ঘূর্ণিঝড় ইয়াস : এবারও সুরক্ষা প্রাচীর হয়ে দাঁড়াতে পারে সুন্দরবন
অডিও শুনুন
২০১৯ সালের নভেম্বরে প্রবল শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড় ‘বুলবুল’ যখন আঘাত হেনেছিল, তখন বাংলাদেশকে বাঁচিয়ে দিয়েছিল সুন্দরবন। হতাহত, ক্ষয়ক্ষতি সবকিছু থেকেই রক্ষা করেছিল এই ম্যানগ্রোভ বনটি। অবশ্য এতে সুন্দরবনের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছিল।
এখন বঙ্গোপসাগরে সৃষ্টি হতে যাওয়া ঘূর্ণিঝড় ‘ইয়াস’ থেকেও বাংলাদেশকে রক্ষা করতে বুক চেতিয়ে দাঁড়াতে পারে এই সুন্দরবন।
আবহাওয়াবিদ আবদুর রহমান জাগো নিউজকে বলেন, ‘এখন পর্যন্ত আমাদের কাছে যে পূর্বাভাস আছে, তাতে নিম্নচাপটি যদি ঘূর্ণিঝড়ে রূপ নেয়, তাহলে সেটা বুধবার (২৬ মে) দুপুরের পর থেকে সন্ধ্যার মধ্যে আঘাত হানা শুরু করতে পারে।’
তিনি বলেন, ‘এখন পর্যন্ত বেশিরভাগ সম্ভাবনা হলো ভারতের ঊড়িষ্যা, পশ্চিমবঙ্গ, বাংলাদেশের পশ্চিমাঞ্চলে ঘূর্ণিঝড়টি আঘাত হানতে পারে। বাংলাদেশের সুন্দরবনেও এর প্রভাব পড়তে পারে।’
ঘূর্ণিঝড় সৃষ্টি হলে এ বিষয়ে আরও বিস্তারিত ও সুনির্দিষ্ট তথ্য দেয়া যাবে বলেও জানান আবদুর রহমান।
আবহাওয়াবিদ রুহুল কুদ্দুস জাগো নিউজকে বলেন, ‘ঘূর্ণিঝড় যে তৈরি হতে যাচ্ছে, এর সাইড-ইফেক্ট আগামীকাল (সোমবার) থেকে কিছুটা পড়তে পারে। আজ শেষ রাত থেকে চট্টগ্রাম, বরিশালে প্রভাব পড়া শুরু করতে পারে। বৃষ্টি হওয়ার সম্ভাবনা আছে।’
ঘূর্ণিঝড় বিষয়ে সর্বশেষ বিশেষ বিজ্ঞপ্তিতে আবহাওয়া অধিদফতর জানিয়েছে, পূর্ব-মধ্য বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন এলাকায় অবস্থানরত সুস্পষ্ট লঘুচাপটি ঘনীভূত হয়ে একই এলাকায় নিম্নচাপে পরিণত হয়েছে। এটি আরও ঘনীভূত হয়ে গভীর নিম্নচাপ এবং পরবর্তীতে ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হয়ে উত্তরপশ্চিম দিকে অগ্রসর হতে পারে।
নিম্নচাপটি আজ (২৩ মে) দুপুর ১২টায় চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর থেকে ৭০০ কিলোমিটার দক্ষিণ-দক্ষিণপশ্চিমে, কক্সবাজার সমুদ্রবন্দর থেকে ৬১৫ কিলোমিটার দক্ষিণ-দক্ষিণপশ্চিমে, মংলা সমুদ্রবন্দর থেকে ৭১০ কিলোমিটার দক্ষিণে এবং পায়রা সমুদ্রবন্দর থেকে ৬৫৫ কিলোমিটার দক্ষিণে অবস্থান করছিল।
নিম্নচাপ কেন্দ্রের ৪৪ কিলোমিটারের মধ্যে বাতাসের একটানা সর্বোচ্চ গতিবেগ ঘণ্টায় ৪০ কিলোমিটার, যা দমকা অথবা ঝড়ো হাওয়ার আকারে ৫০ কিলোমিটার পর্যন্ত বৃদ্ধি পাচ্ছে। নিম্নচাপ কেন্দ্রের কাছে সাগর উত্তাল রয়েছে।
চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, মংলা ও পায়রা সমুদ্রবন্দরকে ১ নম্বর দূরবর্তী সতর্ক সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে।
উত্তর বঙ্গোপসাগর ও গভীর সাগরে অবস্থানরত সব মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারকে পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত নিরাপদ আশ্রয়ে থাকতে বলা হয়েছে। সেই সঙ্গে তাদেরকে গভীর সাগরে বিচরণ না করতে বলা হয়েছে।
দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী ডা. মো. এনামুর রহমান জানিয়েছেন, উত্তর আন্দামান সাগর ও তৎসংলগ্ন পূর্ব-মধ্য বঙ্গোপসাগরে যে লঘুচাপ সৃষ্টির আভাস দেয়া হচ্ছে, সেটি যদি ঘূর্ণিঝড় ‘ইয়াস’-এ রূপান্তর হয়, তবে তা এক পর্যায়ে শক্তিশালী ‘সুপার সাইক্লোনে’ পরিণত হতে পারে। এই প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশের পুরো উপকূলকে সতর্ক থাকতে হবে।
পিডি/এমআরআর/এমকেএইচ