‘প্রাইমারি স্কুল মিল’ ১৭২৯০ কোটি টাকার প্রকল্প উঠছে একনেকে
সারাদেশের প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের খাবার দেয়া হবে। এ লক্ষ্যে ১৭ হাজার ২৯০ কোটি ২২ লাখ ৫৯ হাজার টাকা খরচে ‘প্রাইমারি স্কুল মিল’ নামে একটি প্রকল্প পাশ হতে যাচ্ছে। মঙ্গলবার (১ জুন) জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় প্রকল্পটি অনুমোদনের জন্য উত্থাপন করার কথা রয়েছে।
পরিকল্পনা কমিশন সূত্র বলছে, সারাদেশের ৮ বিভাগের ৬৪ জেলার ৪৯২ উপজেলা ও ২১টি শিক্ষা থানায় প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের খাবার দেয়া হবে। প্রকল্পটি চলতি বছরের মার্চ থেকে ২০২৬ সালের জুন মেয়াদে বাস্তবায়ন করা হবে। এতে খরচ করা হবে ১৭ হাজার ২৯০ কোটি ২২ হাজার ৫৯ কোটি টাকা। এই অর্থ পুরোটা দেবে সরকার। প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতর।
প্রকল্পটির উদ্দেশ্য হলো ২০৩০ সালের মধ্যে প্রাথমিক বিদ্যালয়ে যাওয়া সকল শিক্ষার্থীকে পর্যায়ক্রমে স্কুল মিল কার্যক্রমের আওতায় এনে তাদের শিক্ষা, পুষ্টি, স্বাস্থ্য ও সামাজিক নিরাপত্তায় অবদান রাখা। নিরাপদ ও পুষ্টিকর খাবার সরবরাহের মাধ্যমে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের পুষ্টি চাহিদা পূরণ করা। প্রাথমিক স্তরে শিক্ষার্থীদের ঝরে পড়ার হার কমানো এবং ভর্তি ও উপস্থিতির হার বাড়ানো। প্রকল্পটি যাচাই-বাছাই শেষে একনেক সভায় অনুমোদনের জন্য উত্থাপন করতে যাচ্ছে পরিকল্পনা কমিশনের আর্থ-সামাজিক অবকাঠামো বিভাগ। বিষয়টি নিয়ে কথা বলতে এ বিভাগের সদস্য (সচিব) মোসাম্মৎ নাসিমা বেগমকে একাধিকবার ফোন করা হলেও তা রিসিভ হয়নি।
তবে পরিকল্পনা কমিশনের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, সারাদেশের সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের পর্যায়ক্রমে উচ্চ পুষ্টিমানসমৃদ্ধ ফর্টিফাইড বিস্কুট ও প্রয়োজনীয় মাইক্রোনিউট্রিয়েন্ট, পর্যাপ্ত প্রোটিন এবং ক্যালরিসমৃদ্ধ রান্না করা গরম খাবার পরিবেশন করতে পারলে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের কোমলমতি শিক্ষার্থীদের দৈহিক পুষ্টি চাহিদা পূরণ হবে। প্রস্তাবিত প্রকল্পের আওতায় এসব খাবারই শিক্ষার্থীদের দেয়া হবে। ফলে শিক্ষার্থী ভর্তি ও উপস্থিতি শতভাগ নিশ্চিত হবে এবং ঝরে পড়ার প্রবণতা উল্লেখযোগ্য হারে কমবে। যা সার্বিকভাবে শিক্ষার হার ও মান বৃদ্ধিতে এবং শিক্ষিত ও সুস্থ জাতি গঠনে সুদূরপ্রসারী ভূমিকা রাখবে। এ সকল বিষয় বিবেচনায় প্রকল্পটি অনুমোদনযোগ্য।
প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের খাবার দেয়ার জন্য এই প্রকল্পের আওতায় ১১ লাখ ১১ হাজার ৪৪ মেট্রিক টন খাদ্যদ্রব্য (চাল, ডাল, ভোজ্যতেল, বিস্কুট, মসলা ও শাকসবজি ইত্যাদি) কেনা হবে। এ ছাড়াও পরিবহন ও ইন্সপেকশন, ব্যবস্থাপনা ব্যয়, সার্ভিস প্রোভাইডার (এনজিও) কর্মীদের বেতনভাতা, খাদ্যদ্রব্য সংরক্ষণ, গুদাম ভাড়া, পরিবহন, বোর্ড/ফ্লাইয়ার্স, কুকদের (যারা খাবার রান্না করবে) বেতন, সার্ভিস চার্জ বাবদ খরচ, প্রকাশনা (মুদ্রণ), পেট্রোল, ওয়েল ও লুব্রিকেন্ট এবং গ্যাস ও জ্বালানি, মোটরযান (জিপ একটি ও মাইক্রোবাস ৩টি) কেনা, কম্পিউটার সরঞ্জামাদি ও আসবাবপত্র ক্রয় ইত্যাদি খাতে এই প্রকল্পের আওতায় খরচ করা হবে।
সূত্র বলছে, প্রকল্পটি প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উচ্চ অগ্রাধিকারভুক্ত। ২০২০-২১ অর্থ বছরের সংশোধিত এডিপিতে প্রকল্পটি বরাদ্দবিহীন অননুমোদিত নতুন প্রকল্প তালিকায় অন্তর্ভুক্ত আছে।
এই প্রকল্প পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনার সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ। ৮ম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের ঝরে পড়ার হার কমানো, শিক্ষার মান উন্নয়ন এবং শিক্ষার্থীদের শ্রেণিকক্ষে উপস্থিতির হার বৃদ্ধির লক্ষ্যে ২০২৩ সালের মধ্যে পর্যায়ক্রমে সকল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়কে স্কুল মিলের আওতায় আনার বিষয়ে উল্লেখ রয়েছে।
পিডি/ইএ/জিকেএস