আমনের বাম্পার ফলনেও মিলাররা ধীর গতিতে ধান কিনছেন
খাদ্য ভাণ্ডার হিসেবে পরিচিত দিনাজপুর জেলায় এবার আমনের বাম্পার ফলন হলেও কৃষকের মুখে হাসি নেই। উৎপাদন ব্যয় বেড়ে যাওয়ায় কৃষক তার উৎপাদিত ফসল বিক্রি করে তা পুষিয়ে নিতে পারছেন না।
অপরদিকে, লোকসানের আশঙ্কায় ও মজুদদারী বদনাম ঘোচাতে মিলাররা এবার ধান ক্রয় করছেন ধীর গতিতে। যতক্ষণ না একটি মাঠ ছাটাই করার পর তা বিক্রি হচ্ছে না, ততক্ষণ পর্যন্ত তারা আর একটি মাঠের জন্য ধান ক্রয় করছেন না। ফলে কৃষক তার উৎপাদিত ধান নিয়ে বিপাকে পড়েছেন।
অপরদিকে, কমে যাচ্ছে সুগন্ধি ধানের আবাদ। উৎপাদন কম হওয়ায় ও ধানের দাম সময় মতো না পাওয়াই সুগন্ধি ধান চাষ থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছেন চাষিরা। দিনাজপুর জেলার ১৩টি উপজেলায় ২ লক্ষ ৫৩ হাজার ৯৬৩ হেক্টর জমিতে আমন ধানের উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়। কিন্তু এবার ২ লক্ষ ৫৬ হাজার ৫২০ হেক্টর জমিতে আমন চাষ হয়েছে। যা লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ২ হাচার ৫৮৪ হেক্টর বেশি।
এর মধ্যে চিনি গুড়া, জিরা কাঠারীর মতো সুগন্ধি জাতের ধান চাষের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হয়নি। ১৩ হাজার ৩৫২ হেক্টর জমিতে সুগন্ধি ধান চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হলে তা উৎপাদন হয়েছে ৯ হাজার ৮৫৫ হেক্টর জমিতে।
কৃষি সম্প্রসারণ অফিসের উপ-পরিচালক, গোলাম মোস্তফা জাগো নিউজকে জানান, লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে অনেক বেশি জমিতে এবার আমনের উৎপাদন হয়েছে। কৃষি উপকরণ সহজলভ্য হওয়ায় কৃষক অতি উৎসাহী হয়ে আমন ধান রোপণ করায় এবার লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে গেছে।
দিনাজপুর জেলার ১৩টি উপজেলায় ৬৫টি ধান বেচা-কেনার হাট রয়েছে। এর মধ্যে কাহারোল উপজেলার কাহারোল বাজার হাট ও আমবাড়ী হাট ধানের সবচেয়ে বড় হাট। তবে জেলার সব হাটগুলোতেই আমন ধানের বিপুল আমদানি হচ্ছে বলে জানা গেছে।
জেলার সবচেয়ে বড় ধানের বাজার কাহারোল বাজারহাটে বিপুল পরিমাণ ধানের আমদানি হয়। কৃষকরা ভোর থেকে শুরু করে দুপুর পর্যন্ত ধান বাজারে নিয়ে আসেন।
বাজারে আসা বিনা-৭ জাতের ধানের ৭৫ কেজির বস্তা বিক্রি হয়েছে ১৪শ` টাকা, বিআর-৪৯ জাতের ৭৫ কেজি ধানের বস্তা বিক্রি হয়েছে ১৪শ` ৫০ টাকা, বিআর-১১ জাতের ৭৫ কেজি ধানের বস্তা বিক্রি হয়েছে ১১শ` ৫০ টাকা, স্বর্ণ জাতের ৭৫ কেজি ধানের বস্তা বিক্রি হয়েছে ১২শ` টাকায়। চিনি গুড়া, জিরা কাঠারীর মতো সুগন্ধি জাতের চিকন ধান ৭৫ কেজির বস্তা বিক্রি হয়েছে ২৬শ` থেকে ২৭শ` টাকায়।
বাজারে ধান কিনতে আসা মিলার আলম ও আব্দুল মান্নান জানান, মজুদদারী বদনাম ঘোচাতে ব্যবসায়ীরা ধীরে ধীরে ধান কিনছেন। তারা আগাম ধান কিনছেন না। তাই বাজারে ধান বিক্রি হচ্ছে ধীর গতিতে।
ধান বিক্রি করতে আসা কাহারোল উপজেলার কৃষক আব্দুল্লাহ ও জলিল জাগো নিউজকে জানান, তারা ধান বিক্রি করতে এসে আগের হাটে দাম না পেয়ে ধান ফেরৎ নিয়ে গিয়েছিলেন। কিন্তু এবার তারা দাম না পেলেও ধান বিক্রি করে দিয়েছেন। উৎপাদন খরচ কেমন হয়েছে জানতে চাইলে তারা জানান, একরে ৪০ থেকে ৪২ মণ ধান উৎপাদন হয়েছে। সুগন্ধি জাতের ধান হবে ২৫ থেকে ২৭ মণ। কিন্তু এ উৎপাদনে খরচ বেড়ে যাওয়ায় ধান বিক্রি করে তা পোষানো যাচ্ছে না।
তারা জানান, এক একর জমির ধান কাটা ও মাড়াই বাবদ খরচ হচ্ছে ছয় হাজার ৪শ` টাকা। ধান লাগানোর খরচ দুই হাজার টাকা, নিরানি খরচ দুই হাজার টাকা, হাল চাষ তিন হাজার টাকা, সার চার হাজার টাকা, কীটনাশক দুই হাজার টাকা ও বীজ এক হাজার টাকা। সব মিলিয়ে খরচ হচ্ছে ১৭ হাজার ৪শ` টাকা। ধান বিক্রি হচ্ছে ১৯ হাজার চার টাকা। যেখানে কৃষকের শ্রমের মূল্য যোগ করলে কৃষকের লাভ বলে কিছুই থাকে না।
এদিকে, চাল-কল মালিক গ্রুপের নির্বাহী কমিটির প্রভাবশালী সদস্য শহিদুল রহমান পাটোয়ারী মোহন জাগো নিউজকে জানান, বাজারে ধানের দাম এ অবস্থায় থাকলে চালের ক্রয়মূল্য সাধারণ মানুষের হাতের নাগালে থাকবে। যদি ধানের দাম বেড়ে যায় তাহলে সাধারণ মানুষের ক্রয় ক্ষমতার বাইরে চলে যাবে চাল। তিনি এক প্রশ্নের উত্তরে বলেন, ব্যবসায়ীরা ধান কিনছেন না এটা সঠিক নয়, তবে তারা ধীরগতিতে যতটুকু প্রয়োজন ততটুকুই ধান কিনছেন। এতে করে মিলগুলো চালু থাকছে অপরদিকে, মজুদদারী বদনাম থেকে ব্যবসায়ীরা রক্ষা পাচ্ছেন।
এমজেড/আরআইপি