পুরোনো রূপেই ঢাকা, চলছে না কেবল গণপরিবহন
‘রাস্তার অবস্থা দেখছেন, লকডাউন চললেও শত শত মানুষ। যানবাহনের জট, পুলিশের চেকপোস্ট, মোবাইল কোর্ট গেল কোথায়? মার্কেট ও শপিংমল তো খুলল, গণপরিবহন আর বাকি থাকবে কেনো, ওটাও খুলে দিক, ষোলকলা পূর্ণ হবে।’
মঙ্গলবার (২৭এপ্রিল) রাজধানীর মহাখালী ওভার ব্রিজে যানজটে আটকে পড়া একটি প্রাইভেটকারের চালক পাশের আরেক গাড়ির ড্রাইভারের কথাপকথন এটি। জবাবে পাশের গাড়ির চালক হেসে বলে উঠেন ‘হ! ওস্তাদ গণপরিবহন ছাড়াই তো ঢাকা পুরোনো চেহারায় ফিরে আইছে’।
করোনাভাইরাসের সংক্রমণরোধে সরকারি নির্দেশনায় কাগজে-কলমে লকডাউন অব্যাহত থাকলেও বাস্তবে এদিন ঢাকায় লকডাউনের ছিটে-ফোঁটাও চোখে পড়েনি। গত দুই সপ্তাহ লকডাউনে চলাকালে প্রধান সড়কসহ বিভিন্ন রাস্তায় ব্যারিকেড, চেকপোস্ট এবং পুলিশসহ আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর টহল ও নজরদারির কারণে কমসংখ্যক মানুষ রাস্তায় বের হচ্ছিলেন। বাইরে বের হওয়ার জন্য ঢাকা মহানগর পুলিশ ‘মুভমেন্ট পাস’ ইস্যু করেছিল।
ফলে কেউ ‘মুভমেন্ট পাস’ নিয়ে কেউ হাসপাতাল কিংবা জরুরি কাজের কথা বলে বাইরে বের হতো। কিন্তু তৃতীয় দফা (২২এপ্রিল থেকে) লকডাউনের প্রথম দিন থেকে শিথিল হতে শুরু করে পুলিশের চেকপোস্ট ও নজরদারি। এরই মাঝে গত ২৪ এপ্রিল থেকে মার্কেট ও শপিংমল খুলে দেয়ায় রাস্তাঘাটে মানুষের ভিড় বাড়তে থাকতে।
সরেজমিন রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় দেখা গেছে, রাস্তাঘাটে মানুষের আনাগোনা আগের চেয়ে কয়েকগুণ বেড়েছে। গণপরিবহন ছাড়া রাস্তায় অন্যান্য বিভিন্ন যানবাহন চলাচল করছে। কঠোর লকডাউন চলাকালে রাস্তায় ব্যারিকেড দিয়ে যে চেকপোস্ট তৈরি করা হয়েছিল, সেগুলোতে পুলিশ বা মোবাইল কোর্টের কেউ নেই। প্রচণ্ড রোদে পুলিশকে অদূরে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা গেছে।
তবে কয়েকটি সড়কে ট্রাফিক পুলিশের সদস্যদের প্রাইভেট ও মোটরসাইকেল থামিয়ে কাগজপত্র পরীক্ষা করতে দেখা গেছে। বিভিন্ন মার্কেট ও শপিংমলের সামনে প্রচণ্ড ভিড় দেখা যায়। কোথাও কোথাও যানবাহনের লম্বা জট সৃষ্টি হয়।
স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বাইরে বের হওয়া সবাই মুখে মাস্ক পরিধানসহ স্বাস্থ্যবিধি মেনে না চললে ফের করোনাভাইরাসের সংক্রমণ মারাত্মক আকার ধারণ করতে পারে।
এদিকে আজ স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক মহাখালীতে করোনা সম্পর্কিত প্রেস ব্রিফিংয়ে বলেন, লকডাউন করোনাভাইরাস সংক্রমণ রোধের একমাত্র উপায় নয়। এটি অনেকগুলো উপায়ের একটি। দীর্ঘমেয়াদী লকডাউনের কারণে অর্থনীতি মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। তাই করোনার সংক্রমণ থেকে বাঁচতে মুখে মাস্ক পরিধানসহ স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে। অন্যথায় করোনার সংক্রমণ ফের বেড়ে যাবে।
আর বিকেলে পুলিশ হেডকোয়ার্টার্সের কনফারেন্স রুমে আয়োজিত দোকান মালিক সমিতির নেতাদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় আইজিপি ড. বেনজীর আহমেদ বলেছেন, সংক্রমণ রোধে দোকানপাট, শপিংমলসহ সবধরনের কেনাকাটার ক্ষেত্রে অবশ্যই মাস্ক পরিধানসহ স্বাস্থ্যবিধি কঠোরভাবে মেনে চলতে সবার প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি। কেনাকাটার ক্ষেত্রে দোকানি এবং ক্রেতা উভয়কে অবশ্যই মাস্ক পরিধান করতে হবে। দোকান বা শপিংমলের প্রবেশপথে স্যানিটাইজার বা হাত ধোঁয়ার ব্যবস্থা রাখতে হবে।
‘শপিংমলে প্রবেশকালে অবশ্যই শরীরের তাপমাত্রা পরীক্ষা করতে হবে। সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা নিশ্চিত করতে একসঙ্গে কোনো দোকানে বেশি লোকের প্রবেশ নিরুৎসাহিত করতে হবে। বড় বড় দোকানের ক্ষেত্রে ক্রেতার অবস্থান গোল চিহ্ন দিয়ে নির্দিষ্ট করে রাখতে হবে’ বলে উল্লেখ করেন আইজিপি।
এমইউ/এএএইচ/এমএস