গতিপথ অনুযায়ী বাংলাদেশে ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাব পড়বে না: প্রতিমন্ত্রী
নতুন করে দিক পরিবর্তন না করলে বর্তমান গতিপথ অনুযায়ী বাংলাদেশে উপকূলে ঘূর্ণিঝড় ‘ইয়াস’ এর প্রভাব পড়বে না বলে আশা প্রকাশ করেছেন দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী মো. এনামুর রহমান।
সোমবার (২৪ মে) সচিবালয়ে ঘূর্ণিঝড় মোকাবিলার প্রস্তুতি সভায় প্রতিমন্ত্রী এ কথা জানান। সকালে আবহাওয়া অধিদফতর বিশেষ বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছে, পূর্ব-মধ্য বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন এলাকায় অবস্থানরত গভীর নিম্নচাপটি উত্তর-উত্তরপশ্চিম দিকে অগ্রসর ও ঘণীভূত হয়ে ঘূর্ণিঝড় ‘ইয়াস’-এ পরিণত হয়ে একই এলাকায় অবস্থান করছে। এটি আরও ঘণীভূত হয়ে উত্তর ও উত্তর-পশ্চিম দিকে অগ্রসর হতে পারে।
দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘আল্লাহ এখনও আমাদের অনেকটা টেনশনমুক্ত রেখেছেন। নিম্নচাপটি সকাল ৬টায় ঘূর্ণিঝড়ে রূপ নিয়েছে। এটি এখনও অতটা শক্তিশালী হতে পারেনি। উড়িষ্যা উপকূল থেকে ৫০০ কিলোমিটার এবং বাংলাদেশের উপকূল থেকে ৬০৫ কিলোমিটার দূরে অবস্থান করছে। উত্তর-পশ্চিম অংশে সরাসরি উড়িষ্যার দিকে এর গতিপথ। যদি এই গতিপথ একই রকম থাকে তবে বাংলাদেশে উপকূলে ক্ষতির কোনো প্রভাব হবে না বলে আমরা আশা করছি।’
প্রতিমন্ত্রী আরও বলেন, ‘ঘূর্ণিঝড়টি এখন পশ্চিম দিকে আছে। আর বাংলাদেশের অবস্থান উত্তর ও উত্তর-পূর্ব দিকে। এটা যদি কোনো কারণে উত্তর দিকে বা উত্তর-পূর্ব দিকে দিক পরিবর্তন করে এবং গতিবেগ যদি বাড়ে এবং বাংলাদেশের উপকূলের নিকটবর্তী হয় তখন মহাবিপদ সংকেত দেব। তখন দুর্যোগপূর্ণ এলাকা থেকে আশ্রয়কেন্দ্রে নেয়ার জন্য নির্দেশনা দিয়ে দেব।’
এখন পর্যন্ত মানুষ সরানো বা সিগন্যাল বাড়ানোর প্রয়োজন নেই বলেও জানান ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী।
তিনি বলেন, ‘ঘুর্ণিঝড়ের প্রকোপ সেইভাবে বাংলাদেশের ওপর আঘাত হানবে না। বাংলাদেশের ওপর দিয়ে হয়ত মেঘ ও ঝড়ো হাওয়া বয়ে যেতে পারে।’
‘পরিস্থিতি সবাই কঠিন পর্যবেক্ষণের রেখেছি। উপকূলে না উঠে আসা পর্যন্ত পর্যবেক্ষণে রাখব। যদি কোনো কারণে এটা দিক পরিবর্তন করে উত্তর ও উত্তর-পশ্চিম দিকে আসে তবে আমরা যেন মানুষদের আশ্রয়কেন্দ্রে নিয়ে আসতে পারি। আশ্রয়কেন্দ্রগুলো প্রস্তুত করা হয়েছে। স্বেচ্ছাসেবক ও মাঠপ্রশাসন থেকে সবাইকে এ বিষয়ে সতর্ক করা হয়েছে। বিপদ সংকেত পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে যেন তারা আশ্রয়কেন্দ্রে যেতে পারে।’
এনামুর রহমান বলেন, ‘আমরা মনে করি ইনশাল্লাহ আল্লাহ যেভাবে আমাদের বাংলাদেশের প্রতি রহমত করেছেন, দয়া করেছেন সেটা অব্যাহত থাকলে এবার হয়তো ঘূর্ণিঝড়ের ক্ষয়ক্ষতি থেকে বাংলাদেশকে রক্ষা করতে পারবো।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমরা প্রতি ৪ বা ৬ ঘণ্টা পরপর মনিটরিং করবো। এরপরে যদি গতিবেগ আরও বাড়ে তারপরে আমরা ঘণ্টায় ঘণ্টায় সংবাদ দিতে পারবো। আপনারা সেসব সংবাদ পরিবেশন করবেন যাতে জনগণ কোনো রকম ভুল বা ঢিলেমি করার সুযোগ না পায়।’
‘বর্তমান যে অবস্থা তাতে ২ নম্বর দূরবর্তী হুঁশিয়ারি সংকেত দেয়া আছে। এ অবস্থায় থাকলে আর বাংলাদেশের জন্য সংকেত বাড়ানোর প্রয়োজন হবে না’ বলেন এনামুর রহমান।
বৈঠকে আবহাওয়া অধিদফতরের পরিচালক সামছুদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘ঘূর্ণিঝড় নিয়ে পূর্বাভাসের থেকে এখন এটি মনিটরিং করা সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ। এখনই মানুষকে আশ্রয়কেন্দ্রে সরানোর প্রয়োজন নেই। নিম্নচাপটি ঘূর্ণিঝড়ে রূপ নেয়ায় দুই নম্বর দূরবর্তী সতর্ক সংকেত দেয়া হয়েছে।’
সভায় সশস্ত্র বাহিনী বিভাগের প্রতিনিধি জানান, দূর্গত এলাকায় অপারেশন রুম অ্যাকটিভ এবং ছোট ছোট উদ্ধার টিম প্রস্তুত রাখা হয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. মোহসীন এবং কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
আরএমএম/ইএ/এএসএম