আদাবরে হাসপাতালের মালিকসহ ১০ জনের জেল-জরিমানা
রাজধানীর আদাবরে এসপি এবং এসপি-২ হাসপাতালে অভিযান চালিয়ে ১০ জনের সাড়ে ১৪ লাখ টাকা জরিমানা করেছে র্যাব পরিচালিত ভ্রাম্যমাণ আদালত। আটকৃতদের মধ্যে হাসপাতালের মালিকও রয়েছেন।
স্থানীয়রা জানান, রোগীদের সঙ্গে প্রতারণা, অনুনোমোদিত ওষুধ সরবরাহ, ভূয়া ডাক্তার দিয়ে চিকিৎসা দেয়া, রোগের কোনো বিবরণ উল্লেখ না করেই প্রেসক্রিপশন প্রদানসহ নানা অভিযোগে তাদের আটক করে র্যাব-২ এর সদস্যরা।পরে ভ্রাম্যমাণ আদালত সাক্ষ্য-প্রমাণ ও স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দির ভিত্তিতে তাদের জেল-জরিমানা করে।
দণ্ডপ্রাপ্তরা হলেন, ভূয়া চিকিৎসক পরিচয়দানকারী ও মালিক সনজ্যিৎ চক্রবর্তী (৪০), মো. দিদার (২৮), নরোত্তম কুমার (৪৫), ছোটন চন্দ্র দাশ (২৩), অনুজ বিশ্বাস (৪০), নিপা আক্তার (২০), মার্জিয়া মোহসিনা শেফালী (২৫), মো. আতাউর রহমান(৫৪), পংকজ মিত্র(২৫) ও গীতম কুমার (৪৩)।
শনিবার দুপুর সাড়ে ১২টা থেকে বিকেল ৩টা পর্যন্ত র্যাব-২ এর উপ-পরিচালক মো. দিদারুল আলমের নেতৃত্বে র্যাবের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ হেলাল উদ্দিন ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করেন।
এসময় স্বাস্থ্য অধিদফতরের পরিচালক প্রফেসর ডা. সামিউল ইসলাম (সাদী), পরিচালক প্রফেসর ডা. মো. আব্দুর রশিদ এবং ড্রাগ অধিদফতরের মো. মুহিদ ইসলামের উপস্থিত ছিলেন।
র্যাব-২ এর উপ-পরিচালক মো. দিদারুল আলম বলেন, রাজধানীর আদাবর ৩২-৩৫, প্রবাল হাউজিং, রিং রোডে এসপি হাসপাতালে অভিযান চালিয়ে দেখা যায়, চিকিৎসা সেবার নামে সাধারণ মানুষের সঙ্গে প্রতারণার দৃশ্য। চিকিৎসার জন্য বিএমডিসি অনুমতি নেই, ডাক্তার রোগের কোনো বিবরণ বলতে পারছেন না। তবে ঠিকই পরামর্শ পত্র দিচ্ছেন।
পরে জানা যায় যে, এদের অধিকাংশই ভূয়া ডাক্তার। এ ঘটনায় ভূয়া চিকিৎসক ও মালিক পরিচয় দানকারী সনজ্যিৎ চক্রবর্তীসহ (৪০) ৯ জনকে আটক করা হয়।
আটকৃতরা জিজ্ঞাসাবাদে জানায়, স্বাস্থ্য অধিদফতরের ল্যাইসেন্সবিহীন, অভিজ্ঞ ল্যাব টেকনিশিয়ান ছাড়া ল্যাব পরিচালনা করা, প্রয়োজন ছাড়াই সকল রোগীর এমআরআই করা, লাইসেন্সবিহীন প্যাথলজিও ফার্মেসি, ইসিজি, ইকো, আলট্রাসোনো করা, মেডিকেল টেকনোলোজিস্ট দিয়ে বিএমডি স্টাডি টেস্ট করানো, এমআরআই করানো ডাক্তারের কাগজ দেখাতে ব্যর্থ হয়।
অর্থোপেডিক ব্যতিত জেনারেল ডাক্তার দ্বারা রোগীর চিকিৎসা করা ইত্যাদি চলছিল ওই হাসপাতালে।
ভ্রাম্যমাণ আদালতের পরিচালক র্যাবের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ হেলাল উদ্দিন বলেন, আটকরা জিজ্ঞাসাবাদে এ বিষয়ে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেয়ায় ড্রাগ অ্যাক্ট আইনে এবং ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ আইন ২০০৯ এর ৫২ ধারা মোতাবেক এসপি হাসপাতালের মালিক ও ভুয়া ডাক্তার সনজ্যিৎ চক্রবর্তীকে (৪০) সাড়ে ৪ লাখ টাকা জরিমানা ও অনাদায়ে চার মাসের কারাদণ্ড দেয়া হয়।
একইভাবে সিনিয়র অফিসার এডমিন মো. দিদার (২৮) ও নরোত্তম কুমারকে (৪৫) ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ আইন ২০০৯ এর ৫২ ধারা মোতাবেক ৪ লাখ টাকা জরিমানা, অনাদায়ে প্রত্যেককে দুই মাসের কারাদণ্ড,
এমআরআই টেকনিশিয়ান ছোটন চন্দ্র (২৩) ও অনুজ বিশ্বাসকে (৪০) একই আইনে দুই লাখ টাকা জরিমানা ও অনাদায়ে প্রত্যেককে দুই মাসের কারাদণ্ড, ম্যার্কেটিং ম্যানেজার গেীতম কুমারকে (৪৩) ড্রাগ অ্যাক্ট আইনে দুই লাখ টাকা জরিমানা, অনাদায়ে দুই মাসের কারাদণ্ড দেয়া হয়।
এছাড়া ল্যাব টেকনিশিয়ানের সঙ্গে সম্পর্কিত চারজনকে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ আইন ২০০৯ এর ৫২ ধারা মোতাবেক দুই লাখ টাকা জরিমানা ও অনাদায়ে প্রত্যেককে এক মাসের কারাদণ্ড দেয়া হয়। আগামী ১৫ দিনের মধ্যে এসপি হাসপাতাল-২ বন্ধের নির্দেশও দেয় আদালত।
জেইউ/এএইচ/এমএএস/আরআইপি