জাহাঙ্গীর হত্যা : মডেল স্ত্রীসহ ৫ জনের মৃত্যুদণ্ড বহাল
রাজধানীর শ্যামপুরের চাঞ্চল্যকর ব্যবসায়ী জাহাঙ্গীর আলম হত্যা মামলায় মডেল কন্যা সুমাইয়া কানিজ সাগরিকাসহ পাঁচ আসামির মৃত্যুদণ্ড বহাল রেখেছেন হাইকোর্ট। মডেল কন্যা সুমাইয়া কানিজ জাহাঙ্গীর আলমের স্ত্রী। নিহতের স্ত্রী সাগরিকা বাদে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত অপর চার আসামি হলেন- মো. ইব্রাহিম ওরফে ইয়াছিন, মো. খলিল ওরফে হিজড়া খলিল, মো. আল আমিন ও খলিল শেখ।
তবে বিচারিক আদালতে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আলী আশরাফ লিটনের অপরাধ প্রমাণ না হওয়ায়’ আদালত তাকে বে-কসুর খালাস দিয়েছেন হাইকোর্ট।
আসামিপক্ষের আপিল আবেদনের শুনানি শেষে সোমবার ইাকোর্টের বিচারপতি সোমেন্দ্র সরকার ও বিচারপতি এএনএম বশিরউল্লাহ সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চে এই রায় দেন। সোমবার আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল এমএ মান্নান মোহন।
তিনি সাংবাদিকদেরকে বলেন, এ মামলায় নিহতের স্ত্রী সাগরিকা, আলী আশরাফ লিটন, মো. ইব্রাহিম ওরফে ইয়াছিন, মো. খলিল ওরফে হিজড়া খলিল, আল আমিন ও খলিল শেখের ১৬৪ ধারায় দোষ স্বীকার করে বিচারিক আদালতে সাক্ষ্য দিয়েছেন। মামলার আলামতগুলো সবই আসামিদের বিপক্ষে ছিলো। এজন্য আদালত তাদের মৃত্যুদণ্ডের রায় বহাল রেখেছেন।
তবে একজন আসামিকে খালাস দেয়ায় এ রায়ে বিরুদ্ধে আপিল করার কথা জানান তিনি। এ বিষয়ে নিহতের বাবা ফিরোজ আলম জানান, এ রায়ে আমরা সন্তুষ্ট না। মামলার ২য় আসামি লিটনের খালাসের রায়ে আমরা সংক্ষুব্ধ। এ রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করার কথা জানান তিনি।
মামলার নথি থেকে জানা যায়, ২০১০ সালের ২১ জুন জাহাঙ্গীর আলম হত্যা মামলায় নিহতের স্ত্রী মডেল কন্যা সুমাইয়া কানিজ সাগরিকাসহ ওই ছয় আসামির ফাঁসির আদেশ দেন ঢাকার দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল। তবে প্রমাণ না হওয়ায় পলাতক অপর আসামি ইসমাইল হোসেনকে বেকসুর খালাস দেন আদলত। আসামিরা রায়ের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে গেলে ওই বিষয়ে ৮ নভেম্বর শুনানি শুরু হয়।
মামলায় বলা হয়, নিহত জাহাঙ্গীর আলম শ্যামপুর থানার শ্মশানঘাট এলাকায় লোহার ব্যবসা করতেন। ঘটনার দিন তিনি তার ভাড়া বাসায় ৩ মেয়ে, গৃহকর্মী ও স্ত্রী সাগরিকাসহ ঘুমিয়ে ছিলেন। ২০০৮ সালের ৪ নবেম্বর ভোর ৪ টায় নিহতের বাবা ফিরোজ আলম খবর পান জাহাঙ্গীর আলম খুন হয়েছে। খবর পেয়ে দ্রুত তিনি ঘটনাস্থলে গিয়ে জাহাঙ্গীর আলমের রক্তাক্ত লাশ দেখতে পান।
বাদী ঘটনা সম্পর্কে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি সাগরিকাকে জিজ্ঞাসা করলে তিনি জানান, বন্ধ ঘরে জাহাঙ্গীর আলমকে কারা যেন কুপিয়ে হত্যা করা হয়েছে। সাগরিকাকে আরো জিজ্ঞেস করা হয় কারা হত্যা করেছে? এতে তিনি নিশ্চুপ থাকেন। এরপরে দিন নিহতের বাবা ফিরোজ আলম বাদী হয়ে শ্যামপুর থানায় সাত জনকে আসামি করে হত্যা মামলা দায়ের করেন।
এজাহার অনুযায়ী জানা যায়, মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত সাগরিকা নাটকে অভিনয় করতেন। ভিকটিম জীবিত থাকা অবস্থায় সাগরিকা বিভিন্ন পুরুষের সঙ্গে অবাধে মেলামেশা করতেন। একবার অন্য পুরুষের সঙ্গে চলেও গিয়েছিল। তার এই অবৈধ মেলামেশায় বাধা দেয়ার কারণে ভাড়াটে খুনি দিয়ে এই হত্যাকাণ্ড ঘটানো হয়।
২০০৮ সালের ৩১ ডিসেম্বর শ্যামপুর থানার এসআই শাহজাহান ঘটনা তদন্ত করে আসামিদের বিরুদ্ধে চার্জশিট দাখিল করেন। মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত সাগরিকাসহ ৫ আসামি ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে দোষ স্বীকার করে জবানবন্দী দেন।
এফএইচ/এসএইচএস/পিআর