দেশে সিনোফার্মের টিকা দেয়া শুরু
রাজধানীসহ সারাদেশে চীনের দেয়া সিনোফার্মের টিকাদান কার্যক্রম শুরু হয়েছে। দ্বিতীয় পর্যায়ে গণটিকাদান শুরুর প্রথম দিনে ঢাকায় চারটি কেন্দ্রে টিকা দেয়া হচ্ছে।
তবে দেশের প্রতিটি জেলায় একটি করে কেন্দ্রে এ টিকাদান কার্যক্রম চলছে। বৃষ্টিস্নাত দিন হলেও অগ্রাধিকারভিত্তিতে নিবন্ধন করা মেডিকেল শিক্ষার্থীরা ব্যাপক উৎসাহ-উদ্দীপনা নিয়ে টিকা নিতে আসছেন।
শনিবার (১৯ জুন) বেলা সাড়ে ১১টায় সরেজমিন ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের টিকাদান কেন্দ্র ঘুরে দেখা গেছে, এ কেন্দ্রে ঢামেক, আনোয়ার খান মর্ডান ও কেয়ার মেডিকেল এই তিনটি সরকারি ও বেসরকারি মেডিকেল কলেজের শিক্ষার্থীরা টিকা দিতে এসেছেন।
হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ কেন্দ্রে আগাম টিকার জন্য তালিকা পাঠিয়েছেন। তালিকা অনুযায়ী নির্দিষ্ট ফরম পূরণ করে সুশৃঙ্খলভাবে টিকা নিচ্ছেন।
ঢামেক হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল নাজমুল ইসলাম বলেন, ‘আজ থেকে চীনের সিনোফার্মের টিকাদান শুরু হলো। প্রাথমিকভাবে আগামী ৩-৪ দিন ঢামেক ও আরও দু’টি বেসরকারি মেডিকেল কলেজের শিক্ষার্থীদের টিকা দেয়া হবে। পরবর্তীতে প্রবাসীকর্মীসহ অগ্রাধিকার তালিকায় থাকাদের পর্যায়ক্রমে টিকা দেয়া হবে।
তিনি বলেন, ‘ভারতীয় ডেল্টা ভ্যারিয়েন্ট মারাত্মক আকারে ছড়িয়ে পড়লে যেন রোগীর সেবা ব্যাহত না হয়, সেজন্য আগে মেডিকেল শিক্ষার্থীদের টিকা দেয়া হচ্ছে।’
এর আগে স্বাস্থ্য অধিদফতরের লাইন ডাইরেক্টর (এমএমসি অ্যান্ড এ এইচ) ও সদস্য সচিব (করোনা ভ্যাকসিন ব্যবস্থাপনা কমিটি) ডা. মো. শামসুল হক জানান, দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে চীনের সিনোফার্মের টিকা প্রদানের লক্ষ্যে টিকার মজুতসহ সার্বিক প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে। এ টিকা দেশের সকল সরকারি মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, সরকারি জেনারেল হাসপাতাল, জেলা সদর হাসপাতাল এবং ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতালের নির্দিষ্ট কেন্দ্র থেকে দেয়া হবে।
তিনি আরও জানান, করোনা ভ্যাকসিনেশনের জন্য নির্ধারিত কেন্দ্রে ইতোমধ্যে যেসব ব্যক্তি নিবন্ধন করেছেন কিন্তু এখন পর্যন্ত কোনো টিকা পাননি, তাদেরকে টিকা দেয়া হবে।
আজ সিনোফার্মের টিকাদান শুরু হলেও যুক্তরাষ্ট্র থেকে উপহার হিসেবে পাওয়া ফাইজারের এক লাখ ছয় হাজার ডোজ করোনার টিকা প্রদান শুরু হচ্ছে না। এর আগে গত ১৪ জুন রাজধানীর মহাখালীর বিসিপিএস অডিটরিয়ামে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক সিনোফার্ম ও ফাইজারের টিকাদান ১৯ জুন শুরুর আশাবাদ ব্যক্ত করেছিলেন।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে স্বাস্থ্য অধিদফতরের একজন কর্মকর্তা বলেন, ফাইজারের টিকা দেয়ার জন্য যে ডাইলোশন দরকার তা টিকার সঙ্গে আসেনি। তাই এই মুহূর্তে টিকা দেয়া যাচ্ছে না।
জানা গেছে, আগে যারা ভ্যাকসিন নেননি, এমন সরকারি স্বাস্থ্যকর্মী, পুলিশ সদস্য, বিদেশগামী বাংলাদেশি অধিবাসী কর্মী, সরকারি-বেসরকারি মেডিকেল ও ডেন্টাল কলেজের শিক্ষার্থী, সরকারি নার্সিং ও মিডওয়াইফারি সরকারি ম্যাটস ও সহকারী আইএসটি শিক্ষার্থীরা এক্ষেত্রে অগ্রাধিকার পাবেন। সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হলের শিক্ষার্থীরাও এই টিকা পাবেন।
বাংলাদেশ ইনভেস্ট ডেভেলপমেন্ট অথরিটির (বিডা) আওতাধীন ও অন্যান্য জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ উন্নয়নমূলক সরকারি প্রকল্প কর্মকাণ্ডে সম্পৃক্ত কর্মকর্তা-কর্মচারী (যেমন : পদ্মা সেতু প্রকল্প, মাতারবাড়ী বিদ্যুৎ প্রকল্প, মেট্রোরেল প্রকল্প, এক্সপ্রেস হাইওয়ে প্রকল্প, রূপপুর বিদ্যুৎ প্রকল্প ও রংপুর বিদ্যুৎ প্রকল্প ইত্যাদি), ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশন এলাকার পরিচ্ছন্নতাকর্মী, সারাদেশে করোনা রোগীর মৃতদেহ সৎকারে নিয়োজিত ওয়ার্ড পৌরসভার কর্মী এবং বাংলাদেশে বসবাসরত চীনা নাগরিকরা অগ্রাধিকার ভিত্তিতে এই টিকা পাবেন।
করোনার টিকা প্রদানের ক্ষেত্রে প্রতি জেলায় (ঢাকা জেলা বাদে) একটি করে ভ্যাকসিনেশন কেন্দ্র হবে এবং প্রতিটি কেন্দ্রে দুটি করে বুথ থাকবে। ঢাকা জেলায় চারটি মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের (ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও মুগদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল) প্রত্যেকটিতে একটি করে ভ্যাকসিনেশন কেন্দ্র হবে এবং প্রতিটি কেন্দ্রে দুটি করে বুথ থাকবে।
যেসব জেলায় মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল নেই, সেসব জেলায় সিভিল সার্জন জেলা করোনা টিকা কমিটির সঙ্গে আলোচনা করে সদর হাসপাতাল, ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতালের যেকোনো একটিকে নির্বাচন করে ভ্যাকসিনেশন কেন্দ্র হিসেবে ঘোষণা দেয়া হবে এবং ওই কেন্দ্রে দুটি করে বুথ থাকবে।
ভ্যাকসিনেশন কেন্দ্র প্রতিদিন (শুক্রবার ও সরকারি ছুটির দিন ব্যতীত) সকাল আটটা থেকে বিকেল তিনটা পর্যন্ত খোলা থাকবে। ভ্যাকসিন গ্রহীতার সংখ্যার ওপর ভিত্তি করে বুথ চালু করতে হবে।
করোনার টিকা গ্রহীতার সংখ্যার ওপর ভিত্তি করে বুথ চালু করতে হবে (যেমন: ১৫০-২০০ জনের জন্য একটি বুথ, ২০০ জনের বেশি হলে দুটি বুথ)। প্রতিটি বুথে দুজন ভ্যাকসিনেটর ও তিনজন ভলান্টিয়ার থাকবেন।
টিকার প্রথম ডোজ প্রদানের ২৮ দিন পর দ্বিতীয় ডোজ দিতে হবে। সংযুক্ত ফরমেট অনুযায়ী টিকা গ্রহীতাদের তালিকাভুক্ত করে টিকা দিতে হবে। প্রতিটি ভ্যাকসিনেশন কেন্দ্রে একটি নির্দিষ্ট মেডিকেল টিম থাকতে হবে, যাদের এইএফআই ব্যবস্থাপনার জন্য প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি থাকবে। কেন্দ্রের ফোকাল পারসন সার্বক্ষণিক তদারকি করবেন। নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় প্রচার-প্রচারণা করবেন। নির্দিষ্ট প্রতিষ্ঠানসমূহে যেসব ব্যক্তি আগে নিবন্ধন করেছেন কিন্তু এখন পর্যন্ত একটি টিকা পাননি, তাদেরকে টিকা দিতে হবে।
এক্ষেত্রে নির্দিষ্ট কেন্দ্র থেকে এসএমএসের মাধ্যমে জানানো হবে। কেন্দ্র পরিবর্তন করে টিকা দেয়া যাবে না। যারা আগে অন্য কোনো করোনা টিকা নিয়েছেন তাদেরকে দেয়া যাবে না। অনিবন্ধিত ব্যক্তি টিকা গ্রহণ করতে পারবেন না। অন্য কোনো দেশ থেকে প্রথম ডোজ গ্রহণ করে বাংলাদেশে আসলে দ্বিতীয় ডোজ দেয়া যাবে না। টিকা দেয়ার পর সুরক্ষা ওয়েব পোর্টাল অ্যাপে তথ্য তাৎক্ষণিকভাবে হালনাগাদ করতে হবে।
করোনার টিকা পাবেন না যারা
অনূর্ধ্ব ১৮ বছর বয়সী জনগোষ্ঠী, গর্ভবতী ও স্তন্যদানকারী মা, টিকা গ্রহণের সময় জ্বরাক্রান্ত বা অসুস্থ ব্যক্তি। প্রথম ডোজ গ্রহণের পর মারাত্মক পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হয়ে থাকলে।
অনিয়ন্ত্রিত দীর্ঘমেয়াদি রোগ যেমন : ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, হৃদরোগ, স্ট্রোক বা শ্বাসকষ্ট, কিডনি রোগ, ডায়ালাইসিস নিচ্ছেন এমন ব্যক্তি, ক্যান্সার আক্রান্ত এবং স্বল্প রোগ-প্রতিরোধক্ষমতা জনগোষ্ঠীর ক্ষেত্রে প্রয়োজনে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে হবে বলে চিঠিতে উল্লেখ করা হয়।
এমইউ/এএএইচ/এমএস