লন্ডনে পড়াশোনা শেষে দেশে ফিরে ‘ডি কোম্পানি’ গড়েন বাপ্পি
দুই বছর লন্ডনে পড়াশোনা করেছেন রাজিব চৌধুরী বাপ্পি ওরফে লন্ডন বাপ্পি (৩৫)। এরপর দেশে ফিরে প্রতিষ্ঠা করেন কিশোর গ্যাং গ্রুপ ‘ডি কোম্পানি’ বা ‘ডেয়ারিং কোম্পানি’। তার গ্রুপে রয়েছে ৫০ জনের বেশি সদস্য। সপ্তাহে প্রতিজনকে তিনশ থেকে চারশ টাকা করে দেয়া হতো। এই সদস্যদের দিয়ে চাঁদাবাজি, ডাকাতি, মাদক বিক্রি ও এলাকায় আধিপত্য বিস্তারসহ বিভিন্ন অপরাধ কার্যক্রম চালানো হতো। এভাবে প্রতি মাসে লাখ লাখ টাকা আয় করতেন লন্ডন বাপ্পি।
রোববার (৬ জুন) সন্ধ্যায় রাজধানীর কারওয়ান বাজারে র্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা জানান র্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন।
এর আগে গাজীপুরের টঙ্গীতে দুটি পরিবারের ওপর নৃশংস হামলার ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে বাপ্পিসহ ১২ জনকে গ্রেফতার করে র্যাব। তাদের কাছ থেকে দুটি বিদেশি পিস্তল, দুটি চাপাতি, দুটি রামদা, তিনটি লোহার পাইপ ও একটি চাকু উদ্ধার করা হয়।
ফুচকার দোকানে বসার জায়গা না পেয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থীকে মারধর করেন ডি কোম্পানির সদস্যরা। সেই সূত্র ধরে দুটি বাড়িতে ও একটি টেইলার্সে হামলা চালানো হয়। এতে চারজন গুরুতর আহত হন।
র্যাবের একটি দল গতকাল সারারাত অভিযান চালিয়ে ডি কোম্পানি ওরফে ডেয়ারিং কোম্পানির পৃষ্ঠপোষক রাজিব চৌধুরী বাপ্পি ওরফে লন্ডন বাপ্পিসহ ১২ জনকে গ্রেফতার করে। গ্রেফতার অন্যরা হলেন- মো. তানভীর হোসেন ওরফে ব্যাটারি তানভীর (২৪), মো. পারভেজ ওরফে ছোট পারভেজ (১৯), মো. তুহিন ওরফে তারকাটা তুহিন (২১), মো. সাইফুল ইসলাম শাওন (২৩), মো. রবিউল হাসান (২০), মো. শাকিল ওরফে বাঘা শাকিল (২৮), মো. ইয়াসিন আরাফাত ওরফে বিস্কুট ইয়াসিন (১৮), মো. মাহফুজুর রহমান ফাহিম (২২) ও ইয়াসিন মিয়া ইয়াসিন (১৯)।
কমান্ডার আল মঈন বলেন, ২০১৩ সালে পড়াশোনা শেষে দেশে ফিরে তিন বছর পর (২০১৬ সালে) ‘ডি কোম্পানি’ বা ডেয়ারিং কোম্পানি প্রতিষ্ঠা করেন বাপ্পি। এর দু’বছর পর ফেসবুকে গ্রুপ বা মেসেঞ্জারে গ্রুপ খুলে অপরাধ কার্যক্রম শুরু হয়। বানানো হয় একটি ‘লোগো’। বাপ্পির গ্রুপে ৫০ জনের বেশি সদস্য রয়েছে। এ সদস্যদের প্রতি সপ্তাহে তিনশ থেকে চারশ টাকা করে দিতেন তিনি। প্রতি মাসে অটোরিকশা থেকে চাঁদাবাজি, মাদক, আধিপত্য বিস্তারসহ বিভিন্ন মাধ্যমে কয়েক লাখ টাকা আদায় করতেন বাপ্পি।
র্যাবের এই কর্মকর্তা বলেন, ২০০৭ সালে বাপ্পির মা মারা যান। এরপর তার বাবা আরেকটা বিয়ে করেন। ২০১৭ সালে বাপ্পি অস্ত্রসহ র্যাবের হাতে গ্রেফতার হয়েছিলেন। সেই মামলায় ছয়মাস কারাগারে ছিলেন। তার ছোট ভাই পাপ্পু এই গ্রুপের প্রধান পৃষ্ঠপোষক। মাদক মামলায় তিনি বর্তমানে জেলহাজতে। ‘ডি কোম্পানির’ দ্বিতীয় প্রধান হিসেবে কাজ করেন মইন আহমেদ নীরব। তার বাড়ি চাঁদপুর।
গ্রেফতারদের জিজ্ঞাসাবাদে র্যাব জানায়, তারা ডি কোম্পানি কিশোর গ্যাং গ্রুপের সক্রিয় সদস্য। তারা মাদক সেবন, স্কুল-কলেজে বুলিং, র্যাগিং, ইভটিজিং, ছিনতাই, চাঁদাবাজি, ডাকাতি, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অশ্লীল ভিডিও শেয়ারসহ নানা অনৈতিক কাজে লিপ্ত ছিলেন।
র্যাবের এই কর্মকর্তা বলেন, গ্রেফতার আসামিরা গ্রুপের অনেক সদস্যদের নাম-পরিচয় বলেছেন। আমরা তাদের গ্রেফতারে অভিযান চালাচ্ছি। পাশাপাশি এই গ্রুপের সব সদস্যদের ওপর র্যাবের গোয়েন্দা নজরদারি রয়েছে। আমরা তথ্য পেয়েছি, বাপ্পির ছোট ভাই পাপ্পুর নামেও মামলা রয়েছে। সম্প্রতি একটি মারামারির ঘটনায় তিনিও কারাগারে রয়েছেন। এছাড়া গ্রেফতার আসামিদের প্রত্যেকের বিরুদ্ধে একাধিক মামলা রয়েছে।
কমান্ডার খন্দকার আল মঈন আরও বলেন, বর্তমান সময়ে কিশোর গ্যাং তথা গ্যাং কালচার এবং উঠতি বয়সী ছেলেদের মাঝে ক্ষমতা বিস্তারকে কেন্দ্র করে এক গ্রুপের সঙ্গে অন্য গ্রুপের মারামারি করা বহুল আলোচিত ঘটনায় পরিণত হয়েছে। গ্যাং সদস্যরা এলাকায় নিজেদের অস্তিত্ব জাহির করতে নানা ধরনের অপরাধ সংঘটিত করছেন।
র্যাবের এই কর্মকর্তা আরও বলেন, এ বিষয়ে সন্তানদের ওপর বাবা-মাসহ পরিবারের সদস্যদের নজরদারি রাখা খুর জরুরি। সন্তানরা কার সঙ্গে মেলামেশা করছে, ফেসবুক বা ইন্টারনেটে কোন কোন গ্রুপের সঙ্গে জড়িত সেসবের ওপর নজরদারি করা প্রয়োজন। নয়তো ছোটখাট বিষয় নিয়ে সাধারণ মানুষের ওপর চড়াও হয়ে খুনাখুনি করে কিশোর বয়সেই অপরাধী হয়ে উঠতে পারে কিশোররা।
টিটি/এমআরআর/জিকেএস