মাছ দিয়ে মশা নিধনের পদ্ধতি উদ্ভাবন
জৈবিক পদ্ধতিতে মশার উৎপত্তিস্থলে মাছ চাষের মাধ্যমে মশা নিধনে সাফল্য পেয়েছেন বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় মাৎস্যবিজ্ঞান অনুষদের ফিশারিজ ম্যানেজমেন্ট বিভাগের অধ্যাপক ড. হারুনুর রশীদ।
রোববার (৪ এপ্রিল) এক ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে তিনি তার গবেষণার কথা তুলে ধরেন। কেবল দেশি প্রজাতির মাছ দিয়েই মশা নিধন সম্ভব বলেও জানান ওই গবেষক।
সংবাদ সম্মেলনে সভাপতিত্ব করেন মাৎস্যবিজ্ঞান অনুষদের ভারপ্রাপ্ত ডিন অধ্যাপক ড. মো. আবুল মনসুর।
তিনি বলেন, ‘জৈবিক উপায়ে মশা নিধন করার জন্য ২০১৭ সালে চট্টগ্রামে একটি গবেষণা শুরু হয়। উদ্দেশ্য ছিল মশা নিধনের জন্য (মশক লার্ভা ভক্ষণ) দেশি জাতের কিছু মাছের সঙ্গে বিদেশি জাতের মাছের দক্ষতা তুলনা করা। এটি করতে গিয়ে আমরা চট্টগ্রামের বিভিন্ন ড্রেন ও নর্দমার নোংরা পানিতে প্রচুর পরিমাণ ‘মসকুইটো ফিশ’ পেয়েছি এবং এরা এই নোংরা পানিতে খুব ভালো মতোই বেঁচে থাকতে পারে। তাদের পেট কেটে দেখেছি প্রচুর পরিমাণে মশার লার্ভা। এই মাছটি কিছুটা আমাদের দেশি দাড়কিনা মাছের মতো দেখতে এবং শহরের অ্যাকোরিয়াম শপগুলোতে বিক্রি হয়।’
এই গবেষক বলেন, ‘ঢাকা-চট্টগ্রামে বেশ কয়েক বছর আগে এই মাছ ও গাপ্পি ছাড়া হয়েছিল শুনেছি। আমি চট্টগ্রামের ড্রেনে গাপ্পি তেমন দেখিনি, কিন্তু এই ‘মসকুইটো ফিশ’ প্রচুর পরিমাণে দেখেছি। এ মাছগুলো ড্রেনের নোংরা পানিতে শুধু বছরের পর বছর টিকে আছে তাই নয়, বংশও বিস্তার করছে। সেই সঙ্গে প্রচুর পরিমাণ মশার লার্ভা খেয়ে আমাদের সাহায্য করছে। পরবর্তীতে ‘মসকুইটো ফিশ’ ছাড়া আরও কিছু দেশি-বিদেশি মাছ ল্যাবরেটরিতে পরীক্ষা করে দেখেছিলাম।’
ড. হারুনুর রশীদ বলেন, ‘উদ্দেশ্য ছিল মশার লার্ভা ভক্ষণে তাদের দক্ষতার তুলনা করা। গবেষণায় আমরা দেখেছি যে বিদেশি ‘মসকুইটো ফিশ’ বা গাপ্পির তুলনায় মশক লার্ভা ভক্ষণের ক্ষেত্রে আমাদের দেশি জাতের খলিসা মাছের দক্ষতা প্রায় দ্বিগুণ। বিদেশি মাছের তুলনায় দাড়কিনা মাছের দক্ষতাও ভালো লার্ভা দমনের ক্ষেত্রে, কিন্তু ড্রেন বা নর্দমার পানিতে এই মাছ বেশিদিন টিকে না। পক্ষান্তরে খলিসা শুধু মশার লার্ভা ভক্ষণেই ভালো নয়, এটি ড্রেনের পানিতে অভিযোজন ও টিকে থাকার হারও ভালো। এসব মাছের কৃত্রিম প্রজনন ও পোনা উৎপাদন খুবই সহজ।’
সিটি করপোরেশনগুলো এসব মাছ শহরের বদ্ধ জলাগুলোতে নিয়মিতভাবে প্রতি বছর ছেড়ে দিতে পারে বলে জানান এই গবেষক। এতে এসব জলাশয়ে মশা ডিম ছাড়লে উৎপন্ন লার্ভা খেয়ে দেশি মাছগুলো মশা দমনে অনেক অবদান রাখবে। দেশের স্বার্থে এক্ষেত্রে এ পোনা প্রযুক্তি সরবরাহ, পোনা উৎপাদনের প্রশিক্ষণ সহায়তা থেকে শুরু করে যাবতীয় কাজ মৎস্য বিজ্ঞান অনুষদের বিশেষজ্ঞ দল বিনা পারিশ্রমিকে সহায়তা প্রদান করবে বলেও সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়।
এনএইচ/জেডএইচ/এমকেএইচ