বাবুলের নির্দেশে মিতুর খুনিদের ৩ লাখ টাকা দেন ম্যানেজার ইরাদ

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ১১:৫৬ এএম, ২৬ মে ২০২১

চট্টগ্রামে আলোচিত মিতু হত্যাকাণ্ডে মোকলেসুর রহমান ইরাদ নামে একজন সাক্ষী আদালতে জবানবন্দি দিয়েছেন। জবানবন্দিতে তিনি সাবেক পুলিশ সুপার (এসপি) বাবুল আক্তারের স্ত্রী হত্যায় তিন লাখ টাকা লেনদেন হয়েছে বলে আদালতকে জানান।

মঙ্গলবার (২৫ মে) দুপুরে মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মো. শফী উদ্দিনের আদালতে তিনি জবানবন্দি দেন।

জবানবন্দির বিষয়টি জাগো নিউজকে নিশ্চিত মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ও পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) পরিদর্শক সন্তোষ কুমার চাকমা।

তিনি বলেন, ‘মিতু হত্যাকাণ্ডে দায়ের করা নতুন মামলায় মোকলেসুর রহমান ইরাদ নামে এক ব্যক্তি আদালতে স্বাক্ষ্য দিয়েছেন। ইরাদ বাবুল আক্তারের ব্যবসায়িক অংশীদার সাইফুল হকের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপক।’

আদালত সূত্রে জানা গেছে, জবানবন্দিতে ইরাদ নিজেকে বাবুল আক্তারের বন্ধু সাইফুলের প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা পরিচয় দিয়ে উল্লেখ করেন- মিতু হত্যার কয়েকদিন পর বাবুল আক্তার তিন লাখ টাকা দেয়ার জন্য সাইফুলকে ফোন করেন। পরে সাইফুল তাকে দিয়ে টাকাগুলো বিকাশের মাধ্যমে কাজী আল মাহমুদকে দেন। আল মাহমুদ নিখোঁজ মুসার আত্মীয়। পরে মুসা টাকাগুলো হত্যাকাণ্ডে অংশগ্রহণকারীদের ভাগ করে দেন।

জানা গেছে, ২০১৬ সালের ৫ জুন সকালে চট্টগ্রাম নগরের নিজাম রোডে ছেলেকে স্কুলবাসে তুলে দিতে যাওয়ার পথে দুর্বৃত্তদের গুলি ও ছুরিকাঘাতে খুন হন মাহমুদা খানম মিতু। ওই সময় এ ঘটনা দেশজুড়ে ব্যাপক আলোচিত হয়। ঘটনার সময় মিতুর স্বামী এসপি বাবুল আক্তার অবস্থান করছিলেন ঢাকায়।

হত্যাকাণ্ডের পরপরই চট্টগ্রাম এসে অনেকটা স্ত্রী হত্যায় শোকাতুর হওয়ার অভিনয় করেন তিনি। জানাজায় স্ত্রীর জন্য তার কান্না দেখে ব্যথিত হয়েছিলেন অনেকেই। এরপর নিজে বাদী হয়ে চট্টগ্রাম নগরের পাঁচলাইশ থানায় দায়ের করেন হত্যা মামলা।

তবে মিতু হত্যাকাণ্ডে বাবুল আক্তারেরই সম্পৃক্ততা পায় পিবিআই। চলতি বছরের ১২ মে মামলার চূড়ান্ত প্রতিবেদনও জমা দেয়া হয়। একই দিন চট্টগ্রাম নগরের পাঁচলাইশ থানায় বাবুল আক্তারকে প্রধান আসামি করে মামলা দায়ের করেন মিতুর বাবা ও সাবেক পুলিশ পরিদর্শক মোশাররফ হোসেন।

ওই মামলায় বাবুল আক্তার ছাড়াও বাকি সাত আসামি হলেন- মো. কামরুল ইসলাম সিকদার ওরফে মুসা (৪০), এহতেশামুল হক ওরফে হানিফুল হক ওরফে ভোলাইয়া (৪১), মো. মোতালেব মিয়া ওরফে ওয়াসিম (২৭), মো. আনোয়ার হোসেন (২৮), মো. খায়রুল ইসলম ওরফে কালু (২৮), সাইদুল ইসলাম সিকদার (৪৫) ও শাহজাহান মিয়া (২৮)।

মামলার এজাহারে মিতুর বাবা মোশাররফ হোসেন উল্লেখ করেন, ২০১৪ সালের জুলাই থেকে ২০১৫ সালের জুন পর্যন্ত বাবুল আক্তার সুদানে মিশনে কর্মরত থাকাকালে তার মোবাইল নম্বরে গায়ত্রী ২৯ বার মেসেজ দেন। এই মেসেজগুলো মিতু তার একটি খাতায় নিজ হাতে লিখে রাখে।

‘তালিবান’ বইয়ের ৩ নম্বর পৃষ্ঠায় ওই নারী নিজ হাতে একটি বার্তা লিখে দেন। সেখানে লেখা ছিল, ‘আমাদের ভালো স্মৃতিগুলো অটুট রাখতে তোমার জন্য এই উপহার। আশা করি- এই উপহার আমাদের বন্ধনকে চিরস্থায়ী করবে। ভালোবাসি তোমাকে।’

একই বইয়ের শেষ পৃষ্ঠায় গায়ত্রী তাদের প্রথম দেখা, প্রথম একসঙ্গে কাজ করা, প্রথম কাছে আসা, মারমেইড হোটেলে ঘোরাফেরা, রামু মন্দিরে প্রার্থনা, রামুর রাবার বাগানে ঘোরাফেরা এবং চকরিয়ায় রাতে সমুদ্রের পাশ দিয়ে হাঁটা ইত্যাদি স্মৃতির কথা উল্লেখ করেছিলেন।

এছাড়াও ‘বেস্ট কেপ্ট সিক্রেট’ বইয়ের দ্বিতীয় পাতায় গায়ত্রীর নিজ হাতে ‘তোমার ভালোবাসার গায়েত্রী’ (ইংরেজি থেকে বাংলায় অনুবাদ করা) লেখা ছিল।

এরই মধ্যে নতুন মামলার তদন্তের স্বার্থে এজাহারে উল্লেখিত গায়ত্রী ওমর সিং সম্পর্কে জানাতে ওই সংস্থাকে চিঠি দেয়া হয়েছে। মামলার তদন্তকারী সংস্থা পিবিআই সংস্থাটির বাংলাদেশ কার্যালয়ে প্রধান বরাবর চিঠিটি দেন।

মিজানুর রহমান/এএএইচ/এমকেএইচ

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।