১০ কোটি টাকার বিল না পেয়েও দেড় বছর চুপ ছিল তিতাস!

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ০৬:৪৭ পিএম, ০৭ জুন ২০২১

রাজধানী মিরপুরের তিনটি ওয়ার্ডের দেড় হাজার গ্রাহকের কাছ থেকে দুই এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে গ্যাস বিল নিয়েছিলেন মো. ওমর ফারুক (৩২)। গ্যাস বিল ছাড়াও বিদ্যুৎ ও পানির বিল নিয়েছে ওমর ফারুকের এজেন্ট ব্যাংকিং প্রতিষ্ঠান ইন্টার্ন ব্যাংকিং অ্যান্ড কমার্স।

গ্রাহকরা পানি-বিদ্যুৎ-গ্যাস বিল জমা দিলেও দেড় বছরের গ্যাস বিল জমা না দিয়ে আত্মসাৎ করেন ওমর ফারুক। এ সময় খোঁজও নেয়নি তিতাস কর্তৃপক্ষ। নীরবে ওমর ফারুক গ্রাহকদের ১০ কোটি টাকা আত্মসাৎ করে পালিয়ে যাওয়ার দেড় বছর পর তিতাস মাইকিং করে জানায় তারা বিল পায়নি।

সোমবার (৭ জুন) বিকেলে কারওয়ান বাজারে র‌্যাবের মিডিয়া সেন্টারে র‌্যাব-৪ এর অধিনায়ক (সিও) অতিরিক্ত ডিআইজি মো. মোজাম্মেল হক আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন।

তিনি বলেন, তিতাসের বিল আত্মসাৎকারী ও জালিয়াতির মূলহোতা ফারুককে চট্টগ্রাম থেকে গ্রেফতার করেছে র‌্যাব-৪। তিনি মিরপুরের দেড় হাজার গ্রাহকের টাকা আত্মসাৎ করেছেন।

২০১৮ সাল থেকে রাজধানীর মিরপুর-২ এর ৬০ ফিট এলাকায় ‘ইন্টার্ন ব্যাংকিং অ্যান্ড কমার্স’ নামে একটি এজেন্ট ব্যাংকিং প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম পরিচালনা শুরু করেন এবং এই প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে ওই এলাকার প্রায় দেড় হাজার গ্রাহকের গ্যাস, পানি ও বিদ্যুৎ বিলের টাকা সংগ্রহ করতেন। কিন্তু গত দুই বছর ধরে ওমর ফারুক গ্রাহকদের গ্যাস বিলের ১০ কোটি টাকা জমা না দিয়ে আত্মসাৎ করেন।

চলতি বছরের জানুয়ারিতে মিরপুর এলাকায় তিতাস গ্যাস কর্তৃপক্ষ মাইকিং করে বকেয়া বিলের জন্য প্রায় দেড় হাজার গ্রাহকের গ্যাস সংযোগ বিচ্ছিন্ন করার প্রচারণা চালায়। মাইকিংয়ের পরই ভুক্তভোগী গ্রাহকরা প্রতারক ফারুক ও তার প্রতিষ্ঠান ইন্টার্ন ব্যাংকিং অ্যান্ড কমার্সের বিরুদ্ধে রাস্তায় নেমে আন্দোলন করেন এবং ঘটনাটি নিয়ে এলাকায় ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়।

এরপর গ্রাহকদের মাঝে জানাজানি হলে গত ২৩ জানুয়ারি ইন্টার্ন ব্যাংকিং অ্যান্ড কমার্সসহ তিনটি অফিস তালাবদ্ধ করে তিনিসহ তার অন্য সহযোগীরা আত্মগোপনে চলে যান।

Faruk-2.jpg

এ বিষয়ে কয়েকজন ভুক্তভোগী মিরপুর মডেল থানায় গত ২ ফেব্রুয়ারি ওমর ফারুকের বিরুদ্ধে একটি মামলা করে। এরপরই র‌্যাব-৪ এর গোয়েন্দা দল ওই মামলার ছায়াতদন্ত শুরু করে এবং প্রতারক ওমর ফারুকের অবস্থান শনাক্ত এবং গ্রেফতার করতে সমর্থ হয়।

যেভাবে ওমর ফারুকের উত্থান

ওমর ফারুক নোয়াখালী জেলার কবিরহাট থানার সাগরপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি স্থানীয় একটি স্কুল থেকে ২০০৯ সালে এসএসসি পাস করে ২০১৪ সালে ঢাকার মগবাজার এলাকায় এসে একটি বিকাশের দোকানে চাকরি শুরু করেন। ২০১৫ সালে মিরপুরের আহম্মেদনগর এলাকায় নিজে বিকাশের ব্যবসা শুরু করেন। প্রতারণার উদ্দেশ্যে প্রাথমিক পর্যায়ে তিনি বিভিন্ন ব্যাংকে পাঁচটির বেশি অ্যাকাউন্ট খোলেন।

পরবর্তীতে তিনি ২০১৮ সালে মিরপুর-২ এর ১৩ নম্বর ওয়ার্ডের ৬০ ফিট এলাকায় ইন্টার্ন ব্যাংকিং অ্যান্ড কমার্স নামে একটি এজেন্ট ব্যাংকিং প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম শুরু করেন। ওমর ফারুক তার এজেন্ট ব্যাংকিং প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে ওই এলাকার গ্রাহকদের গ্যাস, পানি ও বিদ্যুতের বিল পরিশোধ করতেন। ২০১৮ সাল থেকে তিতাস গ্যাস, ওয়াসা ও ডেসকোর গ্রাহকদের কাছ থেকে বিল সংগ্রহ করে জমা না দিয়ে বিলের টাকা আত্মসাৎ করে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নেন তিনি।

র‌্যাব-৪ এর অধিনায়ক মোজাম্মেল হক আরও বলেন, তার বিরুদ্ধে মানি লন্ডারিং মামলাও প্রক্রিয়াধীন। তিতাসের কেউ তার সহযোগী হিসেবে জড়িত কি-না তা খতিয়ে দেখছে র‌্যাব। যদি কেউ জড়িত থাকে তাহলে আমরা তিতাস কর্তৃপক্ষকে বিস্তারিত জানাব। প্রতারিত সবাই মামলা করলে ভবিষ্যতে তারা ক্ষতিপূরণ পেতে পারেন বলে জানান তিনি।

হৃদয় নামের এক ভুক্তভোগী বলেন, টাকা আত্মসাৎ করে পালিয়ে যাওয়ার পর তিতাস মাইকিং করে জানিয়েছে তারা বিল পায়নি। তারা যদি আগে গ্রাহকদের জানাতো তাহলে ওমর ফারুককে তখনই গ্রেফতার করা সম্ভব হতো।

টিটি/এআরএ/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।