মুভমেন্ট পাস ছাড়াই ঈদ শপিংয়ে ছুটছেন রাজধানীবাসী
করোনাভাইরাসের সংক্রমণ মোকাবিলায় সরকার ঘোষিত বিধিনিষেধ দুদফা শেষে তৃতীয় দফায় পড়েছে। বিধিনিষেধের শুরুর দিকে জনসমাগম ও গাড়ি চলাচল নিয়ন্ত্রণে পুলিশের যে সরব ভূমিকা ছিল, সময়ের সঙ্গে সঙ্গে তা নিষ্প্রভ হয়ে গেছে। চেকপোস্টগুলোতে শুরুর দিকে পুলিশের উপস্থিতি চোখে পড়ার মতো হলেও এখন তেমনটি দেখা যাচ্ছে না। আর কোথাও কোথাও তো চেকপোস্টই গায়েব হয়ে গেছে।
মুভমেন্ট পাস নিয়ে বিধিনিষেধের শুরুতে যে কড়াকড়ি ছিল তা এখন আলোচনা থেকে বহু দূরে। এখন মুভমেন্ট পাস চেক করতে দেখা যাচ্ছে না পুলিশকে। তবে পুলিশের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, এখনো চলছে মুভমেন্ট পাস চেকিং। কিন্তু পিক-আওয়ারে সব গাড়িকে একসঙ্গে ধরে চেক করা সম্ভব হচ্ছে না।
এদিকে, শপিংমল ও দোকানপাট খুলে দেয়ার সঙ্গে সঙ্গেই একপ্রকার হুমড়ি খেয়ে পড়েছেন ক্রেতারা। কেউ নিজস্ব গাড়ি হাঁকিয়ে যাচ্ছেন মার্কেটে। কেউ যাচ্ছেন অটোরিকশা বা রিকশায়। এদিকে মুভমেন্ট পাস নিয়ে চলাফেরার কথা থাকলেও তা এ নিয়ে এখন আর বালাই নেই।
শুক্রবার (৩০ এপ্রিল) দুপুর থেকে বিকেল পর্যন্ত রাজধানীর মোহাম্মদপুর, ধানমন্ডি, কারওয়ান বাজার, নিউমার্কেটের বেশ কয়েকটি শপিংমল ঘুরে দেখা গেছে, ঈদ আসন্ন, তাই কেনাকাটায় ঝাঁপিয়ে পড়েছের নানা বয়সী নারী-পুরুষ। সাজসজ্জা ও কসমেটিকসের দোকানগুলোতে গতানুগতিক উপচেপড়া ভিড়। এছাড়া, এক শপিংমল থেকে অন্য শপিংমলেও অবাধে আসা-যাওয়া করছেন ক্রেতারা।
রাস্তায় কয়েকজন পথচারীর সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, শুরুর দিকে পুলিশ ব্যাপক চেকিং করত, যেন তাদের অতিক্রম করাই ছিল দুঃসাধ্য কাজ। কিন্তু কয়েকদিন ধরে রাস্তায় পুলিশ আর কিছু বলছে না। রাস্তায় দিন দিন মানুষের সংখ্যা বাড়ছে আর পুলিশে যেন নীরব হয়ে গেছে।
নিউমার্কেটে কেনাকাটা করতে আসা নাবিল ইউসুফ তালুকদার জাগো নিউজকে বলেন, ‘প্রথম প্রথম মুভমেন্ট পাস নিয়ে বের হতে হয়েছে। কিন্তু গত কয়েকদিন মুভমেন্ট পাস ছাড়াই রাস্তায় বের হতে পারছি। মিরপুর থেকে ধানমন্ডি; এরপর নিউমার্কেটে এসেছি কিন্তু কেউ আটকায়নি আমাকে। রাস্তায় পুলিশ থাকলেও চেকপোস্ট চোখে পড়েনি।’
নাম প্রকাশ না করার শর্তে একটি চেকপোস্ট থেকে পুলিশের এক সদস্য বলেন, ‘কারণ থাক বা না থাক, মানুষ রাস্তায় বের হবেই। অনেকে বোঝেন-ই না মুভমেন্ট পাস কী। আবার যারা বোঝেন, তাদের অনেকে নেন না। উল্টো আমাদের সঙ্গে তর্ক করেন। জনগণের সহযোগিতা করার মনোভাব নেই বললেই চলে। এমন একটা দুঃসময় কাটিয়ে উঠতে তো আমরা সবাই চেষ্টা করছি। যদি সহযোগিতা না করে, তাহলে কথা বলে কতক্ষণ? আপনি তো বোঝেনই সব।’
ট্রাফিক বিভাগের রমনা জোনের সহকারী উপ-কমিশনার (এসি) মো. রেফাতুল ইসলাম বলেন, ‘গত রোববার থেকে রাস্তায় গাড়ির তীব্র চাপ। চেকপোস্টগুলোতে চেক করে কুলিয়ে উঠতে পারছি না। সব গাড়ি যদি চেক করতে যাই, তাহলে রাস্তায় চলাচল অসম্ভব হয়ে পড়বে। উল্টো লোকজন ভোগান্তিতে পড়বে। মোটামুটি অনেক গাড়ি রাস্তায় বের হয়েছে। যারা বের হচ্ছেন, প্রত্যেকেরই কোনো না কোনো কারণ আছেই। তবে ঢালাওভাবে চেক না করে সন্দেহভাজন মনে হলে চেকপোস্টে চেক করা হচ্ছে।’
পুলিশ সদর দফতর সূত্রে জানা যায়, ১৩ এপ্রিল থেকে ২৯ এপ্রিল পর্যন্ত মুভমেন্ট পাস-এর ওয়েবসাইটে হিট পড়েছে ২১ কোটি ৮৪ লাখ ৪৭ হাজার ৪৮৯টি। এখন পর্যন্ত রেজিস্ট্রেশন করেছেন ১১ লাখ ৯৩ হাজার ১৯৭ জন। পাস ইস্যু হয়েছে ১৭ লাখ ৫৫ হাজার ৯৮৬টি। শুরুর দিকে মুভমেন্ট পাস নেয়ার প্রবণতা বেশি থাকলেও এখন কমে এসেছে।
গত ২৭ এপ্রিল পুলিশ সদর দফতরে ব্যবসায়ী ও মালিক প্রতিনিধির সঙ্গে বৈঠক শেষে আইজিপি ড. বেনজীর আহমেদ বলেন, মার্কেটগুলোতে ক্রেতা-বিক্রেতা সবাইকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে এবং মাস্ক পরে কেনাকাটা করতে হবে।
আর গত ২৮ এপ্রিল ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ ডিএমপি কমিশনার মোহা. শফিকুল ইসলাম শপিংমল ও মার্কেটের মালিক সমিতির নেতাদের সঙ্গে বৈঠকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে ব্যবসা পরিচালনা কথা বলেছেন। মার্কেট মালিক সমিতির নেতারা পুলিশের উপস্থিতিতে মার্কেটে ঘুরে ঘুরে মাস্ক ও স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে মানুষকে উদ্বুদ্ধ করবেন। এই বিষয়ে সংশ্লিষ্ট বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনারদের ব্যবস্থা নিতেও বলেন তিনি।
এদিকে, করোনাভাইরাসের সংক্রমণ রোধে চলমান লকডাউনের (বিধিনিষেধ) মেয়াদ শেষ হচ্ছে আগামী ৫ মে। এরপর ঈদ পর্যন্ত মাত্র তিনটি কর্মদিবস পাওয়া যাবে। তাই প্রশ্ন উঠেছে- এই পরিস্থিতিতে কী লকডাউনের মেয়াদ আরও বাড়বে নাকি বিধিনিষেধ শিথিল করে দেয়া হবে।
বিষয়টি নিয়ে চিন্তা-ভাবনা করছে সরকার। ঈদের আগে তিনটি কর্মদিবস থাকলে কিছুটা শিথিল করে লকডাউনের মেয়াদ বাড়ানো হতে পারে। তবে ৫ মে’র আগে আন্তঃমন্ত্রণালয় সভা করে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে বলে জানিয়েছেন মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ ও জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা।
চাঁদ দেখা সাপেক্ষে আগামী ১৩ বা ১৪ মে দেশে মুসলমানদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব পবিত্র ঈদুল ফিতর উদযাপিত হবে।
কোভিড-১৯ সংক্রমণ রোধে গত ১৪ এপ্রিল ভোর ছয়টা থেকে আটদিনের কঠোর লকডাউন শুরু হয়। লকডাউনের মধ্যে পালনের জন্য ১৩টি নির্দেশনা দেয়া হয় সরকারের পক্ষ থেকে। পরে সাতদিন করে দু-দফা লকডাউনের মেয়াদ বাড়ানো হয়। সেই মেয়াদ শেষ হবে আগামী ৫ মে (বুধবার) মধ্যরাতে।
টিটি/এমআরআর/এএসএম