বাবরি মসজিদের নামে বিদেশ থেকে কোটি কোটি টাকা আনতেন মামুনুল: পুলিশ
পুলিশের তেজগাঁও বিভাগের উপ-কমিশনার (ডিসি) মো. হারুন-অর-রশীদ বলেছেন, ভারতের বাবরি মসজিদের নামে ভারত বিদ্বেষী বিভিন্ন দেশ থেকে কোটি কোটি আনতেন হেফাজতে ইসলামের কেন্দ্রীয় যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা মামুনুল হক।
তিনি বলেন, মামুনুলকে রিমান্ডে নেয়ার পরে তার মোবাইলটি জব্দ করা হয়। সেই মোবাইল থেকে অনেক তথ্য তারা পেয়েছেন। এর মধ্যে বিশেষ করে, তার মোবাইলে কাতার, দুবাই, পাকিস্তানসহ অনেক দেশ থেকে প্রচুর পরিমাণ টাকা আসত ।
রোববার (২৫ এপ্রিল) বিকেলে মো. হারুন-অর-রশীদ রিমান্ডে থাকা মামুনুল হকের বিষয়ে সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা জানান।
তিনি বলেন, ‘রিমান্ডে থাকা মামুনুল হকের মোবাইল আমরা জব্দ করেছি। ভারতের বাবরি মসজিদের নামে ভারত বিদ্বেষী বিভিন্ন দেশ থেকে কোটি কোটি আনতেন মামুনুল। টাকাগুলো বিকাশের মাধ্যমে আনা হতো। বাবরি মসজিদের নাম দিলে ইসলামিক সেন্টিমেন্ট পাবে অন্যদিকে ভারত বিদ্বেষী লোকের কাছ থেকে সহযোগিতা পাবে এজন্য বাবরি মসজিদের নামে টাকাগুলো আনা হতো।’
ডিসি হারুন-অর-রশীদ বলেন, ‘এই টাকা দিয়ে বাংলাদেশের বিভিন্ন মসজিদে ও কওমি মাদরাসায় উগ্র জঙ্গিবাদী কায়দায় কিছু কিছু লোককে মামুনুল হক মেসেজ করেছিলেন। মামুনুল হককে যেন বিভিন্ন মাদরাসায় ওয়াজ মাহফিলের জন্য বক্তা হিসেবে নেয়া হয় সেজন্য সে অনুরোধ জানাতেন।’
পুলিশ কর্মকর্তা হারুন বলেন, ‘গ্রেফতার হওয়ার আগে মামুনুল সংসদ ভবন, গণভবন, বঙ্গভবন, বড় বড় আলেম ওলামা, এমপি-মন্ত্রী কাউকেই তোয়াক্কা করতেন না। আমরা বললাম, আপনি জাফর ইকবালকে কটূক্তি করলেন, শাহরিয়ায় কবিরকে মুরগিচোরা বললেন, আপনার দিকে কেউ তাকালে চোখ তুলে ফেলবেন, এগুলো কেন বললেন? তিনি উত্তর দিলেন, “এগুলো রাজনৈতিক কথাবার্তা। বক্তব্য দেয়ার সময় চলে এসেছে”।’
পুলিশের এই কর্মকর্তা বলেন, ‘রিমান্ডে তাকে আমরা জিজ্ঞেস করি, আপনি একটি সভায় বক্তব্য দিয়েছিলেন, প্রধানমন্ত্রী সম্পর্কে কেউ কটূক্তি করলে সে ১২ ঘণ্টার মধ্যে গুম হয়ে যায়। আমরা তাকে জিজ্ঞেস করি, এমন কে গুম হয়েছে? তিনি কোনো উত্তর দিতে পারেননি। এছাড়া বিয়ের বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদে মামুনুল পুলিশের কাছে তিন-চারটি বউয়ের কথা স্বীকার করেছেন।’
পুলিশের এই কর্মকর্তা বলেন, ‘মামুনুল হকের সঙ্গে তার আপন ভগ্নিপতি মাওলানা মুফতি নেয়ামতুল্লাহ দীর্ঘ ১৫-২০ বছর পাকিস্তানে ছিলেন। সেখানে একটি মাদরাসা করেছিলেন। পাকিস্তানের একটি জঙ্গিগোষ্ঠীর সঙ্গে মামুনুলের সম্পৃক্ততা ছিল। ২০০৫ সালে তিনি পাকিস্তানে যান। সেখান থেকে পরামর্শ ও প্রশিক্ষণ নিয়ে এসে দেশের বিভিন্ন স্থানে বোমা হামলা, অগ্নিসংযোগ ও সহিংসতার ঘটনা ঘটান। এছাড়া সরকার উৎখাতে মামুনুল হক সব ধরনের পরিকল্পনাও করেন।’
পুলিশের তেজগাঁও বিভাগের এই উপ-কমিশনার বলেন, ‘মাওলানা মুফতি নেয়ামতুল্লাহ ও মামুনুল হক একসঙ্গে ৪০ দিনের অধিক পাকিস্তানে অবস্থান করেন। সেখান থেকে জঙ্গি ও উগ্রবাদী মতাদর্শ নিয়ে দেশে ফেরেন তিনি। পাকিস্তানের একটি রাজনৈতিক ধর্মীয় সংগঠনকে মডেল হিসেবে মনেপ্রাণে বিশ্বাস করে দেশে এসে বাংলাদেশের বিভিন্ন মতবাদের মানুষকে একত্রিত করেন। বিদেশ থেকে আসা টাকা সেই সংগঠনের মাধ্যমে সরকার উৎখাতের পরিকল্পনায় ব্যবহার করেন।’
তিনি বলেন, ‘মাওলানা মুফতি নেয়ামতুল্লাহ মামুনুল হকের আপন ভগ্নিপতি। তিনি প্রায় ১৫-২০ বছর পাকিস্তানে ছিলেন। পরবর্তীতে তিনি বাংলাদেশে এসে জামিয়া রাহমানিয়া মাদরাসায় শিক্ষক হিসেবে যোগদান করেন। এরপর মামুনুল হক বোনকে তার সঙ্গে বিয়ে দেন। ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার অন্যতম আসামি তাজের সঙ্গে এই নেয়ামতুল্লাহর ঘনিষ্ঠতা ছিল। নেয়ামতুল্লাহ ওই হামলার ঘটনায় গ্রেফতারও হয়েছিলেন। কিন্তু মামুনুল হকের বাবা শায়খুল হাদিস আজিজুল হক বিএনপি নেতৃত্বাধীন জোটের শরিক দলের নেতা হওয়ায় তার জামাতাকে প্রভাব খাটিয়ে মুক্ত করে নিয়ে আসেন।’
হারুন আরও বলেন, ‘মামুনুল হকের আপন ভায়রা কামরুল ইসলাম আনসারী জামায়াতের বড় নেতা। তার বাড়ি ফরিদপুরের টেকেরহাট। তিনি জামায়াতের শীর্ষ নেতাদের একজন। তার মাধ্যমেই জামায়াতের সঙ্গে গোপন আঁতাত করেছেন মামুনুল। অর্থাৎ মামুনুল হকের সঙ্গে জামায়াতের গোপন আঁতাত, গ্রেনেড হামলার আসামিদের যোগাযোগ ছিল। পাকিস্তানি গোয়েন্দা সংস্থার মাধ্যমে পাকিস্তানে অবস্থান করে ওই দেশের একটি সংগঠনের একটি মডেল এনে বাংলাদেশে হেফাজতকে সিঁড়ি হিসেবে ব্যবহার করেন তিনি।’
তিনি আরও বলেন, ‘কওমি মাদরাসার ছাত্রদের ব্যবহার করে রাজনৈতিক ফায়দা নেয়ার পাঁয়তারা করছিলেন মামুনুল। রিমান্ডে শাপলা চত্বরে যাওয়া থেকে শুরু করে অনেক কথার বিষয়ে স্পষ্ট ব্যাখ্যা দিতে পারেননি তিনি। এছাড়া বিভিন্ন বক্তব্যের বিষয়ে সুস্পষ্ট ব্যাখ্যা দিতে পারেননি তিনি।’
যেই মামলায় মামুনুল গ্রেফতার হন সেই মামলার অন্যতম আসামি তার ভাই মাহফুজুল হক। সেই আসামি কীভাবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক করেন? সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে হারুন বলেন, ‘তিনি কারও সঙ্গে দেখা করেছিলেন কি-না আমার তা জানা নেই। তবে আমরা মামলার তদন্ত কর্মকর্তাকে বলেছি, এই মামলায় যাদের সংশ্লিষ্টতা পাওয়া যাবে সবাইকেই আইনের আওতায় আনা হবে।’
টিটি/এমআরআর/এমকেএইচ