ জনকে বিটকয়েন জালিয়াতির প্রশিক্ষণ দিয়ে আসছিল।

এ চক্রের কয়েক হাজার সদস্য রয়েছে। প্রতি মাসে তারা দেড় কোটি টাকা বিটকয়েনের মাধ্যমে লেনদেন করত। তারা ভার্চুয়াল জগতে অবৈধ ডার্ক পর্নোসাইট থেকে পর্নোগ্রাফি ক্রয় করে। এরপর পর্নোগ্রাফিগুলো বেশি অর্থের বিনিময়ে দেশের বিভিন্ন ব্যক্তির কাছে ছড়িয়ে দেয়।

রোববার (২০ জুন) দুপুরে র‌্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান র‌্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন।

বিটকয়েন চক্রের অন্যতম হোতা হামিম প্রিন্স খান (৩২)। এ চক্রের অন্য সদস্যরা হলেন- রাহুল সরকার (২১), সঞ্জিব দে ওরফে তিতাস (২৮) ও মো. সোহেল খান (২০)। এ সময় তাদের কাছ থেকে দুটি ল্যাপটপ ও দুটি ডেবিট কার্ড জব্দ করা হয়।

সংবাদ সম্মেলনে কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, সম্প্রতি র‌্যাবের গোয়েন্দা দল জানতে পারে, একটি চক্র অবৈধ ভার্চুয়াল মুদ্রা, ক্রিপ্টো কারেন্সি, বিটকয়েন লেনদেনের সঙ্গে জড়িত। চক্রটি ডার্ক সাইট থেকে ভার্চুয়াল মুদ্রা, ক্রিপ্টো কারেন্সি, বিটকয়েন ব্যবহার করে পর্নোগ্রাফি কেনাবেচার মাধ্যমে ছড়িয়ে দিচ্ছে। এরই প্রেক্ষিতে র‌্যাব-৪ এর গোয়েন্দা নজরদারি বৃদ্ধি করে এবং ছায়া তদন্ত শুরু করে।

তিনি বলেন, গ্রেফতাররা ভার্চুয়াল জগতে বা ইন্টারনেটের বিভিন্ন সাইট থেকে অ্যাকাউন্ট করে ভার্চুয়াল মুদ্রা, ক্রিপ্টো কারেন্সি, বিটকয়েন ক্রয়-বিক্রয় করে। তারা মোবাইল ব্যাংকিং বা ইলেক্ট্রনিক মানি ট্রান্সফারের মাধ্যমে বাংলাদেশি বেশকিছু অসাধু ডোমেইন হোল্ডার ও ব্যবসায়ী চক্রের সঙ্গে অর্থ লেনদেন করে। তারা ভার্চুয়াল জগতে অবৈধ ডার্ক পর্নোসাইট থেকে পর্নোগ্রাফি ক্রয় করে। এরপর পর্নোগ্রাফিগুলো বেশি অর্থের বিনিময়ে দেশের বিভিন্ন ব্যক্তির কাছে ছড়িয়ে দেয়।

চক্রটির সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমসহ বিভিন্নভাবে ভার্চুয়াল মুদ্রা, ক্রিপ্টো কারেন্সি, বিটকয়েন অত্যন্ত লাভজনক বলে প্রচারণা চালায়। এ প্রচারণার মাধ্যমে যুবক-যুবতীদের অবৈধ লেনদেনে প্রলুব্ধ করত। আগ্রহীদের তারা অর্থের বিনিময়ে ক্রিপ্টো কারেন্সি প্রশিক্ষণ দিয়ে অর্থ হাতিয়ে নিত।

এছাড়া তারা বেশকিছু আগ্রহীকে প্রলুব্ধ করে। তারা তাদের কাছ থেকে নেয়া কোটি কোটি টাকা বিনিয়োগ করে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে একটি গ্রুপের সঙ্গে জড়িত যেখানে বিটকয়েন ব্যবসায় আগ্রহীরা যুক্ত করত। গ্রুপের কয়েক হাজার সদস্য রয়েছে। তারা প্রতি মাসে প্রায় দেড় কোটি টাকা লেনদেন করে।

jagonews24

যেভাবে অবৈধভাবে ক্রেডিট কার্ড হ্যাকিং করে বিটকয়েন ক্রয়-বিক্রয়ের জগতে প্রবেশ

চক্রের অন্যতম হোতা গ্রেফতার হামিম প্রিন্স খান ২০১৩ সালে ফরিদপুরের একটি কলেজ থেকে ইংরেজিতে বিএ (সম্মান) পাস করেন। এরপর ২০১৩ সালে একটি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র থেকে কম্পিউটারের ওপর দক্ষতা লাভ করে প্রশিক্ষণ দিয়ে আসছিলেন।

পরবর্তীতে তিনি ক্রিপ্টো কারেন্সির ওপর দক্ষতা লাভ করে প্রায় ৫০ এর অধিক বিটকয়েন লেনদেন প্রশিক্ষণ দিয়েছে। বিটকয়েন ছাড়াও সে লিটকয়েন, ডগকয়েন, ইথারিয়াম, ব্রাস্ট ও ন্যানো লেনদেনের সঙ্গে জড়িত।

সে মূলত যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য এবং কানাডাসহ উন্নত বিশ্বের অন্যান্য দেশে এ কার্যক্রম চালিয়ে দেশের বিপুল পরিমাণ অর্থপাচার করে আসছিল। তার বিরুদ্ধে ক্রেডিট কার্ড জালিয়াতির অভিযোগ রয়েছে। সে প্রোগ্রামিং ল্যাংগুয়েজ ব্যবহার করে অন্যের ক্রেডিট কার্ড হ্যাক করে বিট কয়েন ক্রয় করে এই অবৈধ কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছিল। ভার্চুয়াল জগতে তার ১৫-১৬টি ওয়ালেট রয়েছে।

গ্রেফতার রাহুল সরকার একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে কম্পিউটার বিজ্ঞানে অধ্যয়নরত। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে হামিমের সঙ্গে পরিচয় হয়। পরবর্তীতে হামিমের মাধ্যমে উদ্বুদ্ধ হয়ে ২০২০ সালের শেষ দিকে তিনি বিটকয়েন লেনদেনের সঙ্গে জড়িত হয়। তার বিনান্স ওয়ালেটসহ বেশ কয়েকটি ওয়ালেট রয়েছে।

গ্রেফতার সঞ্জিব দে ওরফে তিতাস ফরিদপুরের স্থানীয় একটি কলেজে অধ্যয়নরত। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে হামিমের সঙ্গে পরিচয়ের পর থেকেই হামিম তাকে লাভবান হওয়ার প্রলোভন দেখিয়ে বিট কয়েন লেনদেনে উদ্বুদ্ধ করে। তিনি হামিমের কথায় উদ্বুদ্ধ হয়ে নিজের নামে বিটকয়েনে ‘ক্লোনিক্স ওয়ালেট’ ও ‘বেটলেক্স ওয়ালেট’ নামে অ্যাকাউন্ট খুলে অর্থ লেনদেন করে আসছিল।

গ্রেফতার সোহেল খান মূলত সফটওয়্যার ডেভেলপমেন্ট, ওয়েভ ডেভেলপিং ও গ্রাফিক্স ডিজাইনের মাধ্যমে অল্প কিছু অর্থ উপার্জন করত। পরবর্তীতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে চটকাদার বিজ্ঞাপনের লোভে পড়ে হামিমের সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপন করে বিটকয়েনে নিজের নামে ওয়ালেট খোলে এ অবৈধ লেনদেন করে আসছিল। অনলাইনে তার বিমান্স ওয়ালেটসহ বেশ কয়েকটি ওয়ালেট রয়েছে বলেও জানান র‌্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন।

টিটি/এমআরএম/এমকেএইচ

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।