ঝালকাঠিতে মনোনয়ন পেতে ব্যস্ত সম্ভাব্য প্রার্থীরা


প্রকাশিত: ০৮:৫৪ পিএম, ০১ ডিসেম্বর ২০১৫

প্রথমবারের মতো দলীয় প্রতীকে অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে স্থানীয় সরকার নির্বাচন। যার যাত্রা শুরু আসন্ন পৌরসভা নির্বাচন দিয়ে। বিগত দিনে স্থানীয় সরকার নির্বাচনের দিনক্ষণ ঘনিয়ে এলে সম্ভাব্য আগ্রহী প্রার্থীদের দৌড়ঝাঁপ শুরু হতো ভোটারদের দ্বারে দ্বারে। আর এবার দলীয় প্রতীকে নির্বাচনের বিষয়টি চূড়ান্ত হওয়ায় আসন্ন পৌরসভা নির্বাচনকে সামনে রেখে তেমনটি লক্ষ করা যাচ্ছে না ঝালকাঠি জেলায়।

মনোনয়ন প্রত্যাশী অাগ্রহী প্রার্থীরা ভোটারের কাছে না গিয়ে দলীয় মনোনয়ন নিশ্চিত করতে ছুটছেন নেতাদের পিছনে। সেক্ষেত্রে ঝালকাঠিতে সরকারদলীয় প্রার্থী চূড়ান্ত করার বিষয়ে কোনো কথা বলতে নারজ জেলার শীর্ষ নেতৃবৃন্দ। এ ব্যাপারে শিল্পমন্ত্রী আমির হোসেন আমুর সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত বলে জানালেন জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি সরদার মো. শাহ আলম ও সাধারণ সম্পাদক খান সাইফুল্লাহ পনির।

এদিক থেকে অনেকটা সুবিধাজনক অবস্থায় আছে বিএনপি। জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মনিরুল ইসলাম নূপুর বলেন, পৌর নির্বাচনে অংশ নেয়ার ব্যাপারে কেন্দ্রীয় সিদ্ধান্ত অনুযায়ী নলছিটি পৌরসভার সাবেক মেয়র মজিবুর রহমানকে চূড়ান্ত করা হয়েছে। ঝালকাঠি পৌরসভার বিষয়টি কেন্দ্রীয় সিদ্ধান্ত মোতাবেক জেলা কমিটি দলীয় প্রার্থী মনোনীত করবে।

ঝালকাঠি জেলা এক সময় জাতীয় পার্টি ঘাটি হিসেবে পরিচিত থাকলেও আসন্ন পৌর নির্বাচনে কাকে মেয়র পদে নির্বাচনে অংশ নেয়ার জন্য মনোনয়ন দেবে তা সিদ্ধান্ত হয়নি এখনও বলে জাতীয় পার্টি নির্ভরযোগ্য সূত্রের তথ্য । ঝালকাঠি সদর, নলছিটি, রাজাপুর ও কাঠালিয়া এই চারটি উপজেলা নিয়ে গঠিত হলেও জেলায় পৌরসভা রয়েছে দু’টিতে।

ঝালকাঠি পৌরসভা : আসন্ন পৌরসভা নির্বাচন দলীয় প্রতীকে হওয়ার বিষয়টি চূড়ান্ত হওয়ার পর মেয়র পদে আওয়ামী মীগের মনোনয়ন প্রত্যাশী আগ্রহী প্রার্থী সংখ্যা দিন দিন বেড়েই চলেছে। তবে আগ্রহী প্রার্থীদের কেউই প্রকাশ্যে মুখ খুলছেন না। প্রত্যেকেই নিজ নিজ বলয়ের মধ্যে থেকে একান্ত কাছের লোক বা আত্মীয় স্বজনের সঙ্গে মতবিনিময় করছেন। সবার একই কথা, দলের অভিভাবক ঝালকাঠি-২ (সদর-নলছিটি) আসনের সংসদ সদস্য শিল্পমন্ত্রী আমির হোসেন আমু মনোনয়ন দিলে প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন।

দলীয় নির্ভরযোগ্য সূত্র মতে, মেয়র পদে বর্তমান মেয়র জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আফজাল হোসেন, পৌর আওয়ামী লীগ সভাপতি লিয়াকত হোসেন তালুকদার, সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান সৈয়দ রাজ্জাক সেলিম দলীয় মনোনয়ন প্রত্যাশী আগ্রহী প্রার্থী। দলীয় মনোনয়ন পাওয়ার ব্যাপারে এদের মধ্যে প্রায় সকলেই আশাবাদী। প্রত্যেকেই শিল্পমন্ত্রীর কাছ থেকে নিজের মনোনয়ন প্রাপ্তির বিষয়টি নিশ্চিত মনে করেন।

তবে দলীয় সূত্র অনুযায়ী, উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান সৈয়দ রাজ্জাক আলী সেলিম কেন্দ্রীয় পর্যায়ে মনোনয়ন পেতে অনেকটা এগিয়ে রয়েছেন বলে নিশ্চিত করেছেন। জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট খান সাইফুল্লাহ পনির বলেন, দল থেকে যাকে মনোনয়ন দেবে আমরা তার জন্যই কাজ করবো। এনিয়ে কোনো ধরনের বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হবে না।

অপরদিকে পৌর নির্বাচনের ব্যাপারে প্রকাশ্যে কোনো আলোচনায় নেই বিএনপি। তবে নির্বাচনে অংশ নেয়ার ব্যাপারে কেন্দ্রীয় নির্দেশ মোতাবেক মাঠে নেমে পড়বে বলে নিশ্চিত করেছে জেলার শীর্ষ নেতৃত্ব। মেয়র পদে জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মনিরুল ইসলাম নূপুর ও বিগত নির্বাচনে বর্তমান মেয়র আফজাল হোসেনের কাছে হেরে যাওয়ায় পৌর বিএনপির সভাপতি অনাদি দাস এই দু’জনের একজন দলীয় মনোনয়ন পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে বলে জানিয়েছে দলের একাধিক নির্ভরযোগ্য সূত্র।

মেয়র পদে নিজের প্রার্থী হওয়ার বিষয়টি স্বীকার করে জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মনিরুল ইসলাম নূপুর বলেন, প্রর্থী মনোনয়ন নিয়ে আমাদের দলে কোন সমস্যা হবে না। আমরা নিজেরা সমঝোতার মাধ্যমে সম্ভাব্য বিজয়ী প্রার্থীই মনোনীত করব ইনশাল্লাহ। আসন্ন নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন পেতে এবং ভোটারদের মন জয় নিজের অবস্থান জানান দিতে সামাজিক, সাংস্কৃতিক, ধর্মীয় ও উন্নয়নমূলক কাজে অংশগ্রহণ করছেন সম্ভাব্য মেয়র প্রার্থীরা।

নলছিটি পৌরসভা : ঘোষিত তফশিল অনুযায়ী দেশের ২৩৬টি পৌরসভা নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে ৩০ ডিসেম্বর। ঝালকাঠি জেলার দুটি পৌরসভার মধ্যে নলছিটি পৌরসভা নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে প্রথম দফায়। এ নির্বাচনে নলছিটিতে আ’লীগের জন্য অনুকূল পরিবেশ দেখা দিলেও দলীয় প্রার্থী মনোনয়নের ক্ষেত্রে সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে না পারলে নির্বাচনী ফলাফল বুমেরাং হয়ে দেখা দিতে পারে বাংলাদেশের প্রাচীনতম এ পৌরসভাটিতে। দেড়শ বছর আগে বৃটিশ শাসন আমলে প্রতিষ্ঠিত হয় নলছিটি পৌরসভা। তখন পাক-ভারতে ৩টি পৌরসভা (মিউনিসিপালিটি) প্রতিষ্ঠা লাভ করে। পশ্চিমবঙ্গের কলকাতা প্রথম পৌরসভা। পূর্ববঙ্গ বা অর্থাৎ বর্তমান বাংলাদেশের ময়মনসিংহ দ্বিতীয় এবং ১৮৬৫ সালে নলছিটি তৃতীয় পৌরসভা (মিউনিসিপালিটি) হিসেবে প্রতিষ্ঠা লাভ করে। অর্থাৎ বর্তমান বাংলাদেশের দ্বিতীয় পৌরসভা নলছিটি। প্রতিষ্ঠার পর দেড়শ’ বছর পার হলেও এখনো প্রথম শ্রেণিতে উন্নীত হয়নি। দ্বিতীয় শ্রেণিতেই রয়ে গেছে নাগরিক সুবিধাবঞ্চিত নলছিটি পৌরসভা।

বিগত দিনে স্থানীয় সরকার নির্বাচনের দিনক্ষণ ঘনিয়ে এলে সম্ভাব্য আগ্রহী প্রার্থীদের দৌড়ঝাঁপ শুরু হতো ভোটারদের দ্বারে দ্বারে। নির্বাচনী এলাকায় বিরাজ করত উৎসবের আমেজ। কিন্তু এবার দলীয় প্রতীকে নির্বাচনের বিষয়টি চূড়ান্ত হওয়ায় নির্বাচনী তফশিল ঘোষণার পরও তেমনটি লক্ষ্য করা যাচ্ছে না নলছিটি পৌর এলাকায়।

দলীয় প্রতীকে নির্বাচন হওয়ায় বিএনপি একক প্রার্থী মনোনীত করতে পারলেও একাধিক প্রার্থী নিয়ে বিপাকে আ’লীগ। ২০১১ সালের ১০ জুন নির্বাচিত পৌর মেয়র ও জেলা বিএনপির সদস্য মজিবুর রহমানকে দলীয় মনোনীত প্রার্থী হিসেবে ঘোষণা দেয় জেলা ও উপজেলা বিএনপি। জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মনিরুল ইসলাম নূপূর বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, ‘দলীয় ফোরামে উপস্থিত সকলের মতামতের ভিত্তিতে জেলা বিএনপির সদস্য মজিবুর রহমানের নাম চূড়ান্ত করে বেগম খালেদা জিয়ার কাছে চিঠি পাঠানো হয়েছে।’ সুষ্ঠু নির্বাচন হলে বিএনপি মনোনীত প্রার্থীই বিজয়ী হবেন বলে আশাবাদী তিনি।

বিগত নির্বাচনে দলীয় একাধিক প্রার্থী থাকায় দলীয় প্রার্থীর নিশ্চিত বিজয় ঘরে তুলতে পারেনি আ’লীগ। ওই নির্বাচনে তৎকালীন মেয়র ও পৌর আ’লীগের সভাপতি মাসুদ খানকে মনোনয়ন না দিয়ে উপজেলা আ’লীগ সভাপতি তছলিম উদ্দিন চৌধুরীকে মনোনয়ন দেয়ায় জিতে যায় বিএনপির প্রার্থী মজিবুর রহমান। ফিলে নর্বাচনে দলের বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে অল্প ভোটের ব্যাবধানে হেরে যান মাসুদ খান। দলীয় রাজনীতির কারণে নির্বাচনে হারলেও এলাকায় জনপ্রিয়তা বেড়েছে দাবি করে আসন্ন নির্বাচনে আ’লীগের দলীয় মনোনয়ন পাওয়ার বিষয়ে শতভাগ আশাবাদী তিনি।

দলভিত্তিক নির্বাচন হওয়ায় দিনকে দিন বেড়েই চলেছে মেয়র ও কাউন্সিলর পদে অা’লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশী আগ্রহী প্রার্থীর সংখ্যা। এ পর্যন্ত মেয়র পদে আ’লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশী আগ্রহী প্রার্থী ১০ জনে দাঁড়িয়েছে। তারা হলেন সাবেক দুই মেয়র উপজেলা আ’লীগ সভাপতি তছলিম উদ্দিন চৌধুরী ও সাবেক পৌর আ’লীগ সভাপতি মাছুদ খানসহ সাবেক কমিশনার ও পৌর আ’লীগের সভাপতি এসকেন্দার আলী খান, উপজেলা আ’লীগের সাবেক সভাপতি ও সাবেক কমিশনার ওয়াহেদ কবির খান, উপজেলা আ’লীগের সহ-সভাপতি তাজুল ইসলাম দুলাল চৌধুরী, কৃষক লীগের সাবেক আহ্বায়ক ডা. আলমগীর হোসেন, বর্তমান ভারপ্রাপ্ত মেয়র ৮নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর মো. ফারুক হোসেন, ১নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর লুৎফুল কবির প্রিন্স, উপজেলা আ’লীগ সদস্য কামাল হোসেন ও ঢাকার ব্যবসায়ী মাছুম হোসেন আ’লীগের মনোনয়ন পেতে আগ্রহী।

দলীয় প্রার্থিতা বিষয়ে জানতে চাইলে জেলা ও নলছিটি উপজেলা আ’লীগরি শীর্ষস্থানীয় নেতারা প্রকাশ্য কোনো মন্তব্য করতে না চাইলেও ইশারা ইঙ্গিতে বুঝিয়ে দিতে চাইছেন কাকে মনোনয়ন দেয়ার প্রস্তুতি চলছে।

আতিকুর রহমান/বিএ

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।