হালদায় আবার ‘নমুনা ডিম’ ছেড়েছে মা মাছ

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ০১:১৮ পিএম, ২৬ মে ২০২১

দেশের একমাত্র প্রাকৃতিক মৎস্য প্রজননকেন্দ্র হালদা নদীতে আবারও নমুনা ডিম ছেড়েছে মা মাছ। আজ বুধবার (২৬ মে) দুপুর ১২টার দিকে জাগো নিউজকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন হালদা গবেষক ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ড. মনজুরুল কিবরিয়া।

এর প্রায় ১২ ঘণ্টা আগে অর্থাৎ গতকাল মঙ্গলবার দিবাগত রাতে নদীর বেশ কিছু স্থানে মা মাছ নমুনা ডিম ছেড়েছিল।

এ বিষয়ে ড. মনজুরুল কিবরিয়া বলেন, ‘হালদা নদীতে কিছুক্ষণ আগে আবারও মা মাছ নমুনা ডিম ছেড়েছে। পরিবেশ অনুকূলে থাকলে কিছুক্ষণের মধ্যেই সম্পূর্ণ ডিম ছাড়তে পারে। তবে মা মাছ যদি পরিবেশ অনুকূল মনে না করে তবে ডিম ছাড়বে না।’

জানতে চাইলে মাছ সংগ্রহকারী হালদা পাড়ের জেলে কামাল সওদাগর জাগো নিউজকে বলেন, ‘আমরা এখন নৌকা নিয়ে নদীর মাঝে আছি। বেশ কয়েক জায়গায় মা মাছ নমুনা ডিম ছেড়েছে। পরিবেশ অনুকূলে থাকলে বিকেল ৩টার দিকে ভাটায় সম্পূর্ণ ডিম ছেড়ে দিতে পারে। তবে পরিবেশ অনুকূল না পাওয়া পর্যন্ত মা মাছ নমুনা ডিম ছেড়ে পর্যবেক্ষণ করতে থাকবে।’

এদিকে গত রাত ১২টার দিকে নমুনা ডিম ছাড়ার খবরে সারারাত নদীর পাড়ে কাটিয়েছেন হালদার দুই পাড়ের ডিম সংগ্রহকারী জেলেরা। তাদের সঙ্গে চট্টগ্রাম শহর থেকে মধ্যরাতে হালদা পাড়ে ছুটে গেছেন হালদা বিশেষজ্ঞ ড. মনজুরুল কিবরিয়া। তিনিও নদী পাড়ে সারারাত জেলেদের সঙ্গে অবস্থান করেছেন। তবে পরিবেশ অনুকূলে না হওয়ায় রাতের ভাটায় মা মাছ ডিম ছাড়েনি।

হালদায় ডিম ধরার দীর্ঘ ৪০ বছরের অভিজ্ঞ জেলে আশু বড়ুয়া জাগো নিউজকে বলেন, ‘আমাদের বাপ-দাদার অভিজ্ঞতায় বলে, নমুনা ডিম জোয়ারে ছাড়লে পরের ভাটায় পুরোপুরি ডিম ছাড়ে। আবার নমুনা ডিম ভাটায় ছাড়লে পরের জোয়ারে মা মাছ ডিম ছাড়ে। তবে পরিবেশ অনূকূলে না হলে পরের জোয়ারে বা ভাটায় ডিম না ছেড়ে মা মাছে আরেকটি জো’র অপেক্ষা করে। এমনও হয় একমাস পর্যন্ত পরিবেশ অনূকূলে না পেলে মা মাছ নমুনা ডিম ছাড়তে থাকে।’

jagonews24

জানা গেছে, বছরের এপ্রিল থেকে জুনের যেকোনো সময়ে হালদা নদীতে মা মাছ ডিম ছাড়ে। তবে এক্ষেত্রে শর্ত হচ্ছে- পূর্ণিমা বা অমাবস্যার তিথি বা জো থাকতে হবে। একই সময়ে নদীর স্থানীয় এবং খাগড়াছড়ি, মানিকছড়িসহ নদীর উজানে পাহাড়ি এলাকায় প্রচুর বজ্রসহ বৃষ্টিপাত হতে হবে। ফলে পাহাড়ি ঢল নামবে এবং নদীতে ফেনাসহ পানি প্রবাহিত হবে। ঠিক এ সময়ে পূর্ণ জোয়ার শেষে অথবা পূর্ণ ভাটা শেষে পানি যখন স্থির হয় তখনই কেবল মা মাছ ডিম ছাড়ে।

হালদা গবেষকরা জানিয়েছেন, এ বছরের এপ্রিল মাস শুরু হওয়ার পরে এরইমধ্যে তিনটি জো চলে গেছে। কিন্তু প্রয়োজনীয় পরিমাণ বৃষ্টি না হওয়ায় নদীতে উপযুক্ত পরিবেশ সৃষ্টি হয়নি। তাই মা মাছ ডিম ছাড়েনি। গতকাল (সোমবার) থেকে শুরু হয়েছে পূর্ণিমার জো। এটি ২৮ মে পর্যন্ত স্থায়ী হবে।

গত এপ্রিল মাস থেকে হালদা পাড়ের প্রায় ৫ শতাধিক জেলে ডিম সংগ্রহের জন্য যাবতীয় প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছেন। বিশেষ করে জো চলাকালে তারা রাত-দিন নির্ঘুম থেকে ডিম ছাড়ার প্রহর গুনেছেন।

খাগড়াছড়ির জেলার বাটনাতলী পাহাড় হতে নেমে সর্পিল ১০৬ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে হালদা নদী মিলেছে চট্টগ্রামের কর্ণফুলী নদীতে। দেশের একমাত্র জোয়ার-ভাটার রুই জাতীয় মাছের প্রাকৃতিক মৎস্য প্রজনন কেন্দ্র এই নদীর সুরক্ষায় সরকার ইতোমধ্যে এটিকে বঙ্গবন্ধু হেরিটেজ ঘোষণা করেছে।

মিজানুর রহমান/এএএইচ/জেআইএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।