আমন ধানের দাম নিয়ে হতাশ রাজশাহীর কৃষকরা
চলতি মৌসুমে আমন ধানের মাড়াই নিয়ে দম ফেলার ফুসরত নেই দেশের কৃষক পরিবারের। ধান কাটা ও মাড়াইয়ের কাজ নিয়ে ব্যস্ততার মধ্যদিয়ে কেটে যাচ্ছে তাদের সারাটা দিন। সঙ্গে কৃষকদের ঘরে ঘরে চলছে নবান্নের উৎসব। তবে চলতি মৌসুমে আমন ধানের ফলন ভালো হলেও আশানুরুপ দাম না পাওয়ায় হতাশ রাজশাহীর কৃষকরা। সরকারি হিসাবে মতে প্রতি মণ ধানের উৎপাদন খরচের চেয়ে কম দামে বিক্রি করতে হচ্ছে বলেও অভিযোগ ওঠেছে। রাজশাহীর সব উপজেলার কৃষকদের সঙ্গে কথা বলে এ তথ্য জানা গেছে।
গোদাগাড়ি উপজেলার বিদিরপুর গ্রামের কৃষক আনোয়ার আলী জাগো নিউজকে জানান, এ বছর ৬ বিঘা জমিতে গুটি স্বর্ণা ধান রোপন করেছিলেন তিনি। প্রতি বিঘা জমিতে ধানের বীজ রোপন, সার-কীটনাশক প্রয়োগ, মজুরি ও অন্যান্য খরচসহ মোট খরচ হয়েছে প্রায় সাড়ে ৭ হাজার টাকা। ধান মাড়াই শেষে বিঘা প্রতি ধান উৎপাদন হয়েছে ১৬ থেকে ১৮ মণের মতো।
চারঘাট উপজেলার ঝিকড়া গ্রামের কৃষক বাবর আলী জাগো নিউজকে জানান, চলতি বছর ৪ বিঘা জমিতে গুটি স্বর্ণা ও স্বর্ণা-৭ জাতের ধান চাষ করেছিলেন তিনি। সব খরচ মিলিয়ে বিঘা প্রতি খরচ হয়েছে প্রায় ৬ হাজার টাকা। জমিতে বিঘা প্রতি ধান পেয়েছেন ১৭ মণ। বিক্রি করেছেন ৫৪০ টাকা দরে।
বাঘা উপজেলার আড়ানী এলাকার কৃষক আব্দুল লতিফ জাগো নিউজকে জানান, চলতি বছর ৫ বিঘা জমিতে গুটি স্বর্ণা, স্বর্ণা-৫ ও ৭ জাতের ধান রোপন করেছিলেন তিনি। বিঘা প্রতি উৎপাদন ব্যায় হয়েছে ৬ হাজার টাকা মতো। ধান বিক্রি করেছেন মণ প্রতি ৫৫০ টাকায়।
পুঠিয়া উপজেলার শিবপুর এলাকার কৃষক রবিউল ইসলাম জানান, চলতি বছর ১০ বিঘা জমিতে তিনি গুটি স্বর্ণা, শুকনা স্বর্ণা ধান রোপন করেছিলেন। এতে তার বিঘা প্রতি উৎপাদন খরচ হয়েছিল ৬ হাজার টাকা কিছু বেশি। তবে ধান মাড়াই শেষে বিঘা প্রতি ধান পেয়েছেন ১৬ মণ। বিক্রি করেছেন মণ প্রতি ৫৪০ টাকা দরে।
বাগমারা উপজেলার তাহেরপুর এলাকার কৃষক রহিদুল আলম জাগো নিউজকে জানান, এ বছর ৫ বিঘা জমিতে গুটি স্বর্ণা, শুকনো স্বর্ণা ও স্বর্ণা-৫ জাতের ধানের আবাদ করেছিলেন। এতে তার বিঘা প্রতি উৎপাদন খরচ হয়েছিল সাড়ে ৬ হাজার টাকা। বিঘা প্রতি ধান পেয়েছেন ১৭ মণ।
এদিকে, মৌসুমের শুরুতেই ধানের দাম তুলনামূলক কম হওয়ায় হতাশায় এ অঞ্চলের কৃষকরা। তবে মৌসুম শুরু হলেও এখনো এ অঞ্চলে সরকারিভাবে চাল কেনার সিদ্ধান্ত হয়নি।
এ প্রসঙ্গে রাজশাহী কৃষি অধিদফতরের উপ-পরিচালক দেব দুলাল ঢালী জাগো নিউজকে জানান, চলতি বছরে আমন ধান কাটা এখনো পুরোপুরি শেষ হয়নি। আরো দু’সপ্তাহের মধ্যে সব ধান কাটা শেষ হবে। নানা প্রতিকূলতার মধ্যেও এবার আমন ধানের উৎপাদন বাড়ানোর চেষ্টা করা হয়েছে। আশানুরূপ ফলও পাওয়া গেছে। এখন কৃষককে যৌক্তিক দাম দিতে সংশ্লিষ্ট বিভাগকে সব ধরনের পদক্ষেপ নেয়ার জন্য সুপারিশ পাঠানো হয়েছে।
রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের তথ্যানুযায়ী, এ বছর রাজশাহী মহানগরীর ও এর আশেপাশের ৯টি উপজেলায় প্রায় ৭৩ হাজার ৭শ’ ৩২ হেক্টর জমিতে ধান উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল ১ লাখ ৯৬ হাজার ৭শ’ ২৬ মেট্রিক টন। এখন পর্যন্ত (প্রায় ৯০ ভাগ) ধান মাড়াই শেষে লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হয়েছে ২ লাখ ১৯ হাজার ৯শ’ ১৭ মেট্রিক টন।
গত বছর এ অঞ্চলে ৭৪ হাজার ২শ’ ৫০ হেক্টর জমিতে ধান উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল ১ লাখ ৮০ হাজার ৩শ’৩৬ মেট্রিক টন। পোকার আক্রমণে ধান উৎপাদন ব্যাপক ক্ষতির মুখে পড়লেও লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হয়েছিল ২ লাখ ২৮ হাজার ৬শ’ ২৬ মেট্রিক টন। তবে চলতি বছর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর থেকে কৃষকদের নিয়ে বিভিন্ন ধরনের সেমিনার, সমাবেশ ও প্রচারণা চালানো হয়।
শাহরিয়ার অনতু/আরএস/এমএস