দোকানে দোকানে বৈশাখী পোশাক, নেই ক্রেতা

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ০৪:১৮ পিএম, ১৩ এপ্রিল ২০২১

অডিও শুনুন

রাত পোহালেই পহেলা বৈশাখ। তবে রাজধানীর মার্কেটগুলোতে নেই ক্রেতার সমাগম। বৈশাখী পণ্য বিক্রি করতে না পারায় মুখে হাসি নেই বিক্রেতাদের। করোনাভাইরাসের সংক্রমণ বাড়ায় লকডাউনের প্রভাব পড়েছে এবারের বৈশাখী কেনাকাটায়। মঙ্গলবার (১৩ এপ্রিল) দুপুরে সরেজমিনে মিরপুরের বিভিন্ন মার্কেট ও ফ্যাশন হাউজে এমন দৃশ্য দেখা গেছে।

ব্যবসায়ীরা বলছেন, বৈশাখী আমেজে বিক্রি তো দূরের কথা, স্বাভাবিক সময়ের তুলনায় বেচাকেনা অর্ধেকে নেমেছে। বৈশাখ উপলক্ষে তারা লগ্নি করে পণ্য তুলেছেন। যার প্রায় পুরোটাই অবিক্রিত থেকে যাচ্ছে। ক্ষতি পোষাতে সরকারি সাহায্য না পেলে পথে বসতে হবে ব্যবসায়ীদের।

ফ্যাশন হাউজগুলো ঘুরে দেখা গেছে, বিক্রেতারা অলস সময় পার করছেন। কয়েকটিতে হাতে গোনা কিছু ক্রেতা আছেন। এক-দু’জন সেলসম্যান তাদের পণ্য দেখাচ্ছেন। অন্যরা দাঁড়িয়ে-বসে সময় কাটাচ্ছেন।

jagonews24

দুপুরে মিরপুর ২-এ ‘অর্কিড ফ্যাশন হাউজ’-এ আধাঘণ্টারও বেশি সময় ঘুরে মাত্র দু’জন ক্রেতার দেখা মেলে। ফ্যাশন হাউজটির মালিক জাহিদুল ইসলাম বলেন, ‘সরকারি নিয়ম মেনে ভ্যাট-ট্যাক্স দিচ্ছি। আমাদের লোকসানের ভাগ সরকারকেও নিতে হবে।’

তিনি আরও বলেন, ‘আজকে বেচাকেনা নেই। কিন্তু ভ্যাট দিয়ে আসছি। সরকার লকডাউন দিচ্ছে, ব্যবসায়ীদের ভ্যাট তো মওকুফ করছে না। এপ্রিলে লকডাউন ঘোষণার আগে বিক্রি বাড়াতে আমরা আশাবাদী ছিলাম। ভেবেছিলাম গত বছরের ক্ষতি পোষাতে পারবো। আমার দুই আউটলেটে ২০ লাখ টাকার পণ্য উঠিয়েছি। কিন্তু বেচাকেনা তো শূন্যের কোঠায়।’

মিরপুর ১০-এ ‘ঢাকাই জামদানি হাউজ’ এর স্বত্বাধিকারী মোহাম্মদ মনির বলেন, ‘আগে বৈশাখের সময়ে দিনে ৫০-৬০ হাজার টাকা বিক্রি হতো। এখন ১০-১২ হাজার টাকার বেচাকেনা করতেও কষ্ট হচ্ছে।’

jagonews24

তিনি বলেন, ‘করোনার কারণে বিক্রেই নেই। বৈশাখে লাল জামদানির ব্যাপক চাহিদা ছিল। এবার বিক্রি তো নেই-ই, যারা আসছেন তারাও অর্ধেক দাম বলে চলে যাচ্ছে। আমাদের তো ক্ষতি হবেই, পাশাপাশি এই শাড়িগুলো বুননের সঙ্গে যারা জড়িত তারাও ক্ষতিগ্রস্ত হবে।’

মিরপুর ২-এর ফ্যাশন হাউজ ‘দেশজ’-এর বিক্রয়কর্মী সোহেল রানা বলেন, ‘আগে বৈশাখের সেল ছিল রমজানের চেয়েও বেশি। এবার কোনো কিছুই নেই। মালিকরা অনেক টাকা বিনিয়োগ করেছে। কিন্তু লকডাউন নিয়ে সঠিক কোনো ধারণা নেই। কবে স্বাভাবিক হবে। এ জন্য আগামী ঈদের সেল হবে কি-না তা নিয়েও সন্দেহ আছে।’

এদিকে আড়ং, অঞ্জনস, রঙ বাংলাদেশ, বিশ্বরঙ, কে-ক্রাফট, সাদাকালো, বাংলার মেলা, বিবিয়ানা ও নিপুণসহ বেশির ভাগ ফ্যাশন হাউজ তাদের শো রুমে বৈশাখের নতুন পোশাক তুলেছে।

jagonews24

বৈশাখের পাঞ্জাবিতে প্রাধান্য পেয়েছে নিখুঁত নকশা আর সূচকর্মের সম্মিলিত ক্যানভাস। রঙের ক্ষেত্রে অপ্রচলিত রঙও রয়েছে লাল-সাদার পাশাপাশি। নারীদের শাড়ি, থ্রি-পিসে লাল-সাদার পাশাপাশি গেরুয়া রঙয়ের উপস্থিতি ছিল চোখে পড়ার মত। আর বাচ্চাদের জন্য হাতের কাজের নকশার পাঞ্জাবি, ফতুয়া ছিল দোকানগুলোতে।

মিরপুর ১ নাম্বারে মুক্ত বাংলা শপিংমলে কেনাকাটা শেষে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রী নিধি জানান, গতবারের মতো এবারের বৈশাখও ঘরে কাটবে। তবে প্রতিবছর বৈশাখ উপলক্ষে একটা ড্রেস কিনি। এবারও সেটা কিনতে এসেছিলাম।

ফ্যাশন হাউজ বাংলার মেলায় কেনাকাটা করতে আসা গৃহিণী বাধন বলেন, ‘এই রোদে মানুষ এমনিতেই বের হতে চায় না। তার উপর করোনাভীতি। আমি বাচ্চার জন্য কেনাকাটা করতে এসেছি। এখন তো বৈশাখের পোশাক সব সময়ই পরানো যায়।’

এসএম/এএএইচ/এএসএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।