বাঁশখালীতে বিদ্যুৎকেন্দ্রে শ্রমিক-পুলিশ সংঘর্ষ, নিহত ৫
অডিও শুনুন
চট্টগ্রামের বাঁশখালী উপজেলায় কয়লা বিদ্যুৎকেন্দ্রে বিভিন্ন দাবিতে শ্রমিকদের বিক্ষোভ সংঘর্ষে রূপ নিয়েছে। এতে পাঁচজন নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন আরও অন্তত ৩০ জন।
শনিবার (১৭ এপ্রিল) দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে উপজেলার গণ্ডামারা এলাকায় এস আলম গ্রুপের মালিকানাধীন ওই কেন্দ্রে এ সংঘর্ষ হয়। তবে পরিস্থিতি এখন পুলিশের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।
সংঘর্ষের পর বাঁশখালী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চারজনের মরদেহ নেয়া হয়। তারা হলেন- শুভ (২৩), মো. রাহাত (২৪), আহমদ রেজা (১৯) ও রনি হোসেন (২২)।
গুলিবিদ্ধ হয়ে গুরুতর আহত কয়েকজনকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে কর্তব্যরত চিকিৎসক হাবিবুল্লাহ (১৯) নামে আরেক শ্রমিককে মৃত ঘোষণা করেন। বাকিদের হাসপাতালে রেখে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে।
বিষয়টি জাগো নিউজকে নিশ্চিত করেছেন বাঁশখালী থানার পরিদর্শক (তদন্ত) আজিজুল ইসলাম।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বাঁশখালী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের জরুরি বিভাগে কর্তব্যরত চিকিৎসক কানিজ ফাতেমা রুম্পা জাগো নিউজকে বলেন, ‘গণ্ডামারা এলাকায় সংঘর্ষের ঘটনায় এখন পর্যন্ত চারজনের মরদেহ হাসপাতালে আছে। আহতদের চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে।’
উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. মো. শফিউর রহমান মজুমদার বলেন, চারটি মরদেহ বাঁশখালী স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে রাখা হয়েছে। ১২ জনকে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে বিভিন্ন হাসপাতালে রেফার করা হয়েছে।
এদিকে চমেক হাসপাতাল পুলিশ ফাঁড়ির সহকারী উপ-পরিদর্শক (এএসআই) শীলব্রত বড়ুয়া বলেন, বাঁশখালী এলাকা থেকে ১০-১২ জন গুলিবিদ্ধ শ্রমিককে হাসপাতালে আনা হয়। সেখানে একজনকে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। মৃতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে।
আহতদের সঙ্গে চমেক হাসপাতালে আসা গন্ডামারা ইউনিয়নের বাসিন্দা তৌহিদ জাগো নিউজকে বলেন, ‘ওই বিদ্যুৎকেন্দ্রে শ্রমিক আছে ১০ হাজারের মতো। তারা গতকাল ইফতার-সেহরির সময় কাজ বন্ধ ও কর্মঘণ্টা কমানোর দাবি নিয়ে আন্দোলন করছিলেন। দাবি মানার কথাও ছিল। কিন্তু আজকে পুলিশ গুলি চালালে এ হতাহতের ঘটনা ঘটে। তবে আন্দোলনে বেতন বাড়ানোর কোনো দাবি ছিল না।’
স্থানীয় আরও কয়েকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, শ্রমিকদের মূল দাবি ১০ ঘণ্টার ডিউটি রমজানে কমিয়ে আট ঘণ্টা করা। যেন শ্রমিকরা ইফতারের সময় পান। প্রয়োজনে রোজায় যেহেতু দুপুরে খাওয়া লাগে না, সেহেতু দুপুরের বিরতিও বাদ দিয়ে আট ঘণ্টা ডিউটি নির্ধারণের কথা বলে আসছিলেন তারা।
পুলিশের পক্ষ থেকে দাবি করা হচ্ছে, এ ঘটনায় ইয়াসির (২৪), আহমদ কবির (২৬) ও আসাদুজ্জামান (২৩) নামে তিনজন পুলিশ সদস্য আহত হয়েছেন।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে পুলিশের চট্টগ্রাম রেঞ্জের উপ-মহাপরিদর্শক (ডিআইজি) আনোয়ার হোসেন জাগো নিউজকে বলেন, ‘ঘটনার বিষয়ে বিস্তারিত কর্তৃপক্ষ থেকে জেনে নিন। শ্রমিকরা পুলিশের ওপর আক্রমণ করেছে, তাই পুলিশ গুলি চালাতে বাধ্য হয়েছে। পুলিশ কখনো আগে গুলি করে না। এরপরও নিহতের স্বজনরা যদি অভিযোগ করে থাকেন, তবে পুলিশ কেন গুলি চালিয়েছে তা তদন্ত করা হবে।’
এ বিষয়ে বেশ কয়েকবার চেষ্টা করেও সংশ্লিষ্ট বিদ্যুৎকেন্দ্র কর্তৃপক্ষের কারও বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
এই বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের সময়ও স্থানীয়দের সঙ্গে কর্তৃপক্ষের লোকজনের সংঘর্ষ বাধে। ২০১৬ সালের ৪ এপ্রিলের ওই সংঘর্ষে চারজন নিহত হয়েছিলেন।
মিজানুর রহমান/জেএইচ/এইচএ/এমএস