ড. মুঈন উদ-দীন আহমদ খান আর নেই
বরেণ্য শিক্ষাবিদ অধ্যাপক ড. মুঈন উদ-দীন আহমদ খান আর নেই (ইন্নালিল্লাহি ওয়াইন্না ইলাহি রাজিউন)। রোববার (২৮ মার্চ) সকালে চট্টগ্রাম নগরীর রুমঘাটায় নিজ বাসভবনে তিনি মারা যান। তার বয়স হয়েছিল ৯৫ বছর।
ড. খানের ছাত্র ও গবেষক মাসুদ জাকারিয়া জানান, সম্প্রতি বার্ধক্যজনিত সমস্যায় ভুগলেও শনিবার তার শারীরিক অবস্থা স্বাভাবিক ছিল। প্রতিদিনের মতো রোববার ভোরে ঘুম থেকে উঠে তিনি নামাজ আদায় করেন, সকালে নাস্তা সেরে সংবাদপত্র পড়েন। এরপর বিশ্রামরত অবস্থায় শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন।
অধ্যাপক মুঈন উদ-দীন আহমদ চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাকালীন শিক্ষক এবং ইসলামি ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান।
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ইসলামিক ফাউন্ডেশন প্রতিষ্ঠা করে ড. মঈন উদ-দীন আহমদ খানকে প্রথম মহাপরিচালক নিয়োগ দিয়েছিলেন। তিনি সাউদার্ন ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশ, চট্টগ্রামের প্রথম ভাইস চ্যান্সেলর ছিলেন।
ড. মুঈন উদ-দীন আহমদ খান ১৯২৬ সালের ১৮ এপ্রিল চট্টগ্রাম জেলার লোহাগাড়া উপজেলার চুনতি ইউনিয়নের ঐতিহ্যবাহী সম্ভ্রান্ত পরিবার ডিপুটি বাড়িতে জন্মগ্রহণ করেন। চুনতি হাকিমিয়া কামিল (এমএ) মাদরাসা থেকে পড়াশোনা শুরু করেন। তিনি ১৯৫০ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইসলামি স্টাডিজ নিয়ে স্নাতক ও ১৯৫১ সালে একই বিষয়ে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি সম্পন্ন করেন। তিনি স্নাতক ও স্নাতকোত্তর উভয় পরীক্ষায় ঈর্ষণীয় ফলাফল করায় স্বর্ণপদক লাভ করেন।
এরপর তিনি কানাডার মন্ট্রিয়লের ম্যাকগিল বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ফুল-ব্রাইট স্কলারশিপ লাভ করেন। ১৯৫৫ সালে ম্যাকগিল থেকে গবেষণাপত্রসহ তিনি আর্টিবাস ইসলামি ইতিহাসে আরেকটি স্নাতক ডিগ্রি করেন। এই গবেষণাপত্র ১৯৫৯ সালে ম্যাকগিল বিশ্ববিদ্যালয় প্রকাশ করে। এরপর প্রফেসর খান যুক্তরাষ্ট্রের বার্কলে শহরের ইউনিভার্সিটি অব ক্যালিফোর্নিয়ায় ইনস্টিটিউট অব ইন্টারন্যাশনালে (দক্ষিণ এশিয়া স্টাডিজ) রিসার্চ ফেলো হিসেবে নিয়োগ পান।
১৯৫৬ সালে তিনি এশিয়া ফাউন্ডেশন, সান-ফ্রান্সিসকো, যুক্তরাষ্ট্র থেকে ভ্রমণ গবেষণা ফেলোশিপের প্রস্তাব পান। ফেলোশিপের প্রয়োজনীয়তা মেটাতে তিনি এক বছরের জন্য বৃহত্তর মালয়ে দ্বীপপুঞ্জ (ইন্দোনেশিয়া) বিশেষত জাভা, সুমাত্রা এবং বালি পরিদর্শন করেছিলেন।
১৯৫৯ সালে ইন্দোনেশিয়া থেকে ফিরে তিনি পিএইচডি গবেষক হিসেবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিপার্টমেন্ট অব জেনারেল হিস্ট্রিতে ভর্তি হন। সেখানে গবেষণায় তার তত্ত্বাবধায়ক হিসেবে ছিলেন বুদ্ধিজীবী, প্রত্নতাত্ত্বিক, ইতিহাসবিদ, ভাষাবিদ অধ্যাপক আহমেদ হাসান দানী; যিনি মধ্য এশীয় এবং দক্ষিণ এশীয় প্রত্নতত্ত্ব ও ইতিহাসের শীর্ষস্থানীয় কর্তৃপক্ষ। ১৯৬১ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে প্রফেসর খান এ বিষয়ের ওপর পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেন।
তার ১৮টির বেশি বই এবং ১০০টির মতো গবেষণাপত্র ও নিবন্ধ প্রকাশিত হয়েছে। ইবনে খালদুনের ‘আল মুকাদ্দিমা’র ভূমিকাসহ বেশকিছু বই তিনি অনুবাদ করেছেন। ড. মুঈন উদ-দীন আহমদ খানের উল্লেখযোগ্য বইয়ের মধ্যে রয়েছে- মুসলিম স্ট্রাগল ফর ফ্রিডম ইন বেঙ্গল, বাংলায় ফরায়েজি আন্দোলনের ইতিহাস, ইসলামে দর্শন চিন্তার পটভূমি, যুক্তি তত্ত্বের স্বরূপ সন্ধান : প্রাচ্য বনাম প্রতীচ্য এবং অরিজিন অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট অব এক্সপেরিমেন্টাল সায়েন্স : এনকাউন্টার উইথ দ্য মডার্ন ওয়েস্ট।
প্রফেসর খান আন্তর্জাতিক ইসলামিক বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রামের (আইআইইউসি) অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা সদস্য। বহুভাষায় পারদর্শী ও সুফিবাদ তরিকার অন্যতম সহচর ড. খান বায়তুশ শরফ ইসলামী গবেষণা কেন্দ্রের প্রধান গবেষক ছিলেন।
আবু আজাদ/এসএইচএস/এমকেএইচ