‘তথ্য না পাওয়ায় হেফাজত নেতাদের জিজ্ঞাসাবাদ করতে পারছে না দুদক’
হেফাজত ইসলামের ৫০ নেতাকর্মীর দুর্নীতির তথ্য অনুসন্ধানে নেমে বাংলাদেশ ফিন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ), ইমিগ্রেশন, ভূমি মন্ত্রণালয়সহ একাধিক অফিসে তথ্য চেয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
তবে কোনো অফিস থেকে এখনও হেফাজত নেতাদের ব্যাপারে তথ্য না আসায় অপেক্ষা করছে দুদক। এমন পরিস্থিতিতে দুদক সচিব ড. মু. আনোয়ার হোসেন হাওলাদার বলেছেন, ‘ন্যূনতম তথ্য ছাড়া তো হেফাজত নেতাদের জিজ্ঞাসাবাদ করা যাচ্ছে না।’
বুধবার (৯ জুন) রাজধানীর সেগুনবাগিচায় দুদকের প্রধান কার্যালয়ে তিনি এসব কথা বলেন।
হেফাজত নেতাদের দুর্নীতি অনুসন্ধানে বিভিন্ন অফিসে তথ্য চাওয়া প্রসঙ্গে দুদক সচিব বলেন, ‘তথ্যের জন্য আমাদের যেসব জায়গায় যোগাযোগ করা দরকার, সেখানে আমরা তথ্য চেয়েছি। তবে এখনও তথ্য পাওয়া যায়নি।’
তিনি বলেন, ‘আমরা কেন্দ্রীয় আর্থিক গোয়েন্দা বাংলাদেশ ফিন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের (বিএফআইইউ) কাছে তথ্য চেয়েছি। সম্ভবত আমাদের (দুদকের) রেফারেন্সে বিএফআইইউ বিভিন্ন ব্যাংকের কাছে তথ্য চেয়ে চিঠিপত্র দিয়েছে। তাছাড়া হেফাজত নেতাদের জমি-জমার হিসাব চাওয়া হয়েছে। তাদের বিভিন্ন ব্যাংক অ্যাকাউন্টের লেনদেনের তথ্য চাওয়া হয়েছে।’
দুদক সচিব বলেন, ‘তদন্ত কর্মকর্তাদের এখতিয়ার দেয়া আছে। তারা যদি জিজ্ঞাসাবাদের প্রয়োজন মনে করেন তাহলে জিজ্ঞাসাবাদ করতে পারেন। একেবারে কিছু কাগজপত্র না পেয়ে তো জিজ্ঞাসাবাদ করা যায়না।’
দুদক মোট ৫০ জন হেফাজত নেতার তথ্য চেয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘এখন পর্যন্ত কোনো তথ্য আসেনি। আমাদের তো কিছু তথ্য লাগবে। ডিবি এ বিষয়ে তদন্ত শেষ করেছে।’
দুদক ডিবির তথ্য নেবে কি-না-এমন প্রশ্নের জবাবে দুদক সচিব বলেন, ডিবির কাছে থাকা তথ্য যদি তারা দেয়, তবে আমরা অবশ্যই আমলে নেব।’
তিনি আরও বলেন, ‘হেফাজত নেতাদের পাসপোর্ট সংক্রান্ত বিষয়ে জানিতে ইমিগ্রেশনে চিঠি দেয়া হয়েছে। তাদের বিদেশযাত্রার ও পাসপোর্ট সম্পর্কে তথ্য চাওয়া হয়েছে। প্রয়োজন হলে তাদের বিদেশযাত্রার বিষয়ে নিষেধাজ্ঞা দেয়া হবে।’
গত মাসে হেফাজতের আমির জুনায়েদ বাবুনগরী, সাবেক যুগ্ম-মহাসচিব মামুনুল হকসহ সংগঠনের অর্ধশত নেতার অর্থ আত্মসাৎ ও দুর্নীতির অভিযোগ অনুসন্ধানে তথ্য চেয়ে নির্বাচন কমিশনসহ ১১ অফিসে চিঠি দেয় দুদক। এছাড়া হেফাজত নেতাদের সম্পদ অনুসন্ধানে দুদকের পরিচালক আকতার হোসেন আজাদের নেতৃত্বে ছয় সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়।
জানা গেছে, দুদক হেফাজত ও তাদের সঙ্গে সংশ্নিষ্ট ৫৪ নেতার ব্যাংক হিসাবের তথ্য চেয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের বাংলাদেশ ফিন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটে (বিএফআইইউ) চিঠি দিয়েছে। সংগঠনটির সাবেক যুগ্ম মহাসচিব মামুনুল হকের ব্যাংক হিসাবে ছয় কোটি টাকার লেনদেন, মানি লন্ডারিং ও নানা সম্পদের অনুসন্ধানের কথাও জানা গেছে।
ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির ঢাকা আগমনকে কেন্দ্র করে রাজধানী ঢাকাসহ বিভিন্ন স্থানে সহিংসতাসহ বিভিন্ন মামলায় গত ১৮ এপ্রিল রাজধানীর মোহাম্মদপুরের জামিয়া রাহমানিয়া মাদরাসা থেকে মামুনুল হককে গ্রেফতার করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। এরপর হেফাজতের একাধিক নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, এর আগে বাংলাদেশ ব্যাংক ও দুদকের গোয়েন্দারা যাচাই-বাছাইয়ে অভিযোগের প্রাথমিক সত্যতা পান। এরপর কমিশন থেকে অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।
গত ১৭ মে দুদক পরিচালক মো. আকতার হোসেন আজাদের নেতৃত্বে ছয় সদস্যের একটি দল গঠন করা হয়। দলের বাকি সদস্যরা হলেন- উপপরিচালক মো. জাহাঙ্গীর আলম ও মোহাম্মদ নুরুল হুদা, সহকারী পরিচালক মামুনুর রশীদ ও মো. সাইদুজ্জামান এবং উপসহকারী পরিচালক মো. সহিদুর রহমান।
এসএম/এএএইচ/এমএস