ইতিবাচক ধারায় শেয়ারবাজার
পুঁজিবাজার স্থিতিশীলতায় সরকারের উদ্যোগের পাশাপাশি নিয়ন্ত্রক সংস্থার বিএসইসির বিভিন্ন সিদ্ধান্তে ঘুরে দাঁড়িয়েছে দেশের শেয়ারবাজার। যার ফলে গত কয়েক সপ্তাহজুড়ে ইতিবাচক ধারা অব্যাহত রযেছে শেয়ারবাজারে। এর ধারাবাহিকতায় গত সপ্তাহে সূচকের ঊর্ধ্বগতির পাশাপাশি বেড়েছে টাকার অংকে লেনদেনের পরিমাণ। একই সঙ্গে বেড়েছে সার্বিক মূল্য আয় অনুপাত (পিই রেশিও) ও বাজার মূলধন।
সপ্তাহের ব্যবধানে প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) লেনদেন বেড়েছে ১৪ দশমিক ২০ শতাংশ। আর চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই) বেড়েছে ৫ দশমিক ৬৪ শতাংশ।
বাজার সংশ্লিষ্টদের মতে, গেল সপ্তাহে পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) বাজার স্থিশীলতায় বেশকিছু সিদ্ধান্ত নিয়েছে। বিএসইসির সিদ্ধান্তসমূহকে ইতিবাচক হিসেবে দেখছেন বিনিয়োগকারীরা। যার প্রভাব পড়ছে বাজারে। এছাড়াও এক্সপোজার লিমিটের সময় বাড়ানোর খবরে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের মধ্যে আস্থা ফিরেছে। তারা সক্রিয় হচ্ছেন। ফলে বাজারে লেনদেন বাড়ছে।
বিএসইসির গৃহীত সিদ্ধান্তগুলোর মধ্যে রয়েছে, গত সোমবার বিএসইসির কমিশন সভায় মার্জিন রুলস, ১৯৯৯-এর ৩ (৫)-এর কার্যকারিতা স্থগিতাদেশের মেয়াদ আরো এক বছর বাড়িয়ে ২০১৬ সালের ৩১ ডিসেম্বর করা হয়েছে। ফলে ঋণাত্মক ইক্যুইটির হিসাবেও মার্জিন ঋণ গ্রাহকরা লেনদেন করতে পারবেন। এখন থেকে তালিকাভুক্ত কোম্পানি বা মিউচ্যুয়াল ফান্ডের ক্যাশ ডিভিডেন্ড সিকিউরিটিজ হাউজ বা মার্চেন্ট ব্যাংকের মাধ্যমে মার্জিন অ্যাকাউন্টের বিনিয়োগকারীদের বিও হিসাবে জমা হবে। এছাড়া বিনিয়োগকারীরা রাইট অফার নিতে অপারগ হলে হাউজ কর্তৃপক্ষ সে সুবিধা ভোগ করতে পারবে। এতে করে বাজারে সেল প্রেসার হবে না। এছাড়া হাউজগুলোর নেগেটিভ ইক্যুইটি কমবে।
অন্যদিকে নেগেটিভ ইক্যুটিতে যে ভালো শেয়ার থাকবে সেইগুলো বিক্রি হবে না। এতে নেগেটিভ ইক্যুইটি এক সময়ে পজেটিভ হবে। যেসব কোম্পানি ক্যাশ ডিভিডেন্ড দেবে সেগুলোতে ক্রয়ের প্রবণতা বাড়বে। সর্বোপরি বাজারে ফোর্স সেলের মাত্রা অনেকটা কমে যাবে। এতে করে আগের মতো করে প্রাণ ফিরে পাবে পুঁজিবাজার তথা হাউজ মালিক ও বিনিয়োগকারীরা।
এ প্রসঙ্গে ডিএসইর পরিচালক শাকিল রিজভী বলেন, নিয়ন্ত্রক সংস্থার পাশাপাশি সরকারও পুঁজিবাজার স্থিতিশীলতায় কাজ করছে। সম্প্রতি ভারত ও বাংলাদেশের পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রণ সংস্থার মধ্যে এক সমঝোতা চুক্তি সই হয়েছে। যা ভবিষৎ শেয়ারবাজারের জন্য ইতিবাচক। এছাড়াও ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের এক্সপোজার লিমিটের সময় বাড়ানোর উদ্যোগে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে কিছুটা আস্থা ফিরে এসেছে। এছাড়াও গেল সপ্তাহে ঋণাত্মক ইক্যুইটি লেনদেনের সুযোগ এক বছর বাড়ানোসহ বেশ কয়েকটি সিন্ধান্ত নেয়া হয়েছে যা বাজারের জন্য ইতিবাচক। ফলে শেয়ারবাজারের প্রতি বিনিয়োগকারীদের আস্থা ফিরছে।
বর্তমান বাজার বিনিয়োগ উপযোগীবাজার উল্লেখ করে বিনিয়োগকারীদের কোম্পানি দেখে বুঝে শুনে বিনিয়োগ করার আহ্বান জানান তিনি।
বাজার বিশ্লেষণে দেখা গেছে, গত সপ্তাহে পাঁচ কার্যদিবসের মধ্যে চারদিন ঊর্ধ্বমুখি ছিল আর বাকি একদিন দরপতন হয়েছে শেয়ারবাজারে। এসময় ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) গত সপ্তাহে লেনদেন হয়েছে ২ হাজার ৫০৮ কোটি ৩ লাখ ৩৮ হাজার ৪৮৩ টাকার। আগের সপ্তাহের চেয়ে ৩১১ কোটি ৯৪ লাখ ৫ হাজার ৩৩৬ টাকা বা ১৪ দশমিক ২০ শতাংশ বেশি। আগের সপ্তাহে লেনদেন হয়েছিল ২ হাজার ১৯৬ কোটি ৯ লাখ ৩৩ হাজার ১৪৭ টাকা।
সপ্তাহ শেষে ডিএসইর প্রধান সূচক ডিএসইএক্স বেড়েছে ৬৭ দশমিক ২৯ পয়েন্ট বা ১ দশমিক ৪৭ শতাংশ। ডিএস৩০ সূচক বেড়েছে ৪২ দশমিক ৫৯ পয়েন্ট বা ২ দশমিক ৪৬ শতাংশ। আর শরিয়াহ বা ডিএসইএস সূচক বেড়েছে ২৩ দশমিক ০৮ পয়েন্ট বা ২ দশমিক ১০ শতাংশ।
গেল সপ্তাহে ডিএসইতে তালিকাভুক্ত মোট ৩২৯টি কোম্পানি ও মিউচুয়াল ফান্ডের শেয়ার লেনদেন হয়েছে। এর মধ্যে দর বেড়েছে ১৪৯টির, কমেছে ১৪৯টির এবং অপরিবর্তিত রয়েছে ২৮টির। আর লেনদেন হয়নি ৩টি কোম্পানির শেয়ার।
সপ্তাহের ব্যবধানে বাজার মূলধন বেড়েছে ১ দশমিক ৫৯ শতাংশ। আর সার্বিক মূল্য আয় অনুপাত (পিই রেশিও) ১ দশমিক ৮৪ শতাংশ বেড়ে ১৫ দশমিক ৩৩ পয়েন্টে অবস্থান করছে।
অন্যদিকে গেল সপ্তাহে দেশের অপর শেয়ারবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জ (সিএসই) সিএএসপিআই সূচক বেড়েছে ১ দশমিক ৬৯ শতাংশ। সিএসই ৩০ সূচক বেড়েছে ১ দশমিক ৪৭ শতাংশ এবং সার্বিক সূচক সিএসইএক্স বেড়েছে ১ দশমিক ৬৯ শতাংশ, সিএসই ৫০ সূচক বেড়েছে ১ দশমিক ৮২ শতাংশ এবং শরিয়াহ সিএসআই সূচক বেড়েছে ২ দশমিক ০৬ শতাংশ।
সপ্তাহে সিএসইতে গড়ে মোট লেনদেন হয়েছে ২৭৫টি কোম্পানি ও মিউচুয়াল ফান্ডের শেয়ার। এর মধ্যে দর বেড়েছে ১৩০টির, কমেছে ১২১টির এবং অপরিবর্তিত রয়েছে ২৪টির। টাকার অংকে লেনদেন হয়েছে ১৬৯ কোটি ৩৯ লাখ ৮০ হাজার ৫৮৬ টাকা। যা তার আগের সপ্তাহের তুলনায় ৯ কোটি ৫৫ লাখ টাকা বেশি। আগের সপ্তাহে লেনদেন হয়েছিল ১৫৯ কোটি ৮৪ লাখ ৬৯ হাজার ৩৯০ টাকা।
এসআই/এসএইচএস/পিআর