করোনার আইসিইউ বিল দিতে হিমশিম খাচ্ছে মধ্যবিত্ত পরিবার
করোনায় আক্রান্ত হয়ে টানা ১১ দিন রাজধানীর গ্রিনলাইফ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের আইসিইউতে রয়েছেন মিজানুর রহমান (ছন্দনাম)। তার দুই ছেলে প্রতিদিন হাসপাতালের বিল পরিশোধ করে চলেছেন। ভর্তির পর থেকেই প্রতিদিন কমপক্ষে ৬০ হাজার টাকা খরচ হচ্ছে তাদের। মধ্যবিত্ত পরিবারের হলেও তারা এ খরচ জোগাড়ে হিমশিম খাচ্ছেন।
বৃহস্প্রতিবার (২২ এপ্রিল) গ্রিনলাইফ হাসপাতালের পাঁচ তালায় আইসিইউয়ের সামনে কথা হয় মিজানুর রহমানের বড় ছেলের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘ওই সময় (১১ এপ্রিল) কোথাও আইসিইউ খালি ছিল না। অবশেষে এখানে পেয়ে যাই। ভর্তির সময় শুনেছিলাম প্রতিদিন ৪০ থেকে ৪৫ হাজার টাকা খরচ হবে। এখন দেখি খরচ হচ্ছে ৬০ থেকে ৭০ হাজার টাকা। এতো টাকা প্রতিদিন জোগাড় করা খুব কষ্টকর হয়ে যায়।’
এ সময় আইসিইউয়ের বিল অস্বাভাবিক বেশি বলে অভিযোগ করে তিনি বলেন, ‘বেড ভাড়া ১৫ হাজার টাকা নেয়। কিন্তু তারা প্রতিদিন টোটাল ৬০ থেকে ৭০ হাজারের বিল ধরিয়ে দেয়। জানতে চাইলে শুধু বলে বিল সেকশনে যান। বুঝিয়ে দেবে।’
তিনি বলেন, ‘বিল কী বুঝবো। ভিতরে (আইসিইউতে) কী হচ্ছে সেটা তো আমরা দেখতে পারি না। প্রতিদিন যে ডজন ডজন ওষুধ, লিটার লিটার অক্সিজেন, টেস্ট, সার্ভিস ও মেশিনারির চার্জের বিল ধরছে, সেসব আদো করা হচ্ছে কিনা সেটা কে জানে। দিনে হাজার হাজার টাকা ডাক্তারের বিল নেয়া হচ্ছে। ডাক্তার আসলেও বিল হচ্ছে, না আসলেও হচ্ছে।’
আইসিইউ নিয়ে মিজানুর রহমানের বড় ছেলের অভিযোগই নতুন নয়। বেসরকারি হাসপাতালগুলোতে আগে থেকেই বেপরোয়াভাবে চলে আসছে আইসিইউ বাণিজ্য। এর মধ্যে করোনাকালে সাধারণত সংকটাপন্ন ও জটিল রোগীদের আইসিইউতে রেখে চিকিৎসা দেয়ার প্রয়োজনীয়তা বেড়ে যাওয়াতে সে প্রবণতা আরও বেড়েছে।
তবে এসব বিষয়ে গ্রিনলাইফ হাসপাতালের ম্যানেজার (এডমিন) সোহরাব হোসেন জাগো নিউজকে বলেন, ‘আশপাশের অন্যান্য হাসপাতালের থেকে আমাদের এখানে খরচ অনেক কম। আর আইসিইউ বাবদ বিল যেটা নেয়া হয় তার সকল তথ্য আমরা রোগির স্বজনদের দিয়ে থাকি। সব তথ্য রেকর্ড থাকে। যে কেউ যেকোনো খরচের বিষয়ে জানতে পারে।’
এদিকে গ্রিনলাইফ হাসপাতালে বৃহস্প্রতিবার দুপুরে ১০টি আইসিইউ ও ৮টি এইচডিও’র মধ্যে সবগুলোতে রোগী ভর্তি ছিল। তারপরও এ সময় আইসিইউতে রোগী ভর্তির জন্য করোনা আক্রান্ত অনেকের স্বজনকে খোঁজ-খবর নিতে দেখা গেছে। হাসপাতাল থেকে বিকেলের মধ্যে আইসিইউ খালি হতে পারে বলে জানানো হচ্ছে।
কুর্মিটোলা হাসপাতাল থেকে আগত এক করোনা রোগীর স্বজন বলেন, ‘সরকারি হাসপাতালগুলোতে আইসিইউ পাচ্ছি না। বাধ্য হয়েই বেসরকারি হাসপাতালে খোঁজ নিচ্ছি। বেসরকারি হাসপাতালেও এখন রোগীর ব্যাপক চাপ। কয়েকটি হাসপাতালে ফোনে খোঁজ নিয়েছি, খালি নেই। এখানে এক পরিচিত কর্মকর্তার মাধ্যমে এসেছি। দেখি কী হয়।’
আরও বেশ কয়েকজন করোনা রোগীর স্বজনদের অভিযোগ, এই সংকটকালে সরকারি হাসপাতালে জায়গা না পেয়ে বেশি ব্যয়ের কথা জেনেও রোগীকে বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করতে বাধ্য হয়েছিলেন তারা। রোগীকে সুস্থ করে তুলতে এখন তাদের লাখ লাখ টাকা খরচ করতে হচ্ছে। অর্থ খরচ করেও অনেক সময় সুচিকিৎসা মিলছে না।
তারা বলছেন, করোনা আক্রান্ত রোগী গ্রিনলাইফ হাসপাতালে সাধারণ ওয়ার্ডে থাকলেও প্রতিদিন ১৫ থেকে ৩০ হাজার টাকা বিল আসছে। এইচডিওতে এর চেয়ে বেশিও খরচ হচ্ছে, যা ৩৫ থেকে ৫০ হাজার টাকা পর্যন্ত।
এনএইচ/ইএ/এএসএম