লকডাউন : এখনও শুরুই হয়নি সরকারি ত্রাণ বিতরণ
অডিও শুনুন
করোনাভাইরাস সংক্রমণ পরিস্থিতি উন্নয়নে দেশে কঠোর লকডাউন (বিধিনিষেধ) চলছে। প্রাথমিকভাবে ৯ দিনের বিধিনিষেধের পর সাত দিনের কঠোর লকডাউন ঘোষণা করে সরকার। এখন তা আরও সাত দিন বাড়িয়ে ২৮ এপ্রিল মধ্যরাত পর্যন্ত করা হয়েছে।
লকডাউন শ্রমজীবী মানুষকে সীমাহীন কষ্টে ফেলেছে। কর্মহীন এসব মানুষ মানবেতর জীবনযাপন করছে। কিন্তু এখনও ত্রাণ বিতরণ কার্যক্রম শুরুই করতে পারেনি সরকার। সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, বরাদ্দ ইতোমধ্যে মাঠ পর্যায়ে পৌঁছে গেছে। ত্রাণ দিতে লকডাউনে ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা তৈরির কাজ চলছে। শিগগিরই ত্রাণ বিতরণ কার্যক্রম শুরু হবে।
গত ৮ এপ্রিল দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় জানায়, করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ের কারণে বিধিনিষেধ আরোপের পরিপ্রেক্ষিতে কর্মহীন মানুষকে মানবিক সহায়তা দিতে সরকার ৫৭২ কোটি ৯ লাখ ২৭ হাজার টাকা বরাদ্দ দিয়েছে। প্রায় এক কোটি ২৪ লাখ ৪১ হাজার ৯০০ পরিবারকে ভিজিএফ (ভালনারেবল গ্রুপ ফিডিং) কর্মসূচির আওতায় এ আর্থিক সহায়তা দেয়া হবে। পরিবারপ্রতি ৪৫ টাকা কেজি দরে ১০ কেজি চালের সমমূল্য অর্থাৎ কার্ডপ্রতি ৪৫০ টাকা হারে আর্থিক সহায়তা দেয়া হবে।
অপরদিকে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে ঘোষণা দেয়া হয়েছে, করোনা সংক্রমণ পরিস্থিতিতে নিম্ন আয়ের প্রায় ৩৫ লাখ পরিবারকে আড়াই হাজার টাকা করে আর্থিক সহায়তা দেবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এছাড়া সম্প্রতি প্রাকৃতিক দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্ত এক লাখ কৃষক পরিবার পাবে পাঁচ হাজার করে টাকা।
দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদফতরের মহাপরিচালক (অতিরিক্ত সচিব) মো. আতিকুল হক বুধবার (২১ এপ্রিল) জাগো নিউজকে বলেন, ‘আমাদের ত্রাণ বিতরণের প্রস্তুতি আছে। আমরা পৌরসভা, জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে বরাদ্দ পাঠিয়েছি। তারা তালিকা প্রস্তুত করছে, কারা ক্ষতিগ্রস্ত, কারা ত্রাণ পেতে পারে। আমরা হয়তো খুব তাড়াতাড়ি ত্রাণ বিতরণ শুরু করতে পারব। সিচুয়েশনটা আমরা অবজার্ব (পর্যবেক্ষণ) করছি।’
তিনি বলেন, ‘লকডাউনে সবাই ক্ষতিগ্রস্ত হয়নি, কিছু কিছু উইংস তো এখনও খোলা আছে। লকডাউন আরও সাতদিন বেড়েছে। এর মধ্যেই হয়তো আমরা ত্রাণ বিতরণ কার্যক্রম শুরু করব।’
‘ভিজিএফ, জিআর-এর আওতায় ত্রাণ কার্যক্রম ছাড়াও প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকেও ক্ষতিগ্রস্তদের সহায়তা দেয়ার ঘোষণা দেয়া হয়েছে। এ বিষয়ক নীতিমালাটা হয়তো আমরা আজ-কালকের মধ্যে পেয়ে যেতে পারি। পেয়ে গেলে আমাদের যে রিসোর্স আছে, মাঠ পর্যায়ে আমরা এই পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে পারব, কোনো সমস্যা হবে না।’
মহাপরিচালক আরও বলেন, ‘আমরা ভিজিএফ, জিআর ক্যাটাগরিতে পরিবারপ্রতি ৫০০ ও ৪৫০ টাকা দেব। এছাড়াও খাবারের প্যাকেট দেয়ারও প্রস্তুতি আছে। ঢাকা থেকে আলু কিনতে হলে অনেক টাকা লাগে। আমরা যদি উপজেলা পর্যায়ে টাকা দেই, এই আলুই চার ভাগের এক ভাগ টাকায় কেনা যাবে। গত বছর জেলা পর্যায়ে টাকা দিয়েছিলাম, তারা অনেক কম টাকায় জিনিসগুলো কিনে প্যাকেট করে ত্রাণ হিসেবে বিতরণ করেছিল।’
তিনি আরও বলেন, ‘গত বছর ত্রাণ কার্যক্রমে যে সমস্যার উদ্ভব হয়েছিল, সেগুলো যাতে আর না হয় সেটা বিবেচনা করেই আমরা এগোচ্ছি। আমরা নিয়মিত অফিস করছি, প্রস্তুতি নিচ্ছি।’
ত্রাণ বিতরণে কোনো আর্থিক সংকট নেই জানিয়ে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদফতরের মহাপরিচালক বলেন, ‘আমাদের গোডাউনে খাবার প্রবেশ করা শুরু হয়েছে। আরও টেন্ডার আহ্বান করা হয়েছে। খাবার দ্রুত সরবরাহ নিতে পারি। তবে খাবার বিতরণের বিষয়ে এখনও চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত আমরা নেইনি। মন্ত্রী, সচিব, সবাই আমরা বসে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেব।’
করোনাভাইরাসের সংক্রমণ রোধে গত ১৪ এপ্রিল ভোর ৬টা থেকে আটদিনের কঠোর লকডাউন শুরু হয়। সেই মেয়াদ শেষ হচ্ছে আজ বুধবার (২১ এপ্রিল) মধ্যরাতে। লকডাউনের মধ্যে পালনের জন্য ১৩টি নির্দেশনা দেয়া হয়েছে সরকারের পক্ষ থেকে। তবে করোনা সংক্রমণ পরিস্থিতির এখনও উন্নতি হয়নি। তাই লকডাউনের মেয়াদ আগামী ২৮ এপ্রিল পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে।
করোনা সংক্রমণ উদ্বেগজনক হারে বাড়তে থাকায় এর আগে গত ৫ এপ্রিল ভোর ৬টা থেকে ১৪ এপ্রিল ভোর ৬টা পর্যন্ত বিধিনিষেধ ছিল। তবে গণপরিবহন, মার্কেট খোলা রেখে এই লকডাউন ছিল অনেকটাই অকার্যকর।
আরএমএম/এআরএ/এমকেএইচ